X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘আপনারা তাদের বাঁচান’

এনায়েত করিম বিজয়, টাঙ্গাইল
২৫ মে ২০১৮, ১৫:৫৩আপডেট : ২৬ মে ২০১৮, ০৯:৫৭

ভুক্তভোগী মাজেদা বেগম

বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়ার পরপরই নারী কর্মীদের ওপর নির্যাতন শুরু হতো বলে জানিয়েছেন সম্প্রতি ফিরে আসা এক ভুক্তভোগী। তিনি বলেন, ‘বিভিন্নভাবে নির্যাতন শিকার হয়ে এবং না খেয়ে থাকতে থাকতে অনেক নারী মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। আপনারা তাদের বাঁচান। সেখানে অনেক নারী রয়েছে, তারা প্রায় দুই বছর ধরে আটক আছে। তারা শুকিয়ে গেছে। এমন চেহারা হয়েছে তাদের, পরিবার চিনতেই পারবে না।’  

বি এ অ্যাসোসিয়েটস এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরবে গিয়ে নির্যাতনের মুখে পড়া এ নারী আরও জানান, ‘তারা আমাকে যেখানে রাখে, সেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন বয়সের প্রায় ৫০ জন নারী রয়েছে। অনেক নারী নির্যাতনের ফলে হাঁটতেও পারছেন না। চোখের সামনেই যেভাবে পেটানো হতো, তা সহ্য হতো না।

সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসা টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বানিয়ারছিট এলাকার মাজেদা বেগম এসব তথ্য জানিয়েছেন। আহত অবস্থায় ফেরার পর এখন নিজ বাড়ির বিছানায় কাতরাচ্ছেন তিনি। সৌদি আরবে যেসব পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন সেসব ব্যাপারে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘একটি ঘরের ভেতর এক এক করে সবাইকে নিয়ে গরম লোহার রড দিয়ে সেঁক দিতো এবং লাঠি দিয়েও পেটানো হতো। সে সময় কথা বললে আরও জোরে পেটানো হতো।’

নির্যাতন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়ার পর নারীদের জন্য যেখানে থাকার ব্যবস্থা করা হয়, সেখানে অনেক নির্যাতন করা হয়। রাত হলেই ১০-১২ জনকে একটি গাড়িতে করে তুলে নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির বাসায় দিয়ে আসা হতো। সেখানেও শারীরিক নির্যাতন চলতো। রাত শেষ হওয়ার আগেই আবার সবাইকে ফিরিয়ে এনে একত্র করা হতো। দেশে ফিরতে চাইলে মুক্তিপণ হিসেবে টাকা দাবি করেও মারপিট করতো ওরা।’

সৌদি আরবে যাওয়ার পরেই বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে দাবি করে মাজেদা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার পরই আমাকে সৌদি আরবের একটি ঘরে নেওয়া হয়। সেখানে গিয়ে দেখি আমার মতো আরও অনেক নারী রয়েছে। তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম সৃষ্টি হয়েছে। পরে সেই নারীদের কাছে বিস্তারিত জানলাম। এরপর রাত ঘনিয়ে এলো। কয়েকজন ব্যক্তি এসে সেখান থাকা নারীদের এক এক করে রুম থেকে বের করে। কেউ যেতে না চাইলে তাকে মারপিট করা হতো। তারা বলতো তদের টাকা দিয়ে কিনে আনা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিদেশ যাওয়ার চেয়ে দেশে ভিক্ষা করে খাওয়া অনেক ভালো। বিদেশ যেন আর কোনও নারী না যায়।’

বিদেশ যাওয়ার কারণ হিসেবে মাজেদা বেগম বলেন, ‘অভাবের সংসার ও একমাত্র উপার্জক্ষম স্বামীটিও বৃদ্ধ হয়ে ঘরে পড়ার উপক্রম। আমার দুই মেয়ে রয়েছে। টাকার অভাবে তাদের লেখাপড়া বন্ধ প্রায়। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ভাগ্যের চাকা সচল করতে স্থানীয় দালাল সাইফুল মেম্বারের মাধ্যমে সৌদি আরবে যাই। মেম্বার হয়ে সে যে নিজের এলাকার মানুষের সঙ্গে এরকম প্রতারণা করবে তা জানা ছিল না।’  

পরে দেশে ফেরার প্রক্রিয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সৌদ আরব থেকে আমার মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগের একপর্যায়ে জানতে পারলাম, আমাকে দেশে ফেরানোর জন্য সাংবাদিকরা (বাংলা ট্রিবিউন) চেষ্টা চালাচ্ছেন। তখন আমার মনটা কিছুটা হলেও হালকা হয়েছিল। এরপর হঠাৎ করে বুধবার (২৩ মে) রাতে এক ব্যক্তি এসে আমাকে ডেকে নিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে সৌদি আরবের এয়ারপোর্টে নিয়ে গেলেন। কাগজপত্র হাতে দিয়ে তিনি বললেন, ‘‘তুই আজ দেশে ফিরতে পারবি।’’ এই বলে তিনি কোথায় যেন চলে গেলেন। এরপর কাগজপত্র দেখিয়ে বিমানে উঠলাম। বৃহস্পতিবার (২৪ মে) সকাল ৯টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছি। তখন আমার কাছে কোনও টাকা ছিল না। এক ব্যক্তির কাছে কিছু টাকা চেয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।’ তাকে দেশে ফেরানোর ব্যাপারে ভূমিকা রাখার জন্য বাংলা ট্রিবিউনের সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

ভুক্তভোগী মাজেদা বেগমের পরিবার সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বানিয়ারছিট গ্রামের স্থানীয় দালাল ও সাবেক ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম ২৪ এপ্রিল ঢাকার নয়াপল্টনের বি এ অ্যাসোসিয়েটস-এর মাধ্যমে সৌদি আরবে পাঠায় মাজেদাকে। সাইফুল ইসলাম একই এলাকার মহর আলীর ছেলে ও স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য। তিনি ৬০ হাজার টাকার মাধ্যমে মাজেদা বেগমকে সৌদিতে পাঠান। সৌদিতে যাওয়ার পর মাজেদাকে আটকে রেখে মুক্তিপণসহ বিভিন্ন কারণে নির্যাতন চালানো হতো। এ কারণে দেশে ফিরতে চান তিনি। সে কথা সাইফুলকে জানালে তাকে দেশে ফেরত আনতে তার পরিবারে কাছে ১ লাখ ৬০ টাকা দাবি করেন তিনি।

পরে সৌদি আরবে নির্যাতিত মাজেদা বেগমের মেয়ে শম্পা আক্তার বাংলা ট্রিবিউনের অফিসে ফোনের মাধ্যমে বিষয়টি জানান। এরপর বাংলা ট্রিবিউনের টাঙ্গাইল প্রতিনিধিকে তাদের বাড়িতে খোঁজ নেওয়ার জন্য বলা হয়। একপর্যায়ে ওই নারীকে দেশে ফেরাতে ওই এজেন্সি ও দালালকে চাপ সৃষ্টি করা হয়। এরপর ওই ভুক্তভোগী নারী দেশে ফেরেন।

 

 

/এএইচ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী