X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেঘনায় নাব্যতা সংকট, ডুবোচরে আটকা পড়ছে ফেরি

সাইফুল ইসলাম স্বপন, লক্ষ্মীপুর
১৯ মে ২০১৮, ১৫:৩০আপডেট : ১৯ মে ২০১৮, ২২:০৪

ডুবোচরে আটকে পড়া ফেরি (ছবি- প্রতিনিধি) মেঘনা নদীর বেশ কিছু পয়েন্টে নাব্যতা সংকট এবং ডুবোচরের কারণে লক্ষ্মীপুর (মজুচৌধুরীরহাট)–ভোলা নৌপথে প্রায়ই ফেরি ও লঞ্চ আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এতে এ নৌ-পথে চলাচলকারী ফেরি ও লঞ্চগুলোকে নির্ধারিত সময়ের ৩-৫ ঘণ্টা দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। চলতি শুকনো মৌসুমে মেঘনার পানি কমে এ সমস্যা আরও  প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে জানিয়েছেন যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা। যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, নাব্যতা সংকটের কারণে জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে ফেরি ও লঞ্চ চলে। এরপরও ডুবোচরে আটকে যায় ফেরি-লঞ্চ। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। পণ্য পরিবহনেও বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।

গত বুধবার (১৬ মে) বিকালে সরেজমিনে দেখা যায়, মাঝ মেঘনার রহমতখালী চ্যানেলের এক ডুবোচরে আটকা পড়ে ফেরি কিষাণী। নদীতে পানি কম থাকায় বার বার চেষ্টা করেও ডুবোচর থেকে ফেরিটি ছাড়ানো যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে চালক বাধ্য হয়ে ফেরিটি বন্ধ করে দেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

এদিন ফেরি কিষাণীর মাস্টার মো. শাহেদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভাটায় নদীতে পানি কমে যাওয়ায় ডুবোচরে ফেরি আটকা পড়েছে। জোয়ারের পানি না আসা পর্যন্ত এখানে থেমে থাকতে হবে।’

ডুবোচরে আটকে পড়া ফেরির সামনের অংশ (ছবি- প্রতিনিধি) তিনি আরও জানান, গত নভেম্বর মাস থেকে মেঘনার মজুচৌধুরীরহাট–ভোলা নৌপথের মতিহাট, বিবির ভয়া, ভূরির খাল ও রহমতখালি চ্যানেল ছাড়াও আরও কিছু পয়েন্টে ভাটার সময় পানি কমে যায়। এতে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হয়। আর ডুবোচরে ফেরি একবার আটকা পড়লে ৩-৫ ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়।

তিনি অভিযোগ করেন, ‘যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের দুর্ভোগের দিকটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখেও দেখছে না।’ মেঘনার ওই পয়েন্টগুলো ড্রেজিং করা হলে এ সমস্যা থাকতো না বলেও মতামত দেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌ-পথে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যাতায়াত সুবিধার জন্য ২০০৬ সালের এপ্রিলে তিনটি ফেরি নিয়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজুচৌধুরীরহাট লঞ্চঘাট চালু করা হয়। পরবর্তী সময়ে এ লঞ্চঘাটে আরও একটি ফেরি সংযোজন করা হয়। বর্তমানে লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌ-পথে কনকচাঁপা ও কিষাণী নামে দু’টি ফেরি ও ৫-৬টি যাত্রীবাহী লঞ্চ ও কিছু সি-ট্রাক চলাচল করে। এ রুটে গড়ে ১৬০টি মালবোঝাই ট্রাক, ২০টি যাত্রীবাহী বাস ও ৮০টির মতো ছোট গাড়ি চলাচল করে। এ ছাড়া, প্রতিদিন প্রায় ৭শ’ যাত্রী যাতায়াত করেন। কিন্তু মেঘনায় নাব্যতা সংকট এবং ডুবোচরের কারণে পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের প্রতিনিয়তই পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে।

ফেরির অপেক্ষায় থাকা মালবোঝাই যান ও যাত্রী (ছবি- প্রতিনিধি) এ নৌ-পথে চলাচলকারী শাহেদ সাদমান নামে এক যাত্রী বলেন, ‘নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরি ও লঞ্চ আটকে যায়। এরপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় যাত্রীদের। এ কারণে ফেরির ট্রিপ সংখ্যাও কমে গেছে। এতে ঘাটে ৪-৫ দিন পর্যন্ত পণ্যবোঝাই শতাধিক ট্রাককে অপেক্ষায় থাকতে হয়।’

লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল নৌ-পথে চলাচলকারী লঞ্চ এম.ভি. পারিজাত-এর কেরানি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘নদী স্বাভাবিক থাকা অবস্থায় প্রতি ট্রিপে ৬-৭শ’ যাত্রী যাতায়াত করেন। বর্তমানে এক-দেড়শ’ যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এতে কর্তৃপক্ষ প্রতি ট্রিপে ২০ হাজার টাকা লোকসান গুণছে। ঈদের আগে এ সংকটের সমাধান না হলে লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা লোকসান গুণতে হবে।’

গত ৪ দিন ধরে মালবোঝাই ট্রাক নিয়ে ফেরির অপেক্ষায় থাকা চালক ইউসুফ বলেন, ‘সময়মতো ফেরি পারাপার হতে পারলে যাতায়াত খরচ কমে যেতো। এ ভোগান্তির কারণে শুধু পরিবহন শ্রমিক বা যাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না; এর প্রভাব পড়ছে দ্রব্যমূল্যের ওপরও। ভোগান্তির কারণে পণ্যের পরিবহন খরচ বেড়ে যায়।’ এ সংকট নিরসনে দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিসি) মজুচৌধুরীরহাট ফেরিঘাটের প্রান্তিক সহকারী নুরুর রহমান বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা সংকট ও ডুবোচরের কারণে ফেরি চলাচল করতে পারে না। এতে ট্রিপ সংখ্যা কমেছে, বেড়েছে যাত্রীদের ভোগান্তি।’ এ সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

লক্ষ্মীপুর বিআইডব্লিউটিসির সহকারী পরিচালক মো. শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌ-পথে কয়েকটি পয়েন্টে পানি কম থাকার কারণে ভাটার সময় ডুবোচরে ফেরি আটকে যায়; জোয়ার আসলে স্বাভাবিক হয়। এ সমস্যার কারণে ফেরির ট্রিপ কম হয়। এ সমস্যার সমাধান হলে এ রুটে যাত্রীদের যাতায়াত আরও বাড়তো। এতে সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও বাড়বে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার অবহিত করা হয়েছে।’

ডুবোচরে আটকে পড়া ফেরি (ছবি- প্রতিনিধি) তিনি আরও জানান, বিআইডব্লিউটিএ-এর অধীনে মজুচৌধুরীরহাট ফেরিঘাটের এক কিলোমিটার দূরে রহমতখালী চ্যানেলে দুই লাখ ঘনমিটার পলি ড্রেজিংয়ের জন্য তিন কোটি টাকা বরাদ্ধ দিয়েছে সরকার। খনন কাজ শেষ হলে একস্থানের ডুবোচরে আটকে যাওয়ার যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাবেন যাত্রীরা। কিন্তু ওই চ্যানেলের আরও তিন স্থানে ডুবোচর রয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ-এর লক্ষ্মীপুরের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানা বলেন, ‘লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌ-রুটে যে কয়েক জায়গায় নাব্যতা সংকট রয়েছে, তা দূর করার জন্য ছয় লাখ ঘনমিটার পলি খনন করতে হবে। তবেই এ সংকটের কিছুটা সমাধান হবে।’

ড্রেজিং কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কনক কনস্ট্রাকশনের ম্যানেজার মো. পিএল বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার সরেজমিনে এসে নদী সার্ভে করার পর ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করা হবে। ইতোমধ্যে ড্রেজিং মেশিন নদীর পাড়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু করা হবে।’ আগামী ৩০ জুনের মধ্যে খনন কাজ শেষ করার তাগাদা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিআইডব্লিউটিএ-এর চাঁদপুরের উপ-পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘মেঘনা নদীর নাব্যতা সংকট দীর্ঘদিনের। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। বর্ষার মৌসুমে এ সংকট থাকবে না। তারপরও বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।’

 

/এমএ/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
ভারতে দ্বিতীয় দফায় ভোটপ্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
‘খেলাধুলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা দ্রুত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম’
‘খেলাধুলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা দ্রুত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম’
ডুবন্ত শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো আরেক শিশুরও
ডুবন্ত শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো আরেক শিশুরও
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ