X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাউন্টারে টিকিট নেই, কালোবাজারিদের উৎপাতে দুর্ভোগে যাত্রীরা

লিয়াকত আলী বাদল রংপুর
২১ জুন ২০১৮, ১৩:৪৯আপডেট : ২১ জুন ২০১৮, ১৩:৫০

কাউন্টারে টিকিট নেই, কালোবাজারিদের উৎপাতে দুর্ভোগে যাত্রীরা ঈদ শেষে বাড়ি থেকে কর্মস্থল ও নিজ নিজ ঠিকানায় ফিরছেন যাত্রীরা। রংপুরেও সড়কপথে যাত্রীদের চাপ। তবে রংপুর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী যাত্রীরা ঈদের পর নিজ কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। বিভিন্ন কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে, ২৫ বা ২৭ জুন পর্যন্ত কোনও টিকিট নেই। অথচ কাউন্টারের বাইরে প্রকাশ্যেই কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে টিকিট। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোনও নজরদারি না থাকায় বাসের টিকেট কাউন্টারগুলো চরম স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করেছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।  

বৃহস্পতিবার সরেজমিন রংপুর নগরীর কামারপাড়া এলাকার ঢাকা কোচ স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকাগামী টিকিটের জন্য যাত্রীরা এক কাউন্টার থেকে আরেক কাউন্টারে ঘুরেও কোথাও ২৫ জুন পর্যন্ত টিকিট পাচ্ছে না। কোথাও কোনও টিকিট নেই বলে জানানো হচ্ছে যাত্রীদের। অথচ কাউন্টারের বাইরে প্রকাশ্যেই কালোবাজারে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে আগমনী এক্সপ্রেস নামে বাসের দু’টি কাউন্টারে ঈদের একদিন পর থেকে আগামী ২৭জুন পর্যন্ত সব বাসের টিকিট বিক্রি বন্ধ রেখেছে ঈদের আগে থেকে। তারা তাদের নিজস্ব অফিসে পছন্দের ব্যক্তিদের কাছে টিকিট বিক্রি করে দেয়। যাত্রীদের অভিযোগ, এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ করার পরেও তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।  

রংপুর থেকে ঢাকা ও চট্রগ্রামগামী সবচেয়ে বেশি যাতায়াত করে হানিফ পরিবহন, এসআর ট্রাভেলস, শ্যামলী, নাবিল, আগমনী, এনাসহ বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির বাস। সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত হানিফ পরিবহনের অন্তত ২০ থেকে ৩০টি বাস ঢাকায় যায়। অথচ সেই বাস কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেছে ২৫ জুন পর্যন্ত কোনও টিকিট নেই। বিশেষ করে ২০ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত এ চারদিনের কোনও টিকিট নেই বলে কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে। এতগুলো টিকিট কবে থেকে বিক্রি শুরু করা হয়েছে জানতে চাইলে কোনও উত্তর জানা যায়নি।  এ ব্যাপারে হানিফ পরিবহনের ম্যানেজার বাপ্পির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, চাহিদার তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় টিকেট দেওয়া যাচ্ছে না।

কাউন্টারে টিকিট নেই, কালোবাজারিদের উৎপাতে দুর্ভোগে যাত্রীরা একইভাবে এসআর ট্রাভেলস কাউন্টারে গিয়েও দেখা গেছে একই দৃশ্য। সেখানেও ঢাকাগামী এসি কোচের ২৫ তারিখ পর্যন্ত সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানানো হচ্ছে। নন এসির টিকিটও নেই, থাকলেও একেবারে পেছনের ২-৩টি করে সিট আছে বলে জানান কাউন্টারে কর্মরত কর্মচারীরা। কবে থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে জানতে চাইলে ওই দুটো বাস কাউন্টারের কোনও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাই উত্তর দিতে পারেনি।

অন্যদিকে আগমনী এক্সপ্রেসের কাউন্টারে গিয়ে দায়িত্বশীল কাউকেই পাওয়া গেল না। তবে এক কর্মচারী জানালেন তাদের সেন্ট্রাল রোড এলাকার প্রধান কার্যালয়ে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। সেখানে কর্তব্যরত এক কর্মচারী জানান, ২৫ জুন পর্যন্ত তাদের ঢাকাগামী এসি গাড়িগুলোর সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। কবে বিক্রি শুরু হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বড় সাহেব রংপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী ও তার ছোট ভাই বর্তমান সভাপতি টিটু চৌধুরীর নির্দেশনা অনুযায়ী টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে।’ পরে তাদের দু’জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ফোন রিসিভ করেননি।

শ্যামলী ও নাবিল পরিবহনের টিকিট কাউন্টারে গিয়ে এসি টিকেট ২৫ জুন পর্যন্ত বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানানো হয়। তবে নন এসির ২-৪টি টিকেট আছে বলে জানালেন কাউন্টারে কর্মরত সালাম ও আরমান নামে দুই ব্যাক্তি। তবে এনা পরিবহনে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে ২৩ তারিখ পর্যন্ত টিকিট না থাকলেও ২৪ ও ২৫ তারিখের ৪-৫ টি করে টিকেট আছে। অথচ ২৫-৩০ জন যাত্রীকে বৃহস্পতি আর শুক্রবারের টিকিটের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

সরকারি চাকরিজীবী সানোয়ারা বেগম জানান, ‘বাবার বাড়িতে ঈদ করতে এসেছিলাম। মঙ্গলবার পর্যন্ত ছুটি নেওয়া ছিল। এখন পর্যন্ত টিকিট পাচ্ছি না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা জানান, ‘তার ২২ জুন ঢাকায় যাওয়া জরুরি প্রয়োজন। কিন্তু বলা হচ্ছে টিকিট নাকি নেই।’

কাউন্টারে টিকিট নেই, কালোবাজারিদের উৎপাতে দুর্ভোগে যাত্রীরা সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, খোদ রাজধানী ঢাকায় ঈদের অগ্রিম টিকেট কবে থেকে বিক্রি শুরু হবে তা ঘোষণা করা হয়। অথচ বিভাগীয় নগরী রংপুরে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু করার কোনও আগাম ঘোষণা না দিয়ে টিকিট উধাও হয়ে গেছে। এ ঘটনায় প্রশাসনের দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করেছেন তারা।

রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির সড়ক সম্পাদক মোতালেব হোসেন বাদল ৬০০ টাকার টিকিট ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে কালোবাজারে বিক্রি হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবার কাউন্টার ম্যানেজাররা একত্রিত হয়ে টিকিট কালবাজারে বিক্রি করেছেন। মালিক সমিতি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবে।’

এ ব্যাপারে রংপুর জেলা প্রশাসক এনামুল হাবিবের বলেন, ‘টিকিট বিক্রি নিয়ে এত নৈরাজ্য হয় সেটা আমার জানা নেই। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।’

অন্যদিকে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।  

 

/এসএসএ/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
কারাগার এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী
কারাগার এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী
তিন নম্বরে থেকে সুপার লিগে মোহামেডান
তিন নম্বরে থেকে সুপার লিগে মোহামেডান
মুখ থুবড়ে পড়েছে ইউক্রেনের অস্ত্র খাত
মুখ থুবড়ে পড়েছে ইউক্রেনের অস্ত্র খাত
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?