দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের ঈদ জামাতে এবছর ৬ লাখ মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন বলে জানিয়েছেন মাঠটির তত্ত্বাবধায়করা। তাদের দাবি, এই ঈদ জামাতটিই দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত। জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপিও এ দাবি করেছেন।
দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে আজ শনিবার (১৬ জুন) সকাল ৯ টা ২০ মিনিটে এই বিশাল ঈদ জামাতটি অনুষ্ঠিত হয়। এখানে ইমামতি করেন দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সামশুল আলম কাশেমী।
বৃহৎ এই ঈদের জামাতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি, জেলা প্রশাসক ড.আবু নঈম মুহাম্মদ আবদুছ ছবুর, পুলিশ সুপার হামিদুল আলমসহ সর্বস্তরের মুসল্লিরা অংশ নেন। দিনাজপুর ছাড়াও বগুড়া, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলাসহ আশে-পাশের জেলার মুসল্লিরাও এখানে নামাজ আদায় করতে আসেন। বৃহৎ এই জামাতে নামাজ আদায় করতে পেরে খুশি আশেপাশের ও দূর-দূরান্ত থেকে আগত মুসল্লিরা।
বড় এই ঈদগাহ ময়দানে নামাজ আদায়ে মুসল্লিদের যাতে করে কোনও ধরনের সমস্যায় না পড়তে হয় সেজন্য অস্থায়ী ওজুখানা,পানি সরবরাহ ও পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়। জঙ্গি হামলাসহ সব ধরনের নাশকতা ঠেকাতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। র্যাব, বিজিবি, পুলিশ, আনসারসহ সব ধরনের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ ঈদগাহের নিরাপত্তায় মোতায়েন ছিল। একইসঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারিসহ সিসি ক্যামেরাও স্থাপন করা হয়।
প্রায় ২২ একরের বিশাল এই মাঠে যেন গত বছরের তুলনায় আরও বেশি মানুষ নামাজ আদায় করতে পারে তারই প্রস্তুতি হিসেবে সম্প্রতি মতবিনিময় সভাও করেন জেলা প্রশাসক ড.আবু নঈম মুহাম্মদ আবদুছ ছবুর।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। শোলাকিয়ার চেয়ে বড় জামাতের আয়োজন করতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাব (যেখানে ইমাম দাঁড়ান) তার উচ্চতা ৪৭ ফিট। এর সঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। এছাড়া ৫১৬ ফিট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। পুরো মিনার সিরামিক্স দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। ঈদগাহ মাঠের দু’ধারে করা হয়েছে অজুর ব্যবস্থা। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলে ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে উঠে।
ঐতিহাসিক গোড়-এ শহীদ ময়দানের পশ্চিম দিকে প্রায় অর্ধেক জায়গা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত এই ঈদগাহ মিনারটির পাদদেশে গত বছরে ঈদের ২টি নামাজ আদায় হয়েছে। এবার নিয়ে ৩টি জামাত অনুষ্ঠিত হলো।
দিনাজপুরের পুলিশ সুপার হামিদুল আলম জানান, যাতে করে কোনও ধরনের জঙ্গি হামলা কিংবা নাশকতার ঘটনা না ঘটে সেজন্য ঈদের আগেরদিন থেকেই র্যাব, বিজিবি, পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর সদস্যরা এখানে মোতায়েন ছিলেন। স্থাপন করা হয়েছিল অস্থায়ী সিসি ক্যামেরা।
বৃহৎ এই জামাতের মূল উদ্যোক্তা জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম জানান, ঈদুল ফিতরের এই জামাতে প্রায় ৬ লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটেছে। ঈদের জামাত সফল করার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে আগত মুসল্লিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬ লাখ মানুষ গণনার বিষয়টি ধারণাগত। এখানে প্রকৃতপক্ষে উপস্থিতি গণনার কোনও যন্ত্র সংযোজিত ছিল না।
আরও পড়ুন: কড়া নিরাপত্তায় শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত