X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

দু’দফা সময় বাড়িয়েও শেষ হয়নি বাঁধ নির্মাণ, আতঙ্কে হাওরবাসী

হানিফ উল্লাহ আকাশ, নেত্রকোনা
২১ এপ্রিল ২০১৮, ১৮:১৭আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০১৮, ১৪:২৯

দু’দফা সময় বাড়ানোর পরও নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধের সংস্কার কাজ শেষ হয়নি। এ কারণে আগাম বন্যার আশংকায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন হাওরের কৃষকরা। গত বছর মার্চের শেষদিকে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে হাওরে পানি প্রবেশ করে বাঁধ ভেঙে খালিয়াজুরি, মদন, মোহনগঞ্জ, কলমাকান্দা উপজেলার নিম্নাঞ্চলের শতভাগ ফসল পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাওরাঞ্চলের মাছসহ জীববৈচিত্রও।

চলছে বাঁধের নির্মাণ কাজ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে চলতি বছরের ২৮ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাওরাঞ্চলের বাঁধ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয়নি। সরকার প্রথমে ১৫ মার্চ, পরে আরও ৫ দিন বাড়িয়ে ২০ মার্চের মধ্যে সব প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন। শেষ মুহূর্তে হাওরে বাঁধের কাজ চলছে জোরেশোরে। তারপরও এখনও অনেক প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হয়নি।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলার খালিয়াজুরী, মদন, মোহনগঞ্জ, কলমাকান্দা, বারহাট্টাসহ বিভিন্ন উপজেলায় ছোট-বড় ১৩৪টি হাওর রয়েছে। এর মধ্যে খালিয়াজুরিতেই রয়েছে ৮৯টি হাওর। এছাড়াও হাওরের ফসল রক্ষায় ২৭১.৮৪ কিলোমিটার ডুবন্ত (অস্থায়ী) বাঁধ রয়েছে। ওই বাঁধের ওপর স্থানীয় কৃষকদের ৪৭ হাজার ৯০৪ হেক্টর জমির বোরো ফসল নির্ভর করে।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় এ বছর হাওরের ফসল রক্ষায় ৭৩টি প্রকল্পের বিপরীতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে খালিয়াজুরিতে ৪৫টি, মোহনগঞ্জে ১৩টি, মদনে ৯টি, পূর্বধলায় ৩টি, কলমাকান্দায় ২টি, বারহাট্টায় ১টি ও পার্শ্ববর্তী ধর্মপাশায় ১টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হলেও প্রথমে ৩ কোটি ১০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

শেষ হয়নি বাঁধের কাজ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরি, মদন, মোহনগঞ্জ, কলমাকান্দা ও বারহাট্টা উপজেলার নিম্নাঞ্চল নিয়ে হাওরাঞ্চল। এখানকার কৃষকদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন বোরো ফসল। সরকার প্রতিবছর হাওরের ফসল রক্ষার জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অবহেলা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি’র (পিআইসি) লোকজনের কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধের সংস্কার কাজ ঠিকমত না হওয়ায় প্রায় প্রতিবছরই অকাল বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

তবে এবার বন্যার পানি আসার আগেই বাঁধের সব কাজ শেষ হয়ে যাবে, এমন আশার কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যরা। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে দেওয়া বাঁধ কতটা টেকসই হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে স্থানীয়দের মাঝে।

নেত্রকোনা জেলা কৃষক সমিতির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমি কয়েকদিন পরপরই হাওরে কৃষকদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করছি। আগে কাজের গতি ছিল খুব কম। পত্রিকায় এ সংক্রান্ত একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়ার পর এখন তাড়াহুড়ো করে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হচ্ছে। হঠাৎ করে পাহাড়ি ঢল এসে ধাক্কা দিলে এই বাঁধ টিকবে কিনা আমার সন্দেহ রয়েছে।’

শেষ মুহূর্তে চলছে তাড়াহুড়ো খালিয়াজুরি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া জব্বার বলেন, ‘সঠিক নিয়মে প্রকল্প তৈরি এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী ও ইউপি চেয়ারম্যানদের যোগসাজসে পিআইসির বেশিরভাগ কমিটি চেয়ারম্যানদের নিজস্ব লোকজনদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে। অনেক কমিটির বিরুদ্ধে দায়সারা গোছের কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। ঢলের পানি এলে এ সমস্ত বাঁধ কোনও কাজেই আসবে না।’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কীর্তনখোলা বেড়িবাঁধ, চরহাইজদ্রা বেরিবাঁধসহ বেশ কয়েকটি বাঁধের গোড়া থেকে ভ্যাকুমেশিন দিয়ে মাটি তুলে বাঁধ সংস্কার করা হচ্ছে। যা বাধেঁর জন্য অত্যন্ত হুমকির।

নাম প্রকাশে বেশ কয়েকজন স্থানীয় কৃষককের অভিযোগ, চাকুয়া ইউনিয়নের লেপসিয়া বাজার, হাতিনা শিবির, পাটরা ও হারাকান্দি এলাকায় বাঁধ সংস্কার কাজে অনিয়ম হয়েছে।

চলছে বাঁধের কাজ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্রকল্প কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন এবং স্থানীয় ইউএনও সব সময় কাজের তদারকি করেছেন। কাজেই অনিয়ম করার কোনও সুযোগ নেই।’

নেত্রকোনা উন্নয়নে নাগরিক আন্দোলনের সাবেক সদস্য সচিব হারুন অর রশিদ বলেন, ‘দুই দফা সময় বাড়ানোর পরও খালিয়াজুরির ৪৫টি প্রকল্পের মধ্যে এখনও অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। বাঁধে ঠিক মতো মাটি বসানো ও ঘাস লাগানো হয়নি।’ তিনি এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর মনিটরিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

খালিয়াজুরি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার আবদুল্লাহ আল-মামুন বাবু বলেন, ‘এরইমধ্যে সব কয়টি বাঁধের ৯৫ ভাগ মাটি কাটার কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে বাঁধের মাটি লেবেল ও ঘাস লাগানোর কাজ। অকাল বন্যা হলেও এখন ফসলহানির সম্ভাবনা অনেক কম।’

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে কোনও বড় ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি। হাওরের ফসল রক্ষার জন্য আমরা যেসব বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নিয়েছি, তা এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন যে সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হচ্ছে তা ঠিক করা হচ্ছে।’

/এমও/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
ক্যানসারে আক্রান্ত অভিনেতা রুমি, ভর্তি হাসপাতালে
ক্যানসারে আক্রান্ত অভিনেতা রুমি, ভর্তি হাসপাতালে
বুয়েটে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন শিক্ষার্থীদের
বুয়েটে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন শিক্ষার্থীদের
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা