X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘ভাঙতে ভাঙতে গাঙ আইছে ঘরও, এলা হইরা যাইবার ঠাঁই নাই’

হিমাদ্রি শেখর ভদ্র, সুনামগঞ্জ
১৪ জুলাই ২০১৮, ০৭:৫৭আপডেট : ১৪ জুলাই ২০১৮, ০৭:৫৭

‘ভাঙতে ভাঙতে গাঙ আইছে ঘরও, এলা হইরা যাইবার ঠাঁই নাই’ নদী ভাঙনের আতঙ্কে দিন কাটছে সুনামগঞ্জের আমানীপুর বর্মণপাড়া গ্রামের ৩০টি পরিবারের। প্রতি সপ্তাহেই সেখানে ভাঙছে নদী, ভাঙছে বসতঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। নদী গ্রাম কমিটির সভাপতি ওই গ্রামের বাসিন্দা জয় মোহন বর্মণ বলেন, ‘ভাঙতে ভাঙতে গাঙ আইছে ঘরও। এলা হইরা যাইবার কোনও ঠাঁই নাই।’ ( নদী ভাঙতে ভাঙতে ঘরে চলে আসছে, এখন কোথাও সরে যাওয়ার জায়গা নেই)।
জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নের আমানীপুর বর্মণপাড়া গ্রাম বৌলাই নদীর তীরে অবস্থিত। আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন ধনু নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাস শুরু করেন। গত তিন বছর ধরে নদী ভাঙনের কারণে বর্মণপাড়ার লোকজনের বেশকিছু বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে ভাঙন কম থাকলেও বর্ষাকালে এর তীব্রতা বেড়ে যায়। বিশেষ করে ঝড়বৃষ্টিতে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতাও বেড়ে যায়।
গত সপ্তাহে বর্মণপাড়া গ্রামের গৌরাঙ্গ বর্মণ, মহেন্দ্র বর্মণ, জয়মোহন বর্মণ, সুধাংশু বর্মণ ও ঝনঞ্জুলি বর্মণের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আকস্মিক নদী ভাঙনে তাদের পাড়ার তিনটি বসতঘর ও একটি ধানের মাচা ও ২৫ মণ ধানসহ নদীতে চলে গেছে। ‘ভাঙতে ভাঙতে গাঙ আইছে ঘরও, এলা হইরা যাইবার ঠাঁই নাই’
বর্মণপাড়ায় ৩০টি জেলে সম্প্রদায়ের পরিবার বসবাস করে। লোক সংখ্যা দেড় শতাধিক। এ গ্রামের দুজন শিক্ষার্থী হাইস্কুলে ও ১১ জন শিক্ষার্থী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। অবস্থানগত কারণে জামালগঞ্জ উপজেলার নেত্রকোনা জেলার সীমান্তবর্তী বর্মণপাড়ায় যেতে জেলা সদর থেকে ৫/৬ ঘণ্টা সময় লাগে। তাই এখানে কেউ যেতে হলে যোগাযোগ বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়।
গ্রামের পূর্ব দিকে পুটিয়ার হাওর ও পশ্চিম দিকে ধনু নদী বয়ে গেছে। সম্প্রতি নদী ভাঙনের ফলে সঞ্চিত বর্মণ, ঝনঞ্জুলী বর্মণ ও গিরিন্দ্র বর্মণের বসতঘর নদীতে চলে গেছে। তাই তারা গ্রামের বড়োহাটি এলাকায় ভেঙে যাওয়া ঘর দিয়ে ডেরা তৈরি করে বসবাস করছেন।
বর্মণপাড়া গ্রামের গৌরাঙ্গ বর্মণ জানান, বৌলাই নদীর ভাঙনে বেশ কয়েকটি পরিবার গ্রাম ছেড়ে কাজের সন্ধানে ঢাকায় চলে গেছে। এভাবে নদী ভাঙতে থাকলে একটিও বসতঘর থাকবে না।
গ্রামের বাসিন্দা মহেন্দ্র বর্মণ জানান, মাছ ধরা ছাড়া তাদের আর কোনও কাজ জানা নেই। সারাদিন মাছ ধরে যে টাকা রোজগার হয় তা দিয়ে সংসারের খরচ চলে না। জায়গা জমি কেনার সামর্থ্যও তাদের নেই। তাই সরকারি জায়গায় পুনর্বাসনের দাবি করেন তিনি।
‘ভাঙতে ভাঙতে গাঙ আইছে ঘরও, এলা হইরা যাইবার ঠাঁই নাই’ আরেক বাসিন্দা জয়চরণ বর্মণ জানান, গ্রামের যারা বসবাস করেন তারা কেউ স্বচ্ছল পরিবারের নন। সবাই দিন আনে দিন খায়। নদী ভাঙনের ফলে কোথাও যে সরে যাবে সে সামর্থ্য ও আর্থিক সঙ্গতি তাদের নেই।
ফেনারবাঁক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু তালুকদার বলেন, ‘ভাঙন কবলিত এলাকা আমি বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করেছি। নদী ভাঙনের ফলে বর্মণপাড়া এলাকায় মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙতে ভাঙতে তাদের ঘরে চলে এসেছে। এখন আর কোথাও সরে যাওয়ার কোনও জায়গা নেই বর্মণপাড়ার বাসিন্দাদের। তাই দ্রুত তাদের পুনর্বাসন করা দরকার।’
জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান বলেন, ‘নদী ভাঙনের শিকার গ্রামটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে গ্রামবাসীর খোঁজখবর নিয়েছি। তাদেরকে সরকারি জায়গায় পুনর্বাসনের জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সবার সহযোগিতা পেলে নদী ভাঙনের শিকার গ্রামবাসীকে দ্রুত পুনর্বাসন করা যাবে।’

/এআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক