ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের হাতে আটকের পর আহত শাহজালাল ইসলামি ব্যাংকের নৈশপ্রহরী রাসেল মিয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার (২৪ মে) ভোররাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে তিনি মারা যান। এলাকাবাসী ও পরিবারের দাবি পুলিশি হেফাজতে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে পুলিশের দাবি, পালাতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে আহত হয় রাসেল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নবীর হোসেন বলেন, ‘রাসেলকে হত্যা করা হয়েছে, এ কথা ঠিক না। রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসার পর সে পালাতে গিয়ে থানা ভবন থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।’ এ ঘটনার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেইনকে প্রধান করে পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে এই সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ দেওয়া হলে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের কোর্ট রোডের সিটি সেন্টারের শাহজালাল ইসলামি ব্যাংকের নৈশপ্রহরীর দায়িত্বে ছিলেন রাসেল। সোমবার ভোররাতে ওই মার্কেটের তৃতীয় তলার স্বপ্নলোক ফ্যাশন হাউজে চুরির ঘটনা ঘটে। পরে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চুরির বিষয়টি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা পুলিশকে জানানো হয়। পরে পুলিশ এসে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে মার্কেটের নিচে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে এটিএম বুথে কর্মরত নৈশ প্রহরী রাসেল মিয়াসহ বেশ কয়েকজনকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। পরে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রাসেল ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়।
নৈশ প্রহরী রাসেলের মা আমেনা বেগম ও পরিবারের অন্য সদস্যরা অভিযোগ করেন, ব্যাংকের বুথে রাতের দায়িত্ব পালন শেষে রাসেল বাড়িতে ঘুমাচ্ছিল। এসময় ব্যাংক ম্যানেজার তাকে ফোন করে নিয়ে যায়। পরে পুলিশ তাকে মার্কেটে চুরির ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে নির্যাতন করে। একপর্যায়ে তাকে ছাদ থেকে ফেলে দেয়। বৃহস্পতিবার ভোররাতে রাসেল মারা যায়। এ ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা।
নৈশপ্রহরী রাসেলের নিজ এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মধ্যপাড়া শান্তিবাগ এলাকার মো. শহীদ মিয়া,শফিকুল ইসলাম, মো. তাজুল ইসলাম এবং রোজিনা বেগম জানান, তারা রাসেলকে ভাল ছেলে হিসেবেই জানেন। তাকে কখনও সিগারেটও খেতে দেখেননি তারা। তারা রাসেলের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে ঘটনার বিচার দাবি করেন।
এদিকে স্বপ্নলোক ফ্যাশন হাউজের মালিক মো. আসিফ ইকবাল বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানে চুরি হওয়ার পর অজ্ঞাত পরিচয়ধারী ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। এরপর পুলিশ কাকে কোথায় থেকে ধরে নিয়ে গেছে এ বিষয়টি আমার জানা নেই।’
শাহজালাল ইসলামি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মো. কামরুজ্জামান জানান, ঘটনার দিন রাতে রাসেল এটিএম বুথে কর্মরত ছিল। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চুরির ঘটনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা নেই বলে আমরা মনে করি। পুলিশ আমাদের নিশ্চিত করেছিল তাকে ছেড়ে দেবে। পরে কিভাবে কি হলো বুঝতে পারছিনা। আমরাও এ ঘটনার ঠিক তদন্ত দাবি করছি।
এদিকে পুলিশ হেফাজতে ব্যাংককর্মী আহত হওয়ার পর থেকে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। বর্তমানে শহরের মধ্যপাড়া শান্তিবাঘ এলাকার ক্ষোভ এবং উত্তেজনা বিরাজ করছে।