X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

বই প্রচুর, পাঠক নেই একজনও!

আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
২১ মে ২০১৮, ০৫:১৩আপডেট : ২১ মে ২০১৮, ০৮:৪১

কুড়িগ্রাম পাবলিক লাইব্রেরি (ছবি- প্রতিনিধি)

কুড়িগ্রাম পাবলিক লাইব্রেরি। এর সারিবদ্ধ আলমারিতে বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৬০ হাজারের বেশি বই রয়েছে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে ১শ’ ২৩ বছর পার করা এই লাইব্রেরিতে দুর্লভ বইয়ের সংখ্যাও অনেক। যথারীতি রয়েছে চেয়ার-টেবিল। এর পরিবেশও নিরিবিলি। তবে এখানে পাঠক নেই একজনও। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার (১৬ ও ১৭ মে) দুপুরে কুড়িগ্রাম সদরের পুরাতন শহরের রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্মুখে অবস্থিত গ্রন্থাগারটিতে গিয়ে এই দৃশ্য চোখে পড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৮৯৫ সালে কুড়িগ্রাম পাবলিক লাইব্রেরি স্থাপিত হয়। খাতা-কলমে এর সদস্য সংখ্যা ১৬০ জন। কিন্তু এসব সদস্যদের কেউ এখন আর লাইব্রেরিতে আসেন না। নিয়ম অনুযায়ী চাঁদাও দেন না। তবে এর পরিচালনা কমিটি আছে। আছেন একজন খণ্ডকালীন লাইব্রেরিয়ানও, যিনি নিয়মিত সকালে লাইব্রেরির দরজা খোলেন, আর বিকালে তা বন্ধ করেন। এখানে নিয়মিত সরকারি অনুদানও আসে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, জেলা শহরের এক পাশে গ্রন্থাগারটির অবস্থান হওয়ায় এবং আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া না থাকায় দিন দিন গ্রন্থাগারটিতে পাঠকসংখ্যা কমছে। জনবলসংকটসহ গ্রন্থাগারটিতে আছে আরও বেশ কিছু সমস্যাও। এ পাঠাগারে বইয়ের ক্যাটালগভিত্তিক তালিকা নেই। এতে পছন্দের বই খুঁজতে গিয়ে পাওয়া যায় না বা এতে অনেক সময় লাগে। এতো ধৈর্য কোথায় মানুষের। শিক্ষার্থীদেরও গ্রন্থাগারটিতে গিয়ে বই পড়ার তেমন আগ্রহ নেই।

কুড়িগ্রাম পাবলিক লাইব্রেরির খণ্ডকালীন লাইব্রেরিয়ানের নাম সরখেল। তিনি জানান, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপর ১টা পর্যন্ত এবং বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত লাইব্রেরি খোলা থাকে। তাকে মাসে দুই হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয়।

তিনি আরও জানান, এখানে বই পড়তে কোনও পাঠক আসেন না। তবে মাঝেমধ্যে সংবাদপত্র পড়তে কিছু পাঠক আসেন। লাইব্রেরির সামনে ১০টির মতো দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এখান থেকে প্রতিমাসে চার হাজার টাকার মতো ভাড়া আসে। এটাই লাইব্রেরির নিয়মিত আয়ের উৎস। এ ছাড়া, নিয়মিত সরকারি অনুদানের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুদানও মাঝেমধ্যে পাওয়া যায়।

পুরাতন শহর এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর ইসলাম রজব জানান, লাইব্রেরিতে কোনও পাঠক আসেন না। নিয়মিত কোনও সদস্য নেই। তারপরও কয়েক জনকে নিয়ে পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। তবে গত প্রায় দুই যুগ ধরে পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক পদে বদল নেই। এ ছাড়া, লাইব্রেরি চত্বরকে এখন পাইকারদের কাটা গাছ এবং ট্রাক, কার্ভাডভ্যান ও পিকআপ রাখার স্ট্যান্ডে পরিণত করা হয়েছে। সম্প্রতি লাইব্রেরি চত্বরের তিনটি গাছ কাটা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

পরিচালনা কমিটির সদস্য কাজিউল ইসলাম জানান, লাইব্রেরিতে বই আছে প্রচুর। কিন্তু তা পড়ার পাঠক নেই। সাধারণ পাঠক তো আসেনই না; স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও বই পড়তে আসে না।

গাছ কাটার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘অনেক আগে অনুষ্ঠিত সভায় গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে গাছগুলো কাটার আগে সভাপতিকে অবগত করা উচিত ছিল।’

পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি এবং কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা একেএম সামিউল হক নান্টু জানান, লাইব্রেরি নিয়ে নিয়মিত সভা হয় না। তাই এর হালনাগাদ তথ্য তার জানা নেই।

১৯৯৬ সালে থেকে লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন মো. শাহাবুদ্দিন, যিনি এখানে ১৯৮৪ সালে লাইব্রেরিয়ান হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি জানান, সরকারি সাহায্য পেলে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবস্থা করা হবে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে হওয়া এক সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গাছ কাটা হয়েছে। এগুলো দিয়ে লাইব্রেরি ভবন ও আসবাবপত্র মেরামত করা হবে।

পদাধিকার বলে লাইব্রেরিটির সভাপতি হচ্ছেন জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসক সরকারি কাজে জেলার বাইরে থাকায় গত ১৩ মে থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম সেলিম। ওই সময় লাইব্রেরির গাছগুলো কাটা হয়। তবে এ ব্যাপারে কেউ তাকে কোনও কিছু অবগত করেননি বলে জানান তিনি।

এদিকে, রবিবার (২০ মে) ফিরেছেন জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন। তিনি বলেন, ‘এখানে নতুন এসেছি। লাইব্রেরিটি সম্পর্কে বিশদ জানি না। লাইব্রেরিতে পাঠক সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

 

/এমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ওঠানামা করছে মুরগির দাম, বাড়ছে সবজির
ওঠানামা করছে মুরগির দাম, বাড়ছে সবজির
শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে
শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ