X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

কেসিসি’তে আচরণবিধি লঙ্ঘন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা

মো. হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা
২৩ এপ্রিল ২০১৮, ১০:০৭আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০১৮, ১৬:৩৯

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর  ৮ এপ্রিলের মধ্যে সব ধরনের প্রচার সামগ্রী সরিয়ে ফেলার নির্দেশ ছিল। কিন্তু আজও  নগরীজুড়ে বিভিন্ন প্রার্থীর প্রচার সামগ্রীর দেখা মিলছে। প্রশাসন এবিষয়ে মুখে কঠোরতার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তাদের কোনও পদক্ষেপ দেখা যায়নি। পাশাপাশি প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা তা মানছেন না। ইতোমধ্যেই প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন।নির্বাচন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীকে চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যাও চেয়েছেন।

এছাড়া, হলফনামায় পরস্পরের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগের বিষয়ে শুনানি শেষে তা খারিজ করা হয়েছে। সার্বিক বিষয় নিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এমন অবস্থায় কেসিসি নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে কিনা, তা নিয়ে অনেক প্রার্থী শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মো. জিয়াউল ইসলাম মন্টু বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া প্রয়োজন। তাতে পরাজিত হলেও দুঃখ থাকবে না। ভোটের দিন ক্ষমতাসীনদের দাপট ও ফলাফল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টাকারীদের কঠোর হাতে দমন করতে প্রশাসনকে তৎপর থাকতে হবে। এক নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী শাহজী কামাল টিপু বলেন, ‘ভোটাররা নির্বাচনের দিন সুষ্ঠুভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।’ তিনি এ ব্যাপারে নির্বাচন কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ন্যায় ও নিরপেক্ষ পদক্ষেপ আশা করছেন।

কেসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. ইউনুস আলী বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘনের ধারাবাহিক ঘটনা অস্বস্তির সৃষ্টি করেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘শতভাগ গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন উপহার দেওয়াই নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য। এজন্য নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনও পরিকল্প বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না।’

শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘুরে দেখা গেছে, প্রার্থীদের আগাম প্রচার সামগ্রী এখনও বিভিন্ন প্রান্তে শোভা পাচ্ছে। ১৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার জীবন বীমা ভবনের দেয়ালে বিভিন্ন প্রার্থীর আগাম পোস্টার লাগানো রয়েছে। জিয়া হলের গা ঘেষে গড়ে ওঠা অস্থায়ী দোকানগুলোতেও আগাম প্রচার সামগ্রীর দেখা মিলছে। বয়রা মেইন রোড, টুটপাড়া, বানিয়াখামার, ফারাজিপাড়া, বড় বাজার, শেখপাড়া, খালিশপুর, দৌলতপুর, মহেশ্বরপাশাসহ বিভিন্ন এলাকায় এধরনের আগাম প্রচার সামগ্রী এখনও বহাল রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এবিষয়ে তেমন কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

খুলনা মেট্রেপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘ওপর থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর শহরের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে নেতাদের আগাম প্রচার সামগ্রী নামিয়ে ফেলার জন্য আহ্বান জানানো হয়। ৮ এপ্রিলের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগাম প্রচার সামগ্রী সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এধরনের নির্দেশনার সঙ্গে শাস্তির বিধান থাকলে আজ এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে আগাম প্রচার সামগ্রী সরিয়ে ফেলার উদ্যোগের বদলে আইনি ব্যবস্থা গৃহীত হতো। তারপরও প্রশাসনের অভিযানে যথেষ্ট পরিমাণ সামগ্রী অপসারণ করা হয়েছে।  বিচ্ছিন্নভাবে কিছু এলাকায় এধরনের সামগ্রী থাকতে পারে। এখন শেষ সময়ে আচরণবিধি পর্যবেক্ষণের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে।’
এদিকে শহরজুড়েই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের মহড়া চলছে। ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে নির্বাচন অফিসে এধরনের একাধিক অভিযোগ জানিয়েছেন। নির্বাচন অফিসও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু অভিযোগ না পাওয়া বিষয়গুলোতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্দেশনা অমান্য করেই প্রার্থীদের অফিস উদ্বোধন করছেন।

এঅবস্থার মধ্যে আজ (সোমবার) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, আর  মঙ্গলবার প্রতীক বরাদ্দ হবে। এরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে জোরদার হবে নির্বাচনি প্রচারণা। কাউন্সিলর পদে নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না হলেও দলের সমর্থন নিয়েই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রার্থী হয়েছেন। দলীয় মনোনয়নের বাইরে থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া নেতাদের বিরুদ্ধেও দলীয় হাই কমান্ড থেকে কঠোর শাস্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনি প্রচারণায় আচরণ বিধিমালার পাঁচ নম্বর ধারায় বলা আছে, কোনও প্রার্থী বা তার পক্ষে কোনও রাজনৈতিক দল, অন্য কোনও ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনও প্রকার প্রচার শুরু করতে পারবেন না। তারপরও নানা কৌশলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর পক্ষে প্রতিনিধি সভা বা সাংগঠনিক সভার নামে প্রচার চালানো হচ্ছে। প্রার্থীর পক্ষে ভোটও চাওয়া হচ্ছে। প্রার্থী ও দলীয় প্রতীক সম্বলিত ব্যানারও ব্যবহার হচ্ছে।

সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের সঙ্গে সঙ্গে ২৪ এপ্রিল দুপুরের পর থেকেই আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করা যাবে। প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকিং করা যাবে। মেয়র পদে প্রতিটি থানা এলাকায় একটি মাইক এবং কাউন্সিলর পদে তার নির্বাচনি ওয়ার্ডে একটি করে মাইক ব্যবহার করা যাবে। জনসভা নয়, শুধুমাত্র পথসভা করা যাবে। তাও জনগণ ও যান চলাচলে বিঘ্নিত করে নয়। পথসভায় কেউ মাইক ব্যবহার করলে অন্য মাইক দিয়ে প্রচারণা চালানো যাবে না। একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর জন্য একটিমাত্র মাইক বরাদ্দ থাকবে। তবে মাইকিংয়ের জন্য রিটার্নিং অফিসারের মূল অনুমতিপত্র সঙ্গে রাখতে হবে।

খুলনার অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, ‘এক মাইক বলতে একটিমাত্র চোঙা বোঝাবে। কেউ একই মাইকে দু’টি চোঙা ব্যবহার করলে সেটিও নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের আওতায় আসবে। ২৪ এপ্রিল প্রার্থীকে নিজস্ব নির্বাচনি কার্যালয়ের ঠিকানা এবং নির্বাচনি প্রধান এজেন্টের মোবাইল নম্বরসহ তালিকা রিটার্নিং অফিসারের কাছে পৌঁছাতে হবে। প্রধান এজেন্টকেও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে। ওই তালিকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে পাঠানো হবে। যাতে সহজেই নির্বাচনি কার্যালয় চিহ্নিত করা যায় এবং অতিরিক্ত কার্যালয় পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। পোস্টার ব্যানার হতে হবে সাদাকালো এবং ১৮ ইঞ্চি বাই ২৩ ইঞ্চি সাইজ। এতে প্রার্থীর ছবি ও প্রতীক ছাড়া অন্য কারও ছবি বা প্রতীক ব্যবহার করা যাবে না। তবে প্রার্থী কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য বা সমর্থক হলে শুধুমাত্র ওই দলের বর্তমান প্রধানের ছবি দেওয়া যেতে পারে। পোস্টার দেয়ালে সাটানো যাবে না। তবে দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা যাবে। এমনকি নির্বাচনি কার্যালয়েও কোনও প্রকার আঠাযুক্ত জিনিস দিয়ে দেয়ালে পোস্টার লাগানো যাবে না।’

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা