X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

হলদেটে আভা হাঁড়িভাঙায়, বাতাসে ম–ম গন্ধ

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
২৬ মে ২০১৮, ০৭:৫০আপডেট : ২৬ মে ২০১৮, ১৭:৫৩

আমের ভারে নুয়ে পড়া ডালপালা (ছবি- প্রতিনিধি) ধান-সবজি চাষ করে কোনোরকমে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন চাষিরা। এই অবস্থায় হাঁড়িভাঙার মতো অখ্যাত আম চাষে সাহস দেখাননি অনেকেই। তবে লোকসানের আশঙ্কা থাকার পরও শুরুটা করেন কয়েকজন বাগানমালিক। তারা সাহস দেখালেও চাষ করেন সামান্য জমিতে। কয়েক বছর পর দেখা গেলো, হাঁড়িভাঙার ফলন ও দাম দুটোই ভালো। এবার আর বসে থাকা নয়; এগিয়ে এলেন অন্য চাষিরাও। এতে ল্যাংড়া-হিমসাগর-গোপালভোগ আমের পাশাপাশি দেশজুড়ে নাম ফুটলো হাঁড়িভাঙারও। রংপুরে বাণিজ্যিকভাবে হাঁড়িভাঙা আম চাষ বৃদ্ধির গল্পটা এ রকম।

চাষিরা জানান, বর্তমানে হলদেটে আভা লাগতে শুরু করেছে বিভিন্ন বাগানের আমে। এর মানে আরও ২০-২৫ দিনের মধ্যেই বাজারে উঠতে শুরু করবে এ আম। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও রংপুরে হাঁড়িভাঙা আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ নিয়ে তারা খুশি। তবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় তড়িগড়ি করে এ আম বিক্রি করতে গিয়ে প্রতিবছর তারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। অন্যদিকে, লাভবান হন মধ্যস্বত্বভোগীরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়, এবার রংপুরে একহাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙা আম চাষ হয়েছে। এবার হাঁড়িভাঙা আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার মেট্রিক টন। তবে তা ২৫ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। প্রায় প্রতিটি উপজেলায় এ আমের চাষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি হয়েছে সদর, বদরগঞ্জ ও মিঠাপুকুর উপজেলায়।

সবুজ পাতা ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে আম (ছবি- প্রতিনিধি) বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের গোপালপুরে গিয়ে দেখা যায়, একটি বাগানে সারি সারি আম গাছ। আকারে ছোট। বড়জোর পাঁচ থেকে ছয় মিটার লম্বা। আমের ভারে নুয়ে পড়েছে গাছগুলো। বাগানের একেকটি গাছে ঝুলছে ৫০ থেকে ৬০টি আম। কিছু গাছে বাঁশ দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে। পাশের কুতুবপুর ইউনিয়নের নাগেরহাট সর্দ্দারপাড়ায়ও এমন অনেক বাগান চোখে পড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, শুধু বদরগঞ্জ নয়; সদর ও মিঠাপুকুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নেও হাঁড়িভাঙা আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার সদ্যপুস্করনী ইউনিয়ন ও মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের সবক’টি গ্রামে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হাঁড়িভাঙা আম চাষ হয়েছে। বাগান ছাড়াও প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ১০-১৫টি করে হাঁড়িভাঙা আমের গাছ দেখা গেছে।

চাষিরা জানান, হাঁড়িভাঙা আমের গাছ প্রায় পাঁচ-ছয় মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। ১৫ ফুট পর পর ধরে প্রতি একরে প্রায় ১০০ চারা রোপণ করা যায়। হাঁড়িভাঙা আম জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত পাওয়া যায়। পুষ্ট ও পাকা হাঁড়িভাঙার শাঁস থেকে টক-মিষ্টি ঘ্রাণ পাওয়া যায়। পাকা আম মাঝারি মাত্রার তীব্র সুগন্ধ ছড়ায়। গোলাকার আমটি বেশ মিষ্টি। নিচের দিকের তুলনায় বোঁটার দিকে কিছুটা মোটা। নিচের দিকে যেখানে ভাঁজ থাকে, সেই স্থানটি অন্য আমের তুলনায় একটু উঁচু। এই জায়গাটিই হাঁড়িভাঙা আমকে অন্য আম থেকে আলাদা করেছে।

চাষিরা আরও জানান, কাঁচা অবস্থায় এই আমের রং সবুজ, যা পুষ্ট হলে কিছুটা সাদাটে হয়। পাকা অবস্থায় বোঁটার কাছাকাছি জায়গাটা সামান্য হলুদ হয়। ক্রমান্বয়ে নিচের দিকটা হালকা হলুদ হতে থাকে। শাঁস আঁশবিহীন, পুরু এবং আঁটি বেশ পাতলা। ওজন ১৫০-৪৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফলের প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ খাওয়া যায়।

গাছে গাছে ঝুলছে হাঁড়িভাঙা আম (ছবি- প্রতিনিধি) বদরগঞ্জ উপজেলার পদাগজ্ঞ এলাকার আমচাষি মমতাজ উদ্দিন, আয়েন উদ্দিন, মোসলেমা বেগম জানান, এ এলাকার মাটির রঙ লাল। ৮-১০ বছর আগে এ মাটিতে বছরে একবার শুধু ধান উৎপাদন করা হতো। এতে অভাব পিছু ছাড়তো না মানুষের। তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হাঁড়িভাঙা আমের চাষ শুরু হওয়ার পর ভাগ্যের চাকা বদলেছে অধিকাংশের। এখন ধানের জমিতে আমের বাগান বানাচ্ছেন চাষিরা। বছর বছর আম চাষ ও চাষি বাড়ছে।

পদাগজ্ঞ এলাকার আমচাষি হোসনে আরা জানান, প্রায় পাঁচ বছর আগে তার স্বামী মারা গেছেন। ওই সময় পাঁচ সন্তান নিয়ে আনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটতো তাদের। পরে স্বামীর চার বিঘা জমিতে হাঁড়িভাঙা আমের বাগান করেন তিনি। এখন তিনি প্রতিবছর আম বিক্রি করেই ৩-৪ লাখ টাকা আয় করেন।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক সরওয়ার হোসেন জানান, বছর বছর জেলায় হাঁড়িভাঙা আম চাষের পরিমাণ বাড়ছে। আঁশবিহীন ও সুস্বাদু হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। একইসঙ্গে বাড়ছে চাহিদাও। আম সংরক্ষণের বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

 

/এমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভাটারায় নির্মাণাধীন ভবন থেকে লোহার পাইপ পড়ে হোটেল কর্মচারীর মৃত্যু
ভাটারায় নির্মাণাধীন ভবন থেকে লোহার পাইপ পড়ে হোটেল কর্মচারীর মৃত্যু
সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউনের কয়রা সফর সম্পন্ন
সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউনের কয়রা সফর সম্পন্ন
২০২৩ সালে বায়ুদূষণে শীর্ষে বাংলাদেশ
২০২৩ সালে বায়ুদূষণে শীর্ষে বাংলাদেশ
যারা দেশের অর্থনীতিকে খেলো মনে করে, তাদের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত: আদালত
যারা দেশের অর্থনীতিকে খেলো মনে করে, তাদের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত: আদালত
সর্বাধিক পঠিত
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
পদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
একীভূত হলো দুই ব্যাংকপদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই