ময়মনসিংহ মহানগরীর কেওয়াটখালি মরাখোলা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত কাঠমিস্ত্রি সঞ্জয় সরকার (২৫) নিহতের আগে পাঁচ দিন ধরে নিখোঁজ ছিল বলে পরিবারের সদস্যদের দাবি। কোতোয়ালী মডেল থানা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে মাদক আইনে কোনও মামলাও নেই। তবে, তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালী মডেল থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা রয়েছে এবং সে জামিনে ছিল।
পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীর দাবি সঞ্জয় মাদক সেবন কিংবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল না।
মহানগরীর ডিবি রোডের নারায়ন চন্দ্র সরকার ও আলো সরকারের তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে সঞ্জয় সরকার সবার ছোট। সঞ্জয় বেশ কিছু দিন বদরের মোড়ে প্রদীপের মোটর গ্যারেজে কাজ করার পর গত এক বছর ধরে বাবার সঙ্গে কাঠমিস্ত্রির কাজ করছিল।
সঞ্জয়ের বড় বোন অঞ্জনা সরকার জানান, সঞ্জয়কে গত ২২ মে (মঙ্গলবার) রাত ১০টার পর নাটকঘরলেন রেল লাইনের পাশ থেকে ডিবি পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে যায়। পরের দিন ডিবি অফিসে সঞ্জয়কে খুঁজতে গেলে এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে বলেছে সঞ্জয়কে আদালতে সোপর্দ করার কথা। আদালতে খোঁজ-খবর নিয়ে সঞ্জয়ের কোনও সন্ধান পায়নি। তিনি আরও জানান, বাবার সঙ্গে কাঠমিস্ত্রির কাজ করে যা আয় হতো, তা দিয়েই তাদের সংসারের খরচ চলতো। সঞ্জয় মাদক ব্যবসাতো দূরের কথা মাদক সেবন পর্যন্ত করতো না।
সঞ্জয়ের বাবা নারায়ন চন্দ্র সরকার জানান, গত এক বছর আগে পুলিশ তাকে একটি চাকুসহ থানায় ধরে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে আদালতে একটি মামলা রয়েছে। ওই মামলায় সঞ্জয় আদালত থেকে জামিন নেয়। তার ছেলে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত না।
মা আলো সরকার বলেন, ‘আমার ছেলেটা কাম-কাজ কইরা ভাত খাইতো। সে কাম ছাড়া কিছুই বুঝতো না। সে কখনও মাদক ব্যবসা করেছে, এটা বিশ্বাস করা যায় না।’
প্রতিবেশী রাশিদা আক্তার জানায়, সঞ্জয় আর তার ছেলে সোহেল একসঙ্গে প্রাইমারী স্কুলে লেখাপড়া করেছে। তারা দুই জন একসঙ্গে বড় হয়েছে। সঞ্জয়কে তারা মাদক সেবন কিংবা বিক্রি করতে দেখেননি এবং শুনেনওনি।
ডিবি রোডের শফিকুল জানান, সঞ্জয়কে সব সময় তার বাবার সঙ্গে কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে দেখেছেন। মাদক সেবন কিংবা ব্যবসা করার কথা তারা জানেন না।
কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি মাহমুদুল ইসলাম জানান, সঞ্জয় সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে একটি মামলা (নম্বর-৮৪, তারিখ-২৬/৪/১৮) ছাড়া আর কোনও মামলা নেই।
এদিকে সঞ্জয়কে ৫ দিন পূর্বে আটকের বিষয়ে পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা গোয়েন্দা বিভাগের ওসি আশিকুর রহমান বাংলা ট্রিব্রিউনকে জানান, পুলিশ ও মাদক ব্যবসায়ীদের মাঝে পাল্টাপাল্টি বন্দুকযুদ্ধে সঞ্জয় সরকার নিহত হয়েছে।
উল্লেখ্য, শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মহানগরীর কেওয়াটখালির মরাখোলা এলাকায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ যৌথভাবে মাদকবিরোধী অভিযান চালায়। এসময় পুলিশের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সঞ্জয় সরকারকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।