বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনের প্রচারণা গত মঙ্গলবার (১০ জুলাই) অনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার পর থেকে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে বুধবার (১১ জুলাই) ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যেতে দেখা গেছে প্রার্থীদের। এখনও নির্বাচনি ইস্তেহার ঘোষণা না করলেও, নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। আর নির্বাচনি প্রচারণায় বৈষ্যমের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মেয়ার প্রার্থী এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার।
নৌকার মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এখনও পর্যন্ত নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেননি। তবে তিনি আগামী ১৭ জুলাই ইশতেহার ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন। নির্বাচনি ইশতেহার না ঘোষণা করলেও প্রচারণা থেমে নেই সেরনিয়াবাতের। গতকাল বুধবার নগরীর ফ্লাট রোর্ড, কালিবাড়ি রোর্ড, সদর রোর্ডসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচারণা চালান তিনি। এসময় নগরীর উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী।
প্রচারণার দ্বিতীয় দিনে বুধবার বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও ধানের শীষের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারও প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পর করছেন। নগরীর জেল গেট এলাকা থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেন তিনি। এছাড়া সদর রোর্ড, কাওনিয়া ও আলেকান্দা এলাকায় প্রচারণা চালান বিএনপির এই প্রার্থী। এসময় তিনি বলেন, ‘যতই বাধা-বিপত্তি আসুক না কেন জণগনের ভোটের অধিকারের জন্য বিএনপি সিটি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে। আমি আশা করি সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে।’
সংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জাবাবে সারোয়ার বলেন,‘নির্বাচন কমিশন নির্বাচনি আচরণ বিধিতে ধানের শীষের প্রার্থীর সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। প্রচারের প্রথম দিন দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে গণসংযোগ শুরু করলে কোতোয়ালি থানা পুলিশ আমাদের বাধা দেয়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের সমর্থনে প্রতি ওয়ার্ডে রাতে জ্যাম করে মিছিল করলেও সেখানে প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পিতা মন্ত্রীর মর্যাদায় থাকা এবং স্থানীয় সরকার বিষয়ক সংসদীয় কমিটির নেতা হয়েও নগরীতে অবস্থান করে প্রভাব বিস্তার ও প্রচারণা চালাচ্ছেন।’ এসব ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মুজিবুর রহমান বিএনপি প্রার্থীর কাছ থেকে অভিযোগপত্র পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এসব বিষয়ে অভিযুক্তদের সতর্ক করা হয়েছে। প্রত্যেকটি দলকে নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে চলতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
বুধবার (১১ জুলাই) দুপুরে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) মনোনীত প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস নগরীর পোট রোর্ড রসুলপুর কলোনী, কলাপট্রি, আইডিয়াল কলেজ, নিউ সদরঘাট সড়কে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগ করেন। এসময় তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সিটি নির্বাচন পরিচালনা করবেন। কেউ জোরপূর্বক ভোটাধিকার হরণের চেষ্টা করলে জাতীয় পার্টি তাকে ছেড়ে কথা বলবে না।’
এদিকে ইকবাল হোসেন তাপসের মুখপাত্র কেন্দ্রীয় জাপা ভাইস চেয়ারম্যান ও বরিশাল জেলা আহ্বায়ক অধ্যাপক মহসিন-উল-ইসলাম হাবুল বলেন, ‘আগামী ১৪ই জুলাই জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচনি ইস্তেহার ঘোষণা করবেন ।’ তিনি বলেন, ‘এই সিটিতে জাতীয় পার্টির ৩৫-৪০ হাজার ভোট রয়েছে। তারা এখানে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বী।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী ওবাইদুর রহমান মাহবুব ১৬ দফার নির্বাচনি ইশতেহার প্রকাশ করেছেন। সেখানে নগরীকে দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত করার বিষয় উল্লেখ করেছেন তিনি। হাতপাখা’র প্রার্থী ওবাইদুর রহমান তার অনুসারী, ভক্ত ও সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে বুধবার সকালে নগরীর সাগরদী, রুপাতলী ও আশপাশের এলাকায় গণসংযোগ করেন।
সিটি নির্বাচনে বাসদের মেয়র প্রার্থী ডা. মনিষা চক্রবর্তী বুধবার সকাল থেকে নগরীর চক বাজার, ফলপট্টি, গির্জামহল্লা, ফজলুল হক অ্যাভিনিউ, ফকিরবাড়ি সড়কে গণসংযোগ করেছেন।
এদিকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও কাস্তে-হাতুড়ীর প্রার্থী একে আজাদ নেতাকর্মীদের সঙ্গে লাল পতাকা নিয়ে নগরীতে প্রচারণা মিছিল এবং গণসংযোগ করেন।
সিটি নির্বাচনে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের সাধারণ ও সংরক্ষিত নতুন ও পুরাতন কাউন্সিলর প্রার্থীরাও নিজ এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনার জন্য নেমে পড়েছেন।
গত মঙ্গলবার (১০ জুলাই) প্রার্থীদের মাঝে প্রতিক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু হয়। ওই দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিন জন সাধারণ ওয়ার্ড এবং একজন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। বাকি ২৭ সাধারণ ওয়ার্ডে ৯৪ জন এবং মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত নয়টি ওয়ার্ডে ৩৫ জন কাউন্সিলর এবং ছয় মেয়র প্রার্থী শুরু করেন নির্বাচনি প্রচরণা।
নির্বাচন কমিশন বিধিমালা অনুযায়ী প্রচারণার ক্ষেত্রে প্রার্থীরা দিনভর গণসংযোগ চালাতে পারলেও প্রচারে মাইক ব্যবহার করতে পারবেন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।