X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

বরগুনায় সূর্যমুখী চাষে লাভবান কৃষকরা

তরিকুল রিয়াজ, বরগুনা
১১ মে ২০১৮, ১১:০৮আপডেট : ১১ মে ২০১৮, ১১:০৮

সূর্যমুখী চাষে লাভবান বরগুনার কৃষকরা বরগুনার বিভিন্ন উপজেলায় সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। কম ঝুঁকি ও লাভ ভালো পাওয়ায় গত কয়েক বছরে সূর্যমুখী ফুল চাষ বেড়েছে কয়েক গুণ। একই সঙ্গে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী করে তুলেছে।
বছর কয়েক আগেও ডিসেম্বর মাস থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৫ মাসেরও বেশি সময় অনাবাদি হয়ে থাকতো বরগুনার অধিকাংশ ফসলি জমি। কিছু কিছু জমিতে খেসারি ও মুগ ডাল চাষ হলেও তা দিয়ে খুব একটা লাভের মুখ দেখা হতো না কৃষকের। এখন সেসব জমিতেই সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হচ্ছেন বরগুনার অনেক কৃষক।
বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামার বাড়ির তথ্যমতে, গত ২০১৭/১৮ অর্থবছরে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে ১ হাজার ৫৩২ হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে শুধুমাত্র বরগুনা সদর উপজেলায় ৭০০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। এছাড়া আমতলীতে ২৩০, তালতলীতে ২৫০, বেতাগীতে পাঁচ, বামনায় সাত এবং পাথরঘাটা উপজেলায় ৩৪০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে।
সূর্যমুখী থেকে তেলের পাশাপাশি ফুল বাগান থেকে মৌচাষেরও সম্ভাবনা রয়েছে ব্যপক। সূর্যমুখীর ফুল বড় বলে প্রচুর মধু আহরণ সম্ভব। আবার মৌচাষে প্রাকৃতিক পরাগায়নের জন্য সূর্যমুখীর ফলনও হয় বেশি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বরগুনার গৌরিচন্না, ফুলঝুড়ি, বুড়িরচর, কেওড়াবুনিয়া, বরগুনা সদর, এম বালিয়াতলী ও নলটোনা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমূখীর চাষ করেছে কৃষকরা। প্রতিটি ক্ষেতে চাহিদামতো ফুল এসেছে। অল্পদিনের মধ্যেই ফল কেটে ঘরে তুলবে কৃষক। এরই মধ্যে কেউ কেউ কিছু ফুল কেটে তুলেছে। আশানুরুপ ফল পাবে বলে ধারণা করছেন কৃষকরা।
কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা বলছে, খুব অল্প সময়ে কম পরিশ্রমে ফসল উৎপাদন ও ভালো দাম পাওয়া যায় বলে কৃষকরা এখন সূর্যমুখী চাষ করছে। মাত্র ৮৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে বীজ বপন থেকে শুরু করে বীজ উৎপাদন করা সম্ভব। এবং প্রতি একর জমিতে সব খরচ বাদ দিয়ে প্রকার ভেদে লাভ হয় ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা যা অন্য কোনও ফসলের চেয়ে কম পরিশ্রমে ভালো আয়।
বরগুনার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের চরমাইঠা গ্রামের আবু জাফর এ বছর দেড় একর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। তিনি বলেন, বছরের শুরুতে বৃষ্টি থাকায় কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে উন্নত প্রযুক্তিগত সহযোগিতা পেলে এ চাষ আরও বাড়েবে। গত বছরের চেয়ে এবারের ফলন ভালো। কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আশা করছি অধিক আয় হবে।
বরগুনা নলটোনা ইউনিয়নের গাজী মাহমুদ গ্রামের সেলিম মিয়া বলেন, এর আগে আমার বেশ কিছু জমি এ মৌসুমে জমি পরিত্যক্ত থাকতো। গত দুবছর ধরে সূর্যমুখী চাষ করে ভালো লাভ হচ্ছে। তবে বরগুনায় আধুনিক প্রযুক্তির একটি তেল শোধনাগার থাকলে আমাদের এই ফসলে আরও চাহিদা বাড়তো।
বুড়িরচর ইউনিয়নের চরগাছিয়া গ্রামের কৃষক মো. হুমায়ুন বলেন, ‘সূর্যমুখী বীজের দাম বেশি। একটু কম হলে আরও অনেক কৃষক এ চাষে এগিয়ে আসতো। তবে কম পরিশ্রমে ভালো লাভ করা যায়। এ বছরে সব খরচ বাদ দিয়ে এক একরে ১৫ হাজার টাকা লাভ থাকবে।
সরকারের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে কোস্টাল অ্যাগ্রো বিজনেস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছে। তারা কৃষকদের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক উৎপাদনের জন্য তাদের প্রশিক্ষণসহসহ অন্যান্য সহযোগিতা দিচ্ছে। পাশাপাশি তাদের উতপাদিত পণ্যের বাজার সৃষ্টি করতে সূর্যমুখী ফুলের বীজ কিনে স্থানীয়ভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে তেল উৎপাদন করে “সান অয়েল” নামে বাজারজাত করছে।
স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্টাল অ্যাগ্রো বিজনেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাসুদ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একটি মৌসুম কৃষকের জমি অনাবাদি থাকতো। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে এসব জমিতে দেখা যায় এই অঞ্চলের জন্য সূর্যমুখী চাষ খুবই উপযোগী এবং লাভজনক। আমরা কৃষকদের মধ্যে সূর্যমুখী চাষ বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ, বীজ সরবারহসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকি। কৃষকদের জন্য আগামী মৌসুমে আরও নতুন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বরগুনার উপ-পরিচালক সাইনুর আজম খান বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি এবং বীজের দাম বেশি থাকায় এ বছর সূর্যমূখী চাষিদের বেশ খানিকটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। গত কয়েক বছর বিভিন্ন উন্নয়ন সংগঠন সূর্যমূখী চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে বিনামূল্যে বীজ, সার এবং নানাবিধ কৃষি সহায়তা দেওয়া হতো। এখন অনেক কৃষকরা নিজেরাই এগিয়ে এসে চাষ করছে। বীজের দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় অনেক কৃষকের পক্ষে তা কিনে চাষ করা কষ্টসাধ্য।’
তিনি আরও বলেন, এ অঞ্চলে সূর্যমুখীর ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। সূর্যমুখীর চাষে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ।’

/এআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শিগগিরই অনলাইন নিউজ পোর্টালের বিজ্ঞাপন নীতিমালা: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
শিগগিরই অনলাইন নিউজ পোর্টালের বিজ্ঞাপন নীতিমালা: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
ইরান ইস্যুতে তৃতীয় বৈঠকে বসছে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা
ইরান ইস্যুতে তৃতীয় বৈঠকে বসছে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা
নেপাল ও ভুটান সফরে গেলেন পররাষ্ট্র সচিব
নেপাল ও ভুটান সফরে গেলেন পররাষ্ট্র সচিব
নাহিদের আগুন বোলিংয়ে হারলো মোহামেডান
নাহিদের আগুন বোলিংয়ে হারলো মোহামেডান
সর্বাধিক পঠিত
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের