X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

চা-বাগান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগে সিলেটে পর্যটকদের ভিড়

তুহিনুল হক তুহিন, সিলেট
১৮ জুন ২০১৮, ০৬:৩৯আপডেট : ১৮ জুন ২০১৮, ০৭:৪০
image

সিলেটের জাফলংয়ের বিজিবি ক্যাম্প থেকে দেখা যায় পাহাড়ে হেলান দিয়ে আছে ভারতে ডাউকি বাজার

পাহাড়, টিলা আর দিগন্ত বিস্তৃত চা-বাগান যেন সিলেটকে ঢেকে রেখেছে সবুজ চাঁদরে। যেখানে পর্যটকরা মুগ্ধ হন, প্রেমে পড়েন শীতল প্রকৃতির এই লীলাভূমিতে। সিলেট হচ্ছে দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির সবুজ রংয়ের নয়নাভিরাম চারণভূমি, হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরাণ (রহ.)সহ ৩৬০ আউলিয়ার পূণ্যভূমি এবং সিলেটের গোলাপগঞ্জের ঢাকা দক্ষিণের রয়েছ শ্রী চৈতন্যের তীর্থস্থান। এছাড়াও সিলেটের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রকৃতির রূপ-লাবণ্যের অপূর্ব সৌন্দর্যের ভাণ্ডার। এখানকার নৈসর্গিক প্রাকৃতিক শোভা অতি সহজে মুগ্ধ করে যে কাউকে।

সিলেটে রয়েছে গ্যাস আর তেলের মত প্রাকৃতিক সম্পদ। বাউল আর মরমী গানের মন মাতানো ঢেউ রয়েছে সিলেট বিভাগে। এখানে জন্মেছেন মরমী কবি হাসন রাজা, রাধা রমন দত্ত, আরকুম শাহ, দূরবীন শাহ ও শাহ আব্দুল করিমের মত মরমী সাধকরা। আর সিলেট নগরের ঘাইপাড়াকে বলা হয় বেতের বাক্সেট। আর তাই এবারের ঈদে পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে সিলেট।

সিলেটের জেলা প্রশাসক নুমেরী জামান জানান, ঈদের ছুটিতে আধ্যাত্মিক ও পর্যটক নগরের এই সিলেটে হাজার হাজার পর্যটকরা ঘুরতে আসেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। তাদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ের ওপর নজর রাখতে বিজিবি,পুলিশ ও সিভিল অ্যাভিয়েশনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সিলেটের গোয়াইঘাটের বিছানাকান্দি

বিছনাকান্দি: ভারতের মেঘালয় পাহাড়। পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে এসেছে মনোলোভা কয়েকটি পাহাড়ি ঝর্ণা। পাহাড়ের ওপার থেকে কলকল শব্দে ঝর্ণার ধারায় চলে এসেছে গোয়াইনঘাটের পিয়াইন নদীতে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বিছনাকান্দি। অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যের সমাহার বিছনাকান্দির সৌন্দর্য্য বিস্ময়কর। কাছেই দাঁড়িয়ে দেখা যায়, মেঘে ঢাকা মেঘালয় পর্বতমালা আর সে পাহাড় থেকে প্রবাহিত সু-শীতল ঝর্ণাধারার তীব্র প্রবাহ। হাতের কাছে দেখা যাবে আকাশে হেলানো উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারি। চোখ ধাঁধানো সব দৃশ্য দেখতে দেখতে এক সময় এই পাহাড়ের কোলে এসে চোখে পড়বে বিস্তীর্ণ পাথর কোয়ারি।

পান্তুমাই: বিছনাকান্দির পাশেই অপরুপ সৌন্দর্য্যরে ওপর পাহাড়ী ঝর্ণা আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। নাম তার পান্তুমাই। এখানে পাহাড় নদীর আর ঝর্ণা সাজিয়ে বসে আছে মনরোম পরিবেশ নিয়ে।

প্রাকৃতিক কন্যা জাফলং

জাফলং:  যারা সৌন্দর্য পিপাসু তাদের পক্ষে জাফলংয়ের আকর্ষণ এড়ানো কিছুতেই সম্ভব নয়। সিলেটের পর্যটনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এই জাফলং। ‘আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায়’ এমন চিত্র দেখতে হলে যেতে হবে সিলেটের জাফলংয়ে। এখানে দূর থেকে তাকালে মনে হবে আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়। প্রকৃতিকন্যা নামেও রয়েছে আলাদা পরিচিতি। ওপারে খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়, এপারে নদী। পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলছে ঝর্ণা, আর নদীর বুকে স্তরে স্তরে সাজানো নানা রঙের নুড়ি পাথর। পাহাড়ের গায়ে নরম তুলার মতো ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘরাশি। প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য্য আর কোথায় পাবেন, জাফলং ছাড়া। এখানেই শেষ নয় সমতল চা-বাগান, খাসিয়া পল্লী, পানের বরজ-কী নেই জাফলংয়ে! সিলেটের জাফলংকে তাই বলা হয়ে থাকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি।  পাহাড়, পানি, পান, পাথর, ঝর্ণা সব মিলিয়ে জাফলং যেন এক রূপকথার রাজ্য।

ঈদের ছুটিতে পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন সিলেটের রাতারগুল

রাতারগুল: সিলেটের গোয়াইনঘাটের রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট। ভরা বর্ষায় মাথার ওপর সূর্য দেখা দিলে ঈষৎ ছায়া জলে এক অপূর্ব রূপ ধারণ করে রাতারগুল। কাঁচের মতো মসৃণ নিথর জলে গাছের ডালপালার প্রতিবিম্ব এক অদ্ভূত দৃশ্যের অবতরণা করে। তখন হঠাৎ কোনো বন্যপ্রাণী অজগর, কাঠবিড়ালি, বানর, বনবিড়াল, শিয়াল পাতার ছায়ার জলে উঁকি দেয়। জালিবেত, কদম, হিজল, মূর্তাসহ নানা জাতের গাছে সমৃদ্ধ এই ফরেস্ট।

লালাখাল: সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় স্বচ্ছ নীল পানির নদী ‘লালাখাল’। প্রকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি। প্রকৃতিকে একান্তে অনুভব করার জন্য স্থানটি বেশ উপযোগী। পাহাড়ে ঘন সবুজ বন, নদী, চা-বাগান ও নানা জাতের বৃক্ষের সমাহার লালাখাল জুড়ে।  ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেই লালাখালের অবস্থান। চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে উৎপন্ন এই নদী বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। লালাখালের চারপাশে সন্ধ্যার আগ মুহূর্তটা আরো অবিস্মরণীয়। ওপরে আলোকিত আকাশ। ক্লান্ত সূর্য ঢলে পড়ছে পশ্চিম আকাশে।  

জাফলংয়ের মায়াবী ঝর্ণায় পর্যটকদের ভিড়

জায়লংয়ের মায়াবী ঝর্ণা: প্রকৃতি কন্যা জাফলংয়ে যাবার আগেই রয়েছে মায়াবী ঝর্ণা। ঝর্ণাটি এক পলক দেখতে সেখানে ভিড় জমান শত শত পর্যটক। জাফলংয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে পশ্চিমে খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়ের গায়ে বহমান এই ঝর্ণাটি। বিশাল আকারের এই ঝর্ণা থেকে দেখতে পাওয়া যায় আদিবাসী খাসিয়াদের বসতি সংগ্রাম পুঞ্জি, নকশিয়ার পুঞ্জি ও লামা পুঞ্জি।

হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরাণ (রহ.) এর মাজার : সুদূর ইয়েমেন থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য এদেশে এসেছিলেন সাধক পুরুষ হযরত শাহজালাল (রহ.)। দীর্ঘদিন সিলেটে বিভিন্ন মানুষের মাঝে ৩৬০ জন আউলিয়াসহ ধর্ম প্রচারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক পর্যটক সিলেটে আসেন তার মাজার জিয়ারতে। হযরত শাহজালাল (রহ.) এর ব্যবহৃত কতগুলো মূল্যবান পবিত্র দ্রব্যও মাজারের সন্নিকটে অতীব যত্মের সঙ্গে সংরক্ষিত আছে আজও।

তামাবিল : তামাবিল সিলেট শহরের প্রায় ৫৮ কিলোমিটার উত্তরে সিলেট-শিলং (ভারত) যাতায়াত পথের প্রান্তসীমায় চমৎকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে অবস্থিত। মনোমুগ্ধকর পর্বতের দৃশ্য ছাড়াও তামাবিলের প্রাসীমা থেকে জলপ্রপাত দেখা যায় ক্ষীণভাবে। প্রতিদিন ভারত থেকে অসংখ্য ট্রাক স্থলপথে এই বন্দরে কয়লা নিয়ে আগমনের কারণে বাংলাদেশ বছরে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে থাকে। এছাড়া এখানকার স্থলপথেও অনেক বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে আগমন করে থাকেন।

ঈদগাহ : সিলেট শহরের দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তে একটি ছোট টিলার উপরে সিলেটের শাহী ঈদগাহ অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম শাহী ঈদগাহের একটি। দৃষ্টিনন্দন, মনোমুগ্ধকর, কারুকার্যময় এই শাহী ঈদগাহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে এখানে সৈয়দ মুহাম্মদ হাদী ও সৈয়দ মুহাম্মদ মেহেদী ভ্রাতৃদ্বয়ের নেতৃত্বে ইংরেজ বিরোধী অভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এবং ইংরেজদের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয় শহীদ হন। এছাড়া বিভিন্ন সময় এই শাহীঈদগাহ ময়দানে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রেখে গেছেন কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মহাত্মা গান্ধী, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলাসহ উপমহাদেশের বিখ্যাত রাজনীতিকরা।

মন্দির ও আখড়া : পর্যটন নগরী সিলেট হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরও অন্যতম তীর্থ ভূমি। শহরের মধ্যেই বেশ কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী গুরুত্বপূর্ণ মন্দির রয়েছে। প্রতিবছর শত শত পর্যটক এখানে ভ্রমণে এসে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন।

জৈন্তা রাজবাড়ি : একটি সমৃদ্ধ, ঐতিহ্যবাহী জনপদ জৈন্তারাজ্য এক সময় ছিল প্রাচীন নারী রাজ্য। প্রবাদ আছে পান,পাতা আর নারী এই তিন নিয়েই সিলেটের জৈন্তাপুর।ঐতিহাসিক এবং দর্শনীয় অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন এখনও টিকে আছে জৈন্তা রাজবাড়িতে। সময়ের পরিক্রমায় রাজবাড়ি এবং ফটক ধ্বংসের প্রায় দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হলেও এখনো ইতিহাস ও ঐতিহ্যপ্রিয় পর্যটকরা এখানে সময় কাটাতে পছন্দ করেন।  এছাড়া অক্ষত অবস্থায় আছে বধ্যভূমিও। এখানেই অবাধ্যদের হত্যা করা হতো। জৈন্তা রাজবাড়ি একটি ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সিলেটের পর্যটন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

পাথর রাজ্য ভোলাগঞ্জ: পাথর ছুঁয়ে নামছে পাহাড়ের স্বচ্ছ জল, সেই জলে বাসা বেধেছে সাদা পাথর। এর সাথে আছে নীল আকাশ আর পাহাড়ের বুকে কালো মেঘের আনাগোনা। যাত্রা পথেই চোখে পড়বে বালির পাহাড় আর সারি নৌকা। যেখানে পাথর আহরণে কর্মব্যস্ত মানুষ।

 

/এমএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিশ্বসাহিত্যের খবর
বিশ্বসাহিত্যের খবর
দেশজুড়ে এমপিরাজ শুরু হয়েছে: রিজভী
দেশজুড়ে এমপিরাজ শুরু হয়েছে: রিজভী
স্কুল ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের