X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাবা-মা কে জানেন না, তবে যে কোনও উৎসবে অনেক ভাইবোন এক সঙ্গে

রায়হানুল ইসলাম আকন্দ, গাজীপুর
১৯ জুন ২০১৮, ১৯:৩৭আপডেট : ১৯ জুন ২০১৮, ২০:১৪

এই তরুণ-তরুণীরা শিশুপল্লী প্লাসে বড় হয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা ও চাকরি করছে

বাবা-মাকে কখনো দেখেননি। তাদের বাবা মা কে তাও জানেন না। কোনও উৎসব এলেই তারা চলে আসেন বাবা-মা ও ভাই বোনদের নিয়ে তা পালন করতে। এবার ঈদুল ফিতরও তারা অর্ধশতাধিক ভাইবোন একত্রে পালন করেছেন। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের টেংরা গ্রামের শিশুপল্লী প্লাসে গিয়ে দেখা গেছে, নানা সাজে নানা আয়োজনে তারা শিশুপল্লীর সীমানা জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ এসেছেন কর্মক্ষেত্র থেকে, আবার কেউ এসেছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে।

আবু সাঈদ (২৩) নামে এক যুবক বলেন,‘শৈশবকাল থেকেই তিনি শিশু পল্লীতে রয়েছেন। বেড়ে উঠেছেন এখানকার বাবা-মায়ের আদর স্নেহে। বড় হয়ে সক্ষমতা অর্জনের পর শিশুপল্লীর বাইরে শ্রীপুরের নয়নপুরে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করছেন।

মাসুম বিল্লাহ (২৫) বলেন, ছোটবেলা থেকে আসল বাবা-মাকে দেখিনি। যাদের স্নেহে ও লালন-পালনে বড় হয়েছি তাদেরই বাবা-মা বলে জানি। শুধু ঈদ নয়, যে কোনও উৎসবে তারা শিশুপল্লী প্লাসের বাবা-মায়ের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে চলে আসেন।

তাদের মতো এলিজা (২১), ছন্দা (২৭), সেলিনা (২২), শিরিন (২২), টিয়া (৩০), সুইটি(২৮), হাসনারাসহ (৩০) অনেকে ঈদ উৎসবে একত্রিত হয়েছেন। শুধু কর্মক্ষেত্রে যোগদান করা তরুণ তরুণীরাই নয়, তাদের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করছেন এমন কিশোর-কিশোরীরাও রয়েছেন।

চুমকি ঢাকার প্রিন্স মেডিক্যাল টেকনোলজি থেকে ফিজিওথেরাপিতে ডিপ্লোমা করছেন। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে বাবা-মা, ভাই-বোন কেউ নেই। কেউ দুনিয়াতে আছে বলেও জানা নেই। তবু যাদের লালন-পালনে বড় হয়েছি, যাদেরকে বাবা-মা, ভাই-বোন হিসেবে জেনেছি তাদের কাছে আসলে মনে হয় আমার সবাই আছে।’

বাপ্পী, হালিমা, নিপাসহ চারজন গাজীপুরের একটি প্রতিষ্ঠানে গ্রাফিক্স ডিজাইনারের ওপর পড়াশোনা করছেন। তারা বলেন, ‘আমরা অনেক ভাই-বোন। আমাদের অনেক বাবা-মা। আমাদের মানবিক মূল্যবোধ তৈরি করে দেওয়া ও পড়াশোনার করানোসহ এর খরচের যোগান দিয়েছে শিশুপল্লী প্লাস। এটিই আমাদের পরিচয়।’

জোস্না আক্তার বলেন,‘এবছর মোহাম্মদপুর উইমেন্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। আমার মতো শিশুপল্লী প্লাসের পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে উঠা অনেকেই চিকিৎসকসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছেন।

শিশুপল্লী প্লাসের মায়েদের সাথে ভাইবোনেরা

শিশুপল্লীর একজন মা মোসাম্মত পেয়ারা বেগম। তিনি ১৯৮১ সন থেকে এই প্রতিষ্ঠানে রয়েছেন। তখন তার বয়স ছিল ১৪ বছর। তখন থেকেই শিশুদের লালন পালন শুরু করছেন। বিয়ের পর তার এক ছেলে ও এক মেয়ে হয়েছে। এখনও এখানে আছেন। তিনি বলেন, ‘টাকার জন্য নয়, বেড়ে উঠা ছেলে-মেয়েদের ভালোবাসার টানে এখনও এখানে আছি।’

আরেক মা বিউটি বেগম বলেন,‘আমাদের একজন দুজন নয়। অনেক সন্তান রয়েছে। আমরা কেবল সুস্থ শিশুর মা নই। আমাদের অনেক প্রতিবন্ধী সন্তানও আছে। আমরা তাদের নিয়ে গর্ব করি। প্রতিবন্ধী সন্তানরাও আজ নানাভাবে প্রতিষ্ঠিত। তারা যখন কোনো উৎসবে আমাদের সঙ্গে একত্রিত হয় তখন বুকটা ভরে যায়।’

শিশু পল্লী প্লাসের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর প্রদীপ রোজারিও বলেন, ‘তিনিও এ প্রতিষ্ঠানে বাবা-মা ছাড়াই বড় হয়েছেন। আবার যোগ্যতা অর্জন করে এ প্রতিষ্ঠানেই চাকুরি করছেন। এ প্রতিষ্ঠান থেকে বেড়ে উঠে আবুল কালাম অ্যানেসথেসিস্ট হয়েছেন। বেশিরভাগ নারী শিশু সেবিকা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তারা সবাই বিভিন্ন উৎসবে শিশু পল্লীতে এসে জাকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানগুলো পালন করেন। বছরে কমপক্ষে একটি উৎসব তারা এখানে এসে পালন করেন। ১৯৯৩ সনের পর থেকে এ প্রতিষ্ঠানে অক্ষম পরিবারের শিশুদের সঙ্গে তাদের মাকেও রাখা হয়।

শিশুপল্লী প্লাসের প্রতিষ্ঠাতা ইংল্যান্ডের নাগরিক প্যাট্রিসিয়া কার। তিনি ছিলেন এয়ারহোস্টেস। পরে চাকরি ছেড়ে দিয়ে জীবনের পুরোটা সময় পার করছেন সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুদের নিয়ে। ১৯৮৯ সালে গাজীপুরের শ্রীপুরে প্রতিষ্ঠা করেন এ শিশু পল্লীটি। ব্যক্তিজীবনে নিঃসন্তান ও মমতাময়ী প্যট্রিসিয়া এখন শিশুপল্লীর সবার প্যাট মাম।

 

/জেবি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কান উৎসব ২০২৪১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিআই-এম ইন্ডিয়া জোট নয়, বিজেপির এজেন্ট: মমতা
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিআই-এম ইন্ডিয়া জোট নয়, বিজেপির এজেন্ট: মমতা
‘আমাদের জন্য যারা বেইমান, ভারতের তারা বন্ধু’
‘আমাদের জন্য যারা বেইমান, ভারতের তারা বন্ধু’
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী