উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের লবণাক্ত অঞ্চলে ব্রি-৬৭ ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে লবণ সহিষ্ণু নতুন এই জাতের ধান চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন এলাকার অন্য চাষীরাও।কৃষি বিভাগ বলছে, ব্রি-৬৭ ধান এই অঞ্চলের জন্য একটি সম্ভাবনাময় জাত হতে পারে।
বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফলিত গবেষণা বিভাগের উদ্ভাবনী ব্যয়খাতের বিশেষ বাজেট এএসআরএস এর অর্থায়নে বাগেরহাট সদর, কচুয়া, রামপাল, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা ও ফকিরহাট এই ৬টি উপজেলার ব্রি-৬৭ ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। বাগেরহাটের এই ৬টি উপজেলায় এবছর প্রায় ১‘শ বিঘা জমিতে এই ধানের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে শরণখোলা উপজেলার কিছু পতিত জমিও রয়েছে। লবণাক্ততার কারণে যেসব জমি অনাবাদী হিসেবে পড়ে থাকত সেসব জমিতেও এই জাতের ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
রামপাল উপজেলা মানিকনগর এলাকায় কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, তিনি আগে যে জমিতে ব্রি-২৮ ধান লাগাতেন তার কিছু জমিতে এবছর ব্রি-৬৭ ধান লাগিয়েছেন। তুলনামূলকভাবে এই ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এছাড়া এই ধানের রোগবালাই কম হওয়ায় সার-কীটনাশকও কম লেগেছে। আগামীতে আরও বেশি জমিতে তিনি এই ধান লাগাবেন।
এই এলাকার কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পাশের অন্য কৃষকের জমিতে এই জাতের ধানের ফলন দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামীতে আমার জমিতেও ব্রি ধান ৬৭ এর চাষ করবো।’ 
শরণখোলা উপজেলার সিডর বিধ্বস্ত সাউথখালী ইউনিয়নের খুড়িয়াখালী গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন জানান, লবণাক্ততার কারণে ধান না হওয়ায় তিনি তার এই জমিতে কোনও ধানের চাষ করতে পারছিলেন না। কৃষি বিভাগের পিড়াপিড়িতে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে কিছু পতিত জমিতে ব্রি-৬৭ ধানের চাষ করেন। এই জমিতে ধানের এমন ফলন হবে তিনি কল্পনাও করতে পারেননি।
একই এলাকার কৃষক বাবুল হোসেন, দুলাল হাওলাদারসহ অন্যরাও ব্রি ধান ৬৭ চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়ে বিস্মিত হয়েছেন।
রামপাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাছরুল মিল্লাত জানান, রামপালে অন্য বছরের তুলনায় এবছর বেশি জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এর বেশির ভাগই ব্রি-২৮ ধান। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় কিছু জমিতে ব্রি-৬৭ ধান এর চাষ করা হয়েছে। কিন্তু অন্য ধানের চেয়ে এই ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। এতে কৃষকরা অনেক বেশি খুশি হয়েছেন। তারা আাগামীতেও এই জাতের ধানের চাষ করবেন বলে জনিয়েছেন।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) ফলিত গবেষণা বিভাগের এএসআরএস প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. বিশ্বজিৎ কর্মকার বলেন, ‘ব্রি আবিষ্কৃত এই ধান (ব্রি-৬৭) বোরো মৌসুমে অত্যন্ত সম্ভবনাময় লবণ সহিষ্ণু জাত। লবণাক্ততার জন্য দেশের দক্ষিণে অনেক জমি অনাবাদী থাকে। যেখানে অন্য জাতের ধান আবাদ করে তেমন ফলন পাওয়া যায় না সেখানে ব্রি-৬৭ ধান খুবই উপযোগী। ফলে এ জাতের আবাদ বৃদ্ধি করে এদেশের খাদ্য নিরাপত্তা আরও টেকসই করা সম্ভব হবে।’
কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অর্থায়নে চলতি বোরো মৌসুমে বাগেরহাটের ৬টি উপজেলা (রামপাল, কচুয়া, মোড়লগঞ্জ, শরণখোলা, সদর ও ফকিরহাট) এবং খুলনার ৫টি উপজেলায় (কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা) প্রায় ২‘শ বিঘা জমিতে ব্রি-৬৭ ধানের বীজ উৎপাদন ও সম্প্রসারণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে যা লবণাক্ত অঞ্চলে উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ জাতের ফলন বিশেষ করে ব্রি ধান ২৮ এর চেয়ে বিঘা প্রতি গড়ে প্রায় ২ মণ বেশি। জীবনকাল ব্রি ধান ২৮ এর চেয়ে মাত্র তিন দিন বেশি। ব্রি-৬৭ ধানের বিশেষ গুণ হচ্ছে, এ জাত সম্পূর্ণ জীবনকালে ৮ ডিএস/মিটার লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে, রোগ পোকার আক্রমণ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম লবণাক্ত অঞ্চলে ব্রি ধান ২৮ সহ অন্যান্য জাত আবাদ করা যায় না, কিন্তু সেখানে ব্রি-৬৭ ধান সহজে আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে।
আরও পড়ুন- ফসলে ‘ব্লাস্ট’র আক্রমণে দিশেহারা কৃষক
