X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে সহিংসতা, আহত ১৮

দিনাজপুর প্রতিনিধি
১৫ মে ২০১৮, ১৯:৫৯আপডেট : ১৫ মে ২০১৮, ২০:০৫

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে সহিংসতা দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের ১৩ দফা ও ক্ষতিগ্রস্ত ২০ গ্রামের সমন্বয় কমিটির ৬ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলকারীদের সঙ্গে খনির কর্মকর্তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে করে খনির ৭ কর্মকর্তা আহত হওয়ার দাবি করেছে খনি কর্তৃপক্ষ। আর নিজেদের ৮-১০ জন শ্রমিক আহত হওয়ার দাবি করেছেন আন্দোলনকারীরা। এই হামলায় আহত হয়েছেন এক পুলিশ কনস্টেবল।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার (১৩ মে)  সকাল ৬টা থেকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির শ্রমিকরা গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন। কর্মবিরতির তৃতীয় দিনে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে খনির কয়লা খনির কয়েকজন কর্মকর্তা গেটের সামনে এসে কথা কাটাকাটি ও এক পর্যায়ে লাঠি দিয়ে কয়েক শ্রমিককে আঘাত করেন। পরে পাল্টা আঘাত করেন আন্দোলনরত শ্রমিক ও গ্রামবাসী। এতে করে তিন পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ এসে বাধা দিয়ে কর্মকর্তাদের সরিয়ে নেয়। এই ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির জিএম কামরুজ্জামানসহ সাত কর্মকর্তা আহত হওয়ার দাবি করেছে খনি কর্তৃপক্ষ। আর শ্রমিকরা দাবি করেছেন, তাদের কমপক্ষে ৮-১০ জন আহত হয়েছে। এছাড়াও উত্তেজনা থামাতে গিয়ে আহত হয়েছেন বড়পুকুরিয়া পুলিশ ফাড়ির কনস্টেবল শাহিন হোসেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বাকিদের ফুলবাড়ী ও পার্বতীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। 

এই ঘটনার পর উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে কয়লা খনি এলাকায়। শ্রমিকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশকারী ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী ও শ্রমিকরা এলাকায় বেশ কয়েক দফায় রাস্তার মাঝখানে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তারা সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে খনি কর্তৃপক্ষের লেলিয়ে দেওয়া কর্মকর্তারা পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছে। দাবি-দাওয়া আদায়ের পাশাপাশি যারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত তাদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করেছেন শ্রমিক ও গ্রামবাসীরা।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ হযরত আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য গত রবিবার থেকে শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। কিন্তু খনি কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবি মেনে না নিয়ে উল্টো আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাধা প্রদানসহ হামলা চালিয়েছে। এতে করে ৮-১০ জন শ্রমিক আহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা গুরুতর। দাবি-দাওয়া আদায়ের পাশাপাশি এই হামলার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি আমরা।’ বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে সহিংসতা

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ম্যানেজার (প্রশাসন) মাসুদুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘সকালে মাহবুব ও ইমরান হাসান নামে দুই কম কর্মকর্তা খনিতে প্রবেশের সময় শ্রমিকরা তাদের মারধর করে। পরে কর্মকর্তরা সেখানে গেলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে করে খনির জিএম কামরুজ্জামান, ম্যানেজার সানাউল্লাহ, ম্যানেজার (নিরাপত্তা) হাসান ইমাম, অ্যাসিস্টেন্ট ম্যানেজার (আইসিটি) কমল মল্লিক, জাহিদুর রহমান, সাজিউল ইসলাম, একেএম রাকিউল ইসলাম আহত হয়েছেন।’

উল্লেখ্য, গত ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির এক্সএমসি/সিএমসি’র শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। বিষয়টি জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী, জ্বালানি উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো হলেও কোনও সমাধান হয়নি। বরং শ্রমিক-কর্মচারীদের পরিবার নিয়ে দুর্বিসহ জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তাই অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী আউট সোসিং শ্রমিকদের স্থায়ী নিয়োগ প্রদান, বকেয়া বেতন-ভাতা প্রদান, প্রফিট বোনাসসহ ১৩ দফা দাবিতে গত রবিবার সকাল ৬টা থেকে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির শ্রমিক-কর্মচারীরা কর্মবিরতি শুরু করেন।  শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে খনিতে কয়লা উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। 

আন্দোলনকারীদের দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হলো-চুক্তি অনুযায়ী সব শ্রমিককে নিয়োগ প্রদান, প্রতি বছর শতকরা ৪০ শতাংশ দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ, সব শ্রমিককে গ্রাচুইটি প্রদান, আন্ডারগ্রাউন্ড শ্রমিকদের ৬ ঘণ্টা ডিউটি করানো, প্রফিট বোনাসসহ বৈশাখী ভাতা চালু, ওভারটাইম ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান, ক্ষতিগ্রস্ত ২০টি গ্রামের বাড়িঘরের দ্রুত স্থায়ী সমাধান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার প্রত্যেক পরিবার থেকে খনিতে চাকরি প্রদান।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক-কর্মচারীর ইউনিয়নের নেতারা জানান, খনিতে এক হাজার ৪১ জন বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। গত ২৬ এপ্রিল খনি কর্তৃপক্ষকে তাদের দাবি জানিয়ে ১২ মে পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ দাবি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় তারা কর্মবিরতি শুরু করে।

পাশাপাশি কয়লা উত্তোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ২০ গ্রামের মানুষদের নিয়ে গঠিত ২০ গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত সমন্বয় কমিটি তাদের ৬ দফা দাবী নিয়ে শ্রমিকদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে খনির গেটে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছে। তাদের ৬ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত ২০টি গ্রামের বাড়িঘরের দ্রুত স্থায়ী সমাধান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার প্রত্যেক পরিবার থেকে খনিতে চাকুরি প্রদান, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ আরও কিছু দাবি।

শ্রমিক ও গ্রামবাসীর আন্দোলনে কয়লা খনির কাজ বন্ধ আছে। তবে খনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে খনির ইয়ার্ডে ২ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা রয়েছে। এই পরিমাণ কয়লা দিয়ে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুই মাস চালু রাখা সম্ভব।

 

/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!