X
বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
৫ আষাঢ় ১৪৩২

‘সোহেলকে গ্রেফতার করা গেলে জানা যাবে তাসফিয়ার মৃত্যু রহস্য’

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
০৫ মে ২০১৮, ২৩:৩৫আপডেট : ০৬ মে ২০১৮, ০৩:৩৫

তাসফিয়া নগরীর সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসফিয়ার রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় এখন সন্দেহের তীর আদনানের বন্ধু সোহেলের দিকে। তাসফিয়া ও আদনান দু’জনের পরিবারই জানিয়েছে, সোহেলকে গ্রেফতার করতে পারলে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উম্মোচন হবে। দুই পরিবারই তাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।

তাসফিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সোহেল সবসময় আদনানের সঙ্গে থাকতো। ঘটনার দিন তার কাছ থেকেই আমরা জানতে পারি তাসফিয়া আদনানের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে গিয়েছে। সোহেলের কাছ থেকে নম্বর নিয়ে ওইদিন তাসফিয়ার আম্মু আদনানকে ফোন করে তাসফিয়াকে বাসায় পাঠিয়ে দিতে বলেন। সোহেলকে গ্রেফতার করতে পারলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।’

তবে আদনানকেই তিনি প্রধান সন্দেহভাজন মনে করছেন। মোহাম্মদ আমিন বলেন, ‘আদনানই তার বন্ধুদের মাধ্যমে আমার মেয়েকে খুন করেছে। আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই।’

তাসফিয়া হত্যার ঘটনায় মোহাম্মদ আমিন পতেঙ্গা থানায় আদনানসহ ছয়জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলায় সোহেলকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে মোহাম্মদ আমিন উল্লেখ করেন, ‘আদনান মির্জার সঙ্গে গত দুই/তিন মাস আগে আমার মেয়ের বন্ধুত্ব হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। তাই আমার মেয়ের প্রতি আক্রোশের বশবর্তী হয়ে তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে আদনান মির্জা মামলার অপরাপর আসামিদের সহায়তায় তাকে নেভাল বিচ এলাকায় নিয়ে অজ্ঞাত আসামিদের পরস্পর যোগসাজশে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করে।’

আদনানের বাবা ইস্কান্দার মির্জা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সোহেলের মাধ্যমে আদনানের সঙ্গে তাসফিয়ার পরিচয় হয়। আদনান গতবছর সানশাইন স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পাস করার পর এবার তাকে বাংলাদেশ এলিমেন্টারি স্কুলে ভর্তি করা হয়। অন্যদিকে, তাসফিয়ার এই বছর সানশাইন গ্রামার স্কুলে ভর্তি হয়। তাই তাসফিয়ার সঙ্গে আদনানের পরিচয় হওয়ার সুযোগ নেই। সোহেলই তাসফিয়াকে আদনানের সঙ্গে একমাস আগে পরিচয় করিয়ে দেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরাও চাই তাসফিয়ার মৃত্যু রহস্য উন্মোচন হোক। যত তাড়াতাড়ি তার মৃত্যুর রহস্য উম্মোচন হবে, তত তাড়াতাড়ি আমার ছেলে ছাড়া পাবে। কারণ, আমার ছেলে নির্দোষ। ঘটনার দিন বিকাল ৫টায় সে বাসা থেকে বের হয়। সন্ধ্যায় তাসফিয়াকে রেস্টুরেন্ট থেকে সিএনজিতে তুলে দিয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার ফুফুর বাসায় যায়। পরে সেখান থেকে তাসফিয়ার বাবার কল পেয়ে আবার ওই রেস্টুরেন্টে যায়। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তাসফিয়ার বাবার সঙ্গে থাকার পর রাত পৌনে ১২টার দিকে বাসায় আসে। এরপর পরদিন বিকাল ৫টা পর্যন্ত সে বাসায় ছিল। তাহলে সে কীভাবে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকবে?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আজ  শনিবার (৫ মে) দুপুরে কারাগারে আমার ছেলের সঙ্গে কথা বলেছি। সে জানিয়েছে তাসফিয়ার মৃত্যুর সঙ্গে তার কোনও সম্পৃক্ততা নেই। শুধু রেস্টুরেন্টে খেতে গেছে, এর বাইরে সে কিছু জানতো না। রিচ কিডস গ্রুপ নামে কোনও গ্রুপের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই বলে সে আমাদের জানিয়েছে এবং পুলিশও তাকে এ ধরনের কোনও বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সোহেলের মাধ্যমে আসিফ মিজানের সঙ্গে আদনানের পরিচয়। সেই সূত্র ধরে ফিরোজের সঙ্গে (যুবলীগ নামধারী অস্ত্র মামলার আসামি) পরিচয় হয়।’

ইস্কান্দর মির্জা বলেন, ‘ঘটনার দিন রাত থেকে পরদিন বিকাল পর্যন্ত সে আমাদের বাসায় ছিল। আমরা তার মধ্যে কোনও অস্বাভাবিক আচরণ দেখিনি। পরদিন বিকালে আসিফ মিজানই তাকে কল করে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়।’

তিনি বলেন, কারাগারে দেখা করতে গেলে আদনান আমাদের জানিয়েছে বুধবার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে আসিফ মিজান মোবাইল ফোনে কল করে তাকে বাসা থেকে বের করে। বাসার একটু সামনে থেকে প্রাইভেট কারে করে আসিফ মিজান প্রথমে তাকে মুরাদপুর নিয়ে যায়। পরে সেখানে আকরাম নামে একজন আসে। আকরাম আদনানকে জানায় একজন বড় ভাই (পুলিশ) আসবেন, উনি তোকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাবে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তোকে আবার বাসায় পৌঁছে দেবে। পরে ওই গাড়িতে করে তারা দুজন আদনানকে নাছিরাবাদ এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে আসাদ নামে একজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তারা চলে যায়। আসাদ মির্জাপুল এলাকায় নিয়ে তাকে পুলিশের একটি কালো হাইয়েস গাড়িতে তুলে দেয়। ওই গাড়িতে তাসফিয়ার চাচা নুরুল আমিনও ছিলেন। যদি আদনান হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতো তাহলে সে আসিফ মিজানের কথায় বাসা থেকে বের হতো না।’

ইস্কান্দার মির্জা আরও বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে সোহেলের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, সে বাসায়ও নেই। সে আত্মগোপন করেছে। তাই আমাদের ধারণা এ ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। তাকে গ্রেফতার করা গেলে ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কর্ণফুলী জোন) জাহেদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সোহেলসহ অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছি। শুক্রবার রাতে সবার বাসায় অভিযান চালানো হয়েছে। কাউকে পাওয়া যায়নি।’

তাসফিয়ার মৃত্যু রহস্য উন্মোচনে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তাসফিয়ার মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের একটু সময় দিন। খুব শিগগির আমরা প্রকৃত ঘটনা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পারবো।’

 

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সারা দেশে গ্রেফতার আরও ১৫৪৭
সারা দেশে গ্রেফতার আরও ১৫৪৭
কোচ হিসেবে আগের ক্লাবে ফিরলেন ক্রেসপো
কোচ হিসেবে আগের ক্লাবে ফিরলেন ক্রেসপো
নবদম্পতির বনিবনা না হওয়ায় ঘটককে গাছে বেঁধে মারধর
নবদম্পতির বনিবনা না হওয়ায় ঘটককে গাছে বেঁধে মারধর
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে শুরু হয়েছে ‘অ্যাডমিশন উইক সামার-২০২৫’
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে শুরু হয়েছে ‘অ্যাডমিশন উইক সামার-২০২৫’
সর্বাধিক পঠিত
স্ত্রীর মামলায় কারাগারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী
স্ত্রীর মামলায় কারাগারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী
আর চুপ থাকার পরিস্থিতি নেই, ইশরাক ইস্যুতে উপদেষ্টা আসিফ
আর চুপ থাকার পরিস্থিতি নেই, ইশরাক ইস্যুতে উপদেষ্টা আসিফ
ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে মহাজোটের ২ শরিককে আমন্ত্রণ, নুর ও ইরানের ক্ষোভ
ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে মহাজোটের ২ শরিককে আমন্ত্রণ, নুর ও ইরানের ক্ষোভ
বিকাশ অ্যাপে এখন সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন গ্রাহক
বিকাশ অ্যাপে এখন সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন গ্রাহক
যে শর্তে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নতুন প্রস্তাবে একমত হবে জামায়াত
যে শর্তে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নতুন প্রস্তাবে একমত হবে জামায়াত