এক সময় দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে নীলফামারীর কৃষকরা। পাটের বদলে তারা অন্য ফসল চাষে বেশি আগ্রহী। গত অর্থবছরে পাটের ভরা মৌসুমে এ জেলায় তেমন একটা পাট ক্ষেত চোখে পড়েনি। পাট চাষে আগ্রহ হারানোর কারণ হিসেবে বাজারে পাটের ক্রমাগত দরপতনকে দায়ী করেছেন পাট চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের কৃষক এনতাজ আলী বলেন, ‘পাটের উৎপাদন খরচ বেশি, বীজ সংগ্রহে নানা জটিলতা এবং কোনও কোনও সময়ে খরা মৌসুমে পানির অভাবে পাট পঁচানো নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। এছাড়া অব্যাহত দরপতন তো আছেই। এজন্য পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে প্রান্তিক চাষিরা।’
‘৬০-এর দশকে দেশের খ্যাতনামা পাট ক্রয় কেন্দ্র ছিল নীলফামারীর ডিমলা ও জেলা শহরের শাখামাচা হাট। এখন পাট ক্রয়কেন্দ্রগুলো বেদখল হয়ে গেছে। এগুলো উদ্ধারে সরকারিভাবে নেই কোনও উদ্যোগ। ওই সময় সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রতিদিন শত শত টন পাট ক্রয় করা হতো। ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় কৃষকরাও ব্যাপকহারে পাট চাষ করতো। এখানকার পাট খুলনা,যশোরসহ বিভিন্ন এলাকার জুটমিলে নিয়ে যাওয়া হতো। তবে নানাবিধ সমস্যার কারণে এ এলাকার কৃষকেরা পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, গত অর্থবছরের পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে। অর্জিত হয়েছিল ৯ হাজার ১৬০ হেক্টর জমি। আর উৎপাদিত পাটের পরিমাণ ছিল ২০ হাজার ৬২৯ মেট্রিক টন। এবার জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, ১০ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে। তবে চাষ করা হয় ৯ হাজার ১৫৯ হেক্টর জমিতে। আর পাট উৎপাদিত হয়েছে ২০ হাজার ৫৩১ মেট্রিক টন।
সদর উপজেলার কচুকাটা ইউনিয়নের বামনাবাউনি গ্রামের রশিদুল ইসলাম (৪৫) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা এক সময় ব্যাপকহারে পাট চাষ করতাম। তখন পাটের ন্যায্য মূল্য পেতাম। বর্তমানে উৎপাদন খরচ বেশি, বাজার কমে যাওয়ায় পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। এর বদলে অন্যান্য ফসলের চাষ করে যথেষ্ট লাভবান হচ্ছি।’
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিগত বছরগুলোয় পাটের বাজারদর মন্দা থাকায় পাট চাষে চাষিদের আগ্রহ কমে গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবেশবান্ধব পাটের মোড়ক ব্যবহার করায় এখন পাটের বাজার দর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করায় প্রান্তিক পর্যায়ে চাষিদের পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা পাটের গুণগত মান উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করি পাটের বাজার মূল্যসহ সব রকমের সহযোগিতা সরকার করবে।