রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হয়েছে মঙ্গলবার। তবে আগে থেকে জানা থাকায় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতীক বরাদ্দের পরপরই পোস্টার-ব্যানার নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন তারা। তবে প্রচার শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই অভিযোগ করেছে বিএনপি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সুপরিকল্পিতভাবে কোনও জায়গা না রেখে পুরো শহর নৌকার পোস্টারে ছেয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। আওয়ামী লীগের এই ‘দখলের’ কারণে ধানের শীষের পোস্টার সাঁটানোর জায়গা পাচ্ছেন না বলে জানান বিএনপি নেতাকর্মীরা। তবে আওয়ামী লীগ বলছে, উৎসাহ-উদ্দীপনা না থাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা পোস্টার-ব্যানার লাগানোর জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না।
বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল থেকে তারা (আওয়ামী লীগের কর্মীরা) নগরীর প্রতিটি স্থান দখল করে দলীয় পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছে। অন্য দলের প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন টাঙানোর মতো কোনও জায়গা রাখেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন প্রার্থী যদি কোটি কোটি টাকা শুধু এই সব উপকরণের পেছনে খরচ করে তাহলে একটি নির্বাচন করতে সে কত টাকা ব্যয় করবে? এই ব্যয়ের টাকা মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরে সিটি করপোরেশন এলাকার উন্নয়ন প্রকল্প থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে তুলে নেবে, এর চেয়েও বেশি তুলবে। এতে করে করপোরেশন এলাকার উন্নয়নের চাকা থমকে যাবে। সরকার দলীয় মেয়র প্রার্থী সেই পন্থা অবলম্বন করছেন। একজন প্রার্থীকে চিনতে এত কিছু দরকার হয় না। আর ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টার এবং নির্যাতন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোট পাওয়া যায় না।’
বিএনপি’র এই অভিযোগের জবাব রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীরা নিয়মনীতি মেনে পোস্টার টানিয়েছে। তারা পরিশ্রম করে সুশৃঙ্খলভাবে নগরী পোস্টারে ছেয়ে দিয়েছে। আর বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সে উৎসাহ-উদ্দীপনা নেই। তারা শুধু অভিযোগ করতেই জানে। ভোট উৎসবের পরিবেশটা তারা তেমন বোঝে না। আর বুঝবে কেমন করে। তাদের ভেতরে তো দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। এতে করে নেতাকর্মীরা মাঠে নামেনি। আর আমাদের দলের নৌকা প্রতীকে সবাই ঐক্যবদ্ধ। তাই আমাদের প্রার্থীর পোস্টার দেখা যাবে না তো তাদের পোস্টার চোখে পড়বে?’
এর আগে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাসিকের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মঙ্গলবার নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণার সময় বলেছেন, সদ্য সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত ফরম অনুযায়ী, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নগরীর নিউমার্কেট গৌরহাঙ্গা এলাকার বিকল্প অফসেট প্রেসে নৌকা প্রতীকের দেড় লাখ পোস্টার, এক লাখ লিফলেট এবং ১৫ লাখ হ্যান্ডবিল ছাপবেন। অন্যদিকে বুলবুল ধানের শীষের প্রতীকে ছাপাবেন ৬০ হাজার পোস্টার, এক লাখ লিফলেট এবং ৩ লাখ হ্যান্ডবিল। নগর ভবন সংলগ্ন গৌরহাঙ্গা এলাকার প্রভাত প্রিন্টিং প্রেস অ্যান্ড পাকলিকেশন এগুলো ছাপাবে।
হলফনামায় জানানো হয়েছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ১৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা করে ব্যয় করবেন। লিটন খরচ করবেন নিজের তহবিল থেকে। বুলবুল কিছু ব্যয় করবেন নিজের তহবিল থেকে, আর কিছু টাকা পাবেন বিভিন্ন জনের কাছ থেকে। মেয়র পদের পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে প্রধান দুই দলের দুই প্রার্থীর নির্বাচনি ব্যয় অন্য তিনজনের চেয়ে তিনগুণ হবে। নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা নির্বাচনি ব্যয়ের ফরমে উল্লিখিত বিবরণী থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এবার নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামা, আয়কর রিটার্ন তথ্য ও ফরম বিবরণী থেকে জানা গেছে, ২০০৮ সালের আগস্টে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বার্ষিক আয় ছিল ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। ২০১৩ সালে লিটনের বার্ষিক আয় ছিল ৫৮ লাখ ৭৫ হাজার ৭৭২ টাকা। এবার লিটনের বার্ষিক আয় দাঁড়িয়েছে ৪২ লাখ ৪৫ হাজার ২২৮ টাকা। নিজের কাছে নগদ মাত্র ৩০ হাজার, স্ত্রীর নামে ২০ হাজার ও নির্ভরশীলদের নামে মাত্র ৫ হাজার টাকা রয়েছে। এছাড়া লিটনের নামে ব্যাংকে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৩ হাজার ৪০৮ টাকা, স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে ৫৭ লাখ ৩৩ হাজার এবং নির্ভরশীলদের ব্যাংক হিসাবে ২৩ লাখ ২৯ হাজার টাকা জমা রয়েছে। হলফনামায় লিটন জানিয়েছেন, এবার সম্ভাব্য নির্বাচনি ব্যয় ১৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিজের তহবিল থেকেই খরচ করবেন।
সম্পদ ও আয়ে লিটনের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সমপরিমাণ নির্বাচনি ব্যয় করবেন। বুলবুল ১৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয় করবেন বলে সম্ভাব্য ব্যয় খাতে উল্লেখ করেছেন। তবে বুলবুল নিজের তহবিল থেকে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয় করবেন। বাকি ১০ লাখের মধ্যে স্ত্রীর ভাই বজলুর রহমান ৫ লাখ ও জনৈক জাফর ইমাম ৫ লাখ টাকা দেবেন বুলবুলকে। তার এবারের বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ২৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। নিজের কাছে ৪২ লাখ ৩০ হাজার ৭৫৮ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৮০০ টাকা নগদ রয়েছে। স্ত্রীর নামে না থাকলেও বুলবুলের নামে ব্যাংকে জমা দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬১২ টাকা। ২০০৮ সালে ছিল ১ লাখ ৬৮ হাজার এবং ২০১৩ সালে ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা বার্ষিক আয় করেছিলেন বুলবুল।
আরও পড়ুন- তিন সিটিতে ভোট: প্রতীক নিয়েই ভোটারদের কাছে প্রার্থীরা