X
মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪
৩১ বৈশাখ ১৪৩১

জীবিত মেয়েশিশু রেখে বুঝিয়ে দেওয়া হলো মৃত ছেলেশিশু

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
১৯ এপ্রিল ২০১৮, ১২:৪১আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০১৮, ১৬:১৭

চাইল্ড কেয়ার ক্লিনিক চিকিৎসার জন্য মেয়েশিশুকে ক্লিনিকে নেওয়ার পর একটি ছেলেশিশুর লাশ ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম নগরীর বেসরকারি ক্লিনিক চাইল্ড কেয়ারের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) সকালে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার শিকার গৃহবধূ রোকসানা আক্তারের অভিযোগ, নগরীর গোলপাহাড় এলাকার চাইল্ড কেয়ার ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বিক্রি করার উদ্দেশ্যে তার মেয়েশিশুকে রেখে তাকে একটি মৃত ছেলেশিশু বুঝিয়ে দিয়েছিল। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তার মেয়েকে তার কাছে বুঝিয়ে দেয়। এ ঘটনায় নগরীর পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে নবজাতকের পরিবার। তবে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের দাবি, ভুলবশত এই ঘটনা ঘটেছে।

রোকসানা আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চাইল্ড কেয়ার হয়তো আমার সন্তানকে মোটা অংকের টাকা খেয়ে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল। বদল হওয়া মৃত শিশুটি ছেলে হওয়ায় তারা ধরা পড়ে গেছে। যদি আমাকে অন্য কোনও মেয়েশিশুর মরদেহ দেওয়া হতো আমরা বুঝতেই পারতাম না।’ এ ধরনের ঘটনা যেন আর কারও সঙ্গে না ঘটে সেজন্য তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ডাক্তারসহ সংশ্লিষ্ট সবার শাস্তি দাবি করেন।  

রোকসানার বড় বোনের স্বামী জাহাঙ্গীর আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোকসানা ১৩ এপ্রিল রাতে একটি মেয়েশিশু জন্ম দেন। পরে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে গেলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছিলো না। পরে ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আমরা শিশুটিকে চাইল্ড কেয়ার ক্লিনিকে ভর্তি করাই। প্রথমে ক্লিনিকের আইসিইউ’র ১৭ নম্বর বেডে ভর্তি করা হয়। তবে ১৫ এপ্রিল আমাদের জানানো হয়, আমাদের মেয়েকে ১৩ নম্বর বেডে পরিবর্তন করা হয়েছে। ১৬ তারিখ দুপুর ১২টার দিকে আমাদের জানানো হয়, বাচ্চার অবস্থা ভালো না। একটা ইনজেকশন দিতে হবে। পরে আমরা ইনজেকশন কিনে দিয়ে চলে আসি। পরে ১৭ এপ্রিল সকাল ৭টার দিকে আমাকে কল করে বলা হয় বাচ্চাকে ছোট লাইফ সাপোর্টে থেকে নিয়ে বড় লাইফ সাপোর্টে রাখতে হবে। অনেক টাকা খরচ হবে। আমি বললাম রাখেন। এরপর সকাল ১০টার দিকে আবারও কল করে বলে আমাদের বাচ্চা আর বেঁচে নেই। ’

জাহাঙ্গীর আলম  বলেন, ‘বাচ্চা মারা গেছে শুনে আমরা দ্রুত চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে গিয়ে বাচ্চাকে বাড়িতে দাফন করার সিদ্ধান্ত নেই। এরপর হাসপাতালের খরচ পরিশোধ করতে গেলে তারা আমাদের ১৭ হাজার ৬শ’ টাকার মতো একটা বিল দেন। অথচ বাচ্চা ভর্তির সময় তারা বলেছিল আমাদের প্রতিদিন বাবুর পেছনে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। বিল কম আসায় আমরা একটু অবাক হই। পরে ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করলে তিনি সঠিক কোনও উত্তর দিতে পারেননি। এরপর টাকা পরিশোধ করে বাচ্চাকে আনতে গেলে একজন বাচ্চাকে একটি কাপড় দিয়ে এমনভাবে মুড়িয়ে দেন তাকে দেখার কোনও উপায় ছিল না। পাশাপাশি ওই লোক আমাদের বলেন, শিশুটিকে যেন তার মাকে না দেখাই। নাক ও মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণের কারণে নাকি তার চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। বাচ্চার মা দেখে ভয় পেতে পারে, তাই না দেখানোর জন্য আমাদের বলে দেন।’

তিনি বলেন, ‘বাচ্চাটিকে বাড়িতে নিয়ে দাফনের জন্য গোসল করাতে গেলে সবাই দেখেন মৃত বাচ্চাটি ছেলেশিশু। পরে শিশুটিকে নিয়ে আবারও চট্টগ্রামে আসা হয়। প্রথমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের কথার কোনও মূল্য দেয়নি। পরে আমরা পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে যাই। থানার সামনে ওই শিশুর মরদেহ নিয়ে আমরা সারা রাত অ্যাম্বুলেন্সে বসেছিলাম। ভোররাতে জানানো হয় আমাদের মেয়েকে পাওয়া গেছে। আইসিইউতে পাশের সিটের শিশুর সঙ্গে বদল হয়েছে। সকালে আমরা মৃত শিশুটিকে তার মা-বাবার কাছে বুঝিয়ে দিই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের বাচ্চাকে আমাদের কাছে বুঝিয়ে দেন। বাচ্চাটিকে এখন নগরীর রয়েল হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।’

জাহাঙ্গীর আলমের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার ফাহিম হাসান রেজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি ভুলবশত হয়েছে। শিশু দুটির অবস্থাই আশঙ্কাজনক ছিল। তাই শিশুদের পরিবার যেমন মানসিক চাপে ছিল তেমনি কর্তব্যরত চিকিৎসকরাও চাপে ছিলেন। পাশাপাশি বেডে রাখার কারণে এ ভুল হয়েছে। আমরা বিষয়টির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছি। দুটি শিশুর পরিবারের উপস্থিতিতে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। উভয় পরিবার আমাদের সহযোগিতা করেছেন।’

আইসিইউতে শিশুদের গায়ে ট্যাগ লাগানো থাকে এরপরও কীভাবে ঘটনাটি ঘটলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ট্যাগ লাগানো থাকে, তবে শিশুদের অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত তাদের একটি বেড থেকে অন্য বেডে স্থানান্তর করতে হয়। ওই সময় ভুলবশত ঘটনাটি ঘটতে পারে।’ রেজিস্টারে `এফ` (ফিমেল) এর ওপর রিরাইট করে `এম` (মেল) লেখা হয়

ভর্তির সময় ক্লিনিকের রেজিস্টারে শিশুর লিঙ্গ পরিচয়ের জায়গায় মেয়েশিশু উল্লেখ ছিল। তবে ডেথ সার্টিফিকেটে ছেলেশিশু উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে ভর্তির জায়গায় মেয়েশিশু কেটে ছেলেশিশু লেখা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক্তার ফাহিম হাসান রেজা বলেন, ‘শিশুটি মারা যাওয়ার পর আমরা পরিবারকে ডাকলে তারা তাদের শিশু বলে দাবি করে। তাই রেজিস্টারে ওই শিশুর যে পরিচয় ছিল সেই অনুযায়ী ডেথ সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে।’ তিনি পরিচয় কাটাকাটির বিষয়টি এড়িয়ে যান।  

 

/এসএসএ/এফএস/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এবারের পর্দা উঠছে অদ্ভুত মেজাজে!
কান উৎসব ২০২৪এবারের পর্দা উঠছে অদ্ভুত মেজাজে!
কেমন থাকবে আজকের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আজকের আবহাওয়া?
মুম্বাইয়ে বিলবোর্ড ভেঙে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪
মুম্বাইয়ে বিলবোর্ড ভেঙে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪
ক্যানসার দমাতে পারেনি মাহাথিরকে, হতে চায় মানবিক চিকিৎসক
ক্যানসার দমাতে পারেনি মাহাথিরকে, হতে চায় মানবিক চিকিৎসক
সর্বাধিক পঠিত
শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
ইয়াহিয়া সিনওয়ার: যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটিয়েছেন, শেষও কি তার হাতে?
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনইয়াহিয়া সিনওয়ার: যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটিয়েছেন, শেষও কি তার হাতে?
আমরা সুন্দর একটি সম্পর্ক মেন্টেইন করি: জয়া আহসান
বাংলা ট্রিবিউনের দশম বর্ষপূর্তিআমরা সুন্দর একটি সম্পর্ক মেন্টেইন করি: জয়া আহসান
রেল মন্ত্রণালয়ের গাড়ি নিয়ে চুরি করতে গিয়ে গ্রেফতার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ড্রাইভার
রেল মন্ত্রণালয়ের গাড়ি নিয়ে চুরি করতে গিয়ে গ্রেফতার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ড্রাইভার
শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল
শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল