X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশাসনিক জটিলতায় বেড়িবাঁধ, সংকটে কয়রাবাসী

হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা
২২ মে ২০১৮, ১৩:৫৬আপডেট : ২২ মে ২০১৮, ১৪:৩০

খুলনা উপকূলীয় কয়রা উপজেলা দেশের মধ্যে অন্যতম ভাঙনপ্রবণ এলাকা। ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার আঘাতে এখানে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয়। এ এলাকায় সব ঋতুতেই ভাঙন অব্যাহত থাকে। বর্ষা মৌসুমের আগেই এখানে ভাঙনের ফলে আতঙ্কে রয়েছে ২৫ হাজার মানুষ। কয়রা খুলনা জেলার মধ্যে হলেও বাঁধের প্রশাসনিক ক্ষমতা সাতক্ষীরার হাতে। এ জটিলতার কারণেই দুর্গম কয়রার নদীভাঙন সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের উপকূলে ২ হাজার ২৯২ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। এরমধ্যে ৪২৪ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই খুলনা অঞ্চলে নদীভাঙন শুরু হয়েছে।

দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের গোলখালী গ্রামের মো. তসলিম বলেন, ‘কয়রা খুলনার মধ্যে, কিন্তু বেড়িবাঁধ সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে। এর ফলে বেড়িবাঁধ সংস্কারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। বাঁধের বেশিরভাগই নদীতে ভেঙেছে। অবশিষ্ট অংশ বিলীন হলে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে।

কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ খ ম তমিজ উদ্দিন বলেন, ‘উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়ন নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রশাসনিক জটিলতার কারণে ভাঙনপ্রবণ কয়রাবাসীর এ দুঃখ লাঘবে আশানুরূপ কোনও সফলতা দেখা যাচ্ছে না।’

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা মো. মসিউল আলম বলেন, ‘কেবল কয়রাই নয়, সাতক্ষীরা পাউবো-১-এর আওতায় ৩৭৭ দশমিক ১০ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ৬০ কিলোমিটার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ সমস্যা সমাধানে বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ কঠিন হচ্ছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, পাউবোর খুলনা-১-এর অধীনে ৩৬৫ দশমিক ২৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। সংস্কারের অভাবে ১০৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অবস্থা করুণ। পাউবো খুলনা-২-এর অধীনে ৫১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৪৫ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ। বাগেরহাটের ৩১৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ৬০ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ। ৪০ কিলোমিটার বাঁধ নিচু হয়ে গেছে। সাতক্ষীরার ৭৯৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ২১০ কিলোমিটারই ঝুঁকিপূর্ণ।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিডিপি খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব বলেন, `পলি জমে জমে নদী খালই ভরাট হয়েছে। এর ফলে জলোচ্ছ্বাস হলেই উপকূলে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটছে। এছাড়া বাঁধগুলো যথাযথ সংস্কারও হয়নি। তাই, বর্তমানে উপকূলবাসী অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।’

দক্ষিণ বেদিকাশি ইউপি চেয়ারম্যান কবি শামছুর রহমান বলেন, ‘বাঁধ ভাঙনের পর স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার কাছে সাহায্যের আকুতি জানালেও কেউ এগিয়ে আসেনি। এখানে বর্তমানে নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ অংশ ভাঙনে জোড়সিং বাজার সাইক্লোন শেল্টার ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২৫/৩০টি বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে।’

খুলনা পাউবো-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের পরিস্থিতি ও সংস্কার ব্যয় সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলো মেরামত করা হচ্ছে। ৩২ ও ৩৩নং পোল্ডারটির ঝুঁকিপূর্ণ অংশ মেরামতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। সেগুলোর কাজও চলমান।’

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী অপূর্ব কুমার ভৌমিক বলেন, ‘পাউবো-২-এর ৪২২ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ১৫০ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। এ টাকায় মাত্র ১৫ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার হয়েছে।’

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার আঘাতে শাকবাড়ীয়া নদীর পশ্চিম জোড়সিং বাজারের ৫০০ গজ বেড়িবাঁধ ভেঙে যায় এবং হারেসখালী নদীতে পরিণত হয়। তিন বছর পর ২০১২ সালে সেখানে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বর্তমান হারেসখালী থেকে ৩০০ গজ পূর্বে জোড়সিং বাজার লঞ্চঘাট ও একটি স্লুইসগেট নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে প্রাণ হারায় উপকূলের ৭ হাজার বাসিন্দা। ১৯৮৮ সালের ২৯ নভেম্বরের বন্যা, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের জলোচ্ছ্বাসের দুর্বিষহ স্মৃতিতে এখনও শিউরে ওঠেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

/এআর/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!