টাঙ্গাইলের বাসাইল পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের তিন প্রার্থীর মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ধারণা করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। তবে প্রচারণায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী এগিয়ে ছিল।
প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম আহমেদ, বিএনপির এনামুল করিম অটল ও কৃষক শ্রমিক জনতালীগের রাহাত হাসান টিপু।
২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো বাসাইল পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই ওই সময় নির্বাচনে বিজয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবর রহমান এবং মাত্র ১৯ ভোটের ব্যবধানে তার কাছে হেরে যান বিএনপি প্রার্থী এনামুল করিম অটল। এছাড়া তৃতীয় স্থানে ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতালীগের সভাপতি রাহাত হাসান টিপু এবং চতুর্থ স্থানে ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মশিউর রহমান খান আপেল।
ভোটাররা জানিয়েছেন, এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রয়েছে সুদৃঢ় অবস্থানে। আওয়ামী লীগ এবার অভ্যন্তরীণ কোন্দল কাটিয়ে জেলা পর্যায় থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সব নেতাকর্মীকে একাট্টা করে মাঠে নেমেছে।
তবে এবার বিএনপি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থীরাও রয়েছেন ভালো অবস্থানে। তাই সব মিলিয়ে এ নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
এ এলাকার একাধিক ভোটার জানান, বাসাইল এক সময় বিএনপির ঘাঁটি ছিল। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুর রহিম আহমেদ উপজেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তার নিজের একটা ভোটব্যাংকও রয়েছে। আর এ কারণেই তিনি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি এনামুল করিম অটল দীর্ঘদিন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি বাসাইল এমদাদ হামিদা ডিগ্রি কলেজের সাবেক ভিপি। গত নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে তিনি হেরে গেলেও এবার সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি অনেক ভোটের ব্যবধানে জয়ী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তবে নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে বিএনপির কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারকদের পক্ষ এনামুলকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ায় তিনি কিছুটা হতাশ হলেও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি। এ কারণে দল থেকে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি রাহাত হাসান টিপুকে জয়ী করতে মাঠে নেমেছেন কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম। তিনি তার জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
তবে সাধারণ ভোটাররা সন্ত্রাস, মাদক মুক্ত ও উন্নয়নশীল আধুনিক পৌরসভা গড়ার ব্যাপারে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিবেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচনি এলাকায় বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে এবং কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত তদারকি কর্মকর্তা ছাড়াও প্রতিটি কেন্দ্রে ২২ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ৫টি মোবাইল টিম, নির্বাহী ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ৪টি স্ট্রাইকিং টিম ও সাদা পোশাকধারী ফোর্স সারাক্ষণ দায়িত্ব পালন করবেন।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে এরইমধ্যে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
টাঙ্গাইল জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, ‘কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। আশা করছি বিগত বছরের মতো এবারের নির্বাচনও সুষ্ঠু এবং অবাধ হবে।’
এ নির্বাচনে মেয়র পদে ৩ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৭ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নির্বাচনে ১০টি কেন্দ্রে ৮ হাজার ৪৭৫ জন নারী, ৭ হাজার ৯২৫ জন পুরুষসহ মোট ১৬ হাজার ৪০০জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।