X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাদারীপুরে পরিকল্পিত আমবাগানে অমিত সম্ভাবনা

জহিরুল ইসলাম খান, মাদারীপুর
২৩ জুন ২০১৮, ১৭:০৬আপডেট : ২৩ জুন ২০১৮, ১৯:০৪





মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের আমবাগান
উপযুক্ত আবহাওয়া ও চাষ উপযোগী মাটি থাকলেও ৬-৭ বছর আগে মাদারীপুর জেলার কোথাও পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা আম বাগান ছিল না বললেই চলে। স্থানীয় লোকজন তাদের বসতবাড়ির আশপাশে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা গাছ থেকে পাওয়া আম দিয়ে প্রয়োজন মেটাতেন। বাড়তি চাহিদা মেটাতে উত্তরাঞ্চলের আমের ওপর নির্ভর করতেন তারা।তবে গত ৫-৭ বছর ধরে জেলার চার উপজেলায় গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশত পরিকল্পিত আমবাগান। এসব বাগান থেকে পাওয়া আম স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জেলার বাজারগুলোতেও পাঠানো হচ্ছে। পর্যাপ্ত তত্ত্বাবধান ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মাদারীপুরে আম চাষে আমিত সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাদারিপুরের সদর, রাজৈর, কালকিনি ও শিবচর এই চার উপজেলায় প্রায় ৫০টির মতো পরিকল্পিত আমবাগান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নে গিয়ে চোখে পড়ল বেশ কয়েকটি বাগান। ইউনিয়নের পূর্ব শ্রীনাথদি গ্রামের ব্যবসায়ী হাবি ঢালী ও তার স্ত্রী মিলে তিন বছর আগে ছয় বিঘা জমির ওপর মোট ৬৮০টি গাছের একটি আমের বাগান গড়ে তোলেন। সাত মাস আগে স্বামী হাবি ঢালী মারা যাওয়ার পর এই আম বাগানটিকে ঘিরে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন স্ত্রী রিক্তা বেগম ।

নিজ আমবাগানে রিক্তা বেগম

রিক্তা বেগম বলেন, ‘তিন বছর আগে স্বামীকে নিয়ে আম বাগান গড়ে তুলি। ছয় বিঘা জমির উপর বর্তমানে মোট ৬৮০টি গাছ রয়েছে। এবার অনেক ভালো ফলন হয়েছে। সাত মাস হলো স্বামী মারা গেছেন। এখন ছেলে মেয়েদের নিয়ে বেঁচে থাকতে এই আম বাগানই আমার ভরসা।’

ঘটমাঝি ইউনিয়নের তরুণ খামারী জয়নুল বিশ্বাস বলেন, ‘এলাকায় অনেকগুলো আমের বাগান গড়ে উঠেছে। আমার একটি বড় ঘের ও কৃষি খামার রয়েছে। এলাকার সালাম কাকার একটি আম বাগান দেখে আমিও পরিকল্পিতভাবে আম বাগান তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি লাভবান হবো।’

একইভাবে সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের গৈদি এলাকার কৃষক আব্দুস সালাম মুন্সী তার নিজ জমিতে গড়ে তুলেছেন একটি আমের বাগান। আব্দুস সালাম মুন্সী বলেন, ‘মাদারীপুরে সাধারণত ধান, পাট, সরিষা ও মশুরিসহ বিভিন্ন রবিশস্যের আবাদ হয়। তবে আমি কয়েক বিঘা জমিতে একটি আমের বাগান গড়ে তুলেছি। এই বাগান থেকে মাত্র ১৮ মাসেই ভালো ফলন পেয়েছি। বেশ লাভবান হয়েছি। আসা করছি আগামীতেও ভালো ফলন পাবো।’

আমবাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক আব্দুস সালাম

জেলা শহরের বাসিন্দা ঠিকাদার এসই জাসচু বলেন, ‘আমে ফরমালিন দেওয়া হয় জেনে জেলার মানুষজন বাইরের জেলা থেকে আসা আম কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। মাদারীপুরের বেশ কয়েকটি এলাকায় ছোট বড় আম বাগান গড়ে উঠেছে। এতে করে অনেকে আম বাগানে গিয়ে সরাসরি গাছ থেকে বিষমুক্ত আম কিনে আনতে পারেন।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাদারীপুরে কৃষি জমির বাইরে অনেক পতিত জমি রয়েছে। বিশেষ করে বসতবাড়ি ও রাস্তার আশপাশে। যেসব জায়গায় সাধারণত অন্যান্য ফসল হয় না সেখানে আমের বাগান করে জমি কাজে লাগানোর সংস্কৃতিক গড়ে উঠছে। বর্তমানে ব্যক্তিগতভাবে জেলার বিভিন্ন স্থানে যেসব আম বাগান গড়ে উঠেছে সেগুলোর বেশিরভাগই চারাগাছ পর্যায়ে। গাছগুলো বড় হলে আমের ফলন আরও বাড়বে।

এদিকে কৃষকদের পাশাপাশি, জেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের সীমানার মধ্যেও পরিকল্পিতভাবে আম বাগান গড়ে তোলা হচ্ছে। এমনকি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ও পেছনের অংশে এবং বাসভবনেও আমের বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। যেখান থেকে এবার অনেক আম পাওয়া গেছে।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পাশের আমবাগান

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মাদারীপুরে আম চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ৫-৬ বছর আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের অংশে যে আমবাগান তৈরি করা হয়েছিল তাতে ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পেছনের অংশে ও বাসভবনের ভেতরেও আমবাগান তৈরি করা হয়েছে। চাষি পর্যায়ে পরিকল্পিত আমবাগান তৈরির সংস্কৃতি গড়ে উঠলে এখানে আম উৎপাদন করে জেলার চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাইরেও বিক্রি করা সম্ভব।’

মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জিএমএ গফুর বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে আমবাগান তৈরি করে কৃষকরা তাদের পতিত ও ধানপাট চাষের অনুপযুক্ত জমি ব্যবহার করে লাভবান হতে পারেন। এ ব্যাপারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণসহ বিভিন্ন সহযোগিতাও করা হচ্ছে।’

বর্তমানে মাদারীপুরের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আম বাগান গড়ে তোলার বেশ আগ্রহ রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে তাদের পর্যাপ্ত জ্ঞান ও দক্ষতা নেই। তাই পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বাগানের মাধ্যমে আমচাষের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!