X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে অবাধে চলছে কাঠ পাচার ও বন্যপ্রাণী শিকার

আবুল হাসান, মোংলা
১৫ জুলাই ২০১৮, ১২:১০আপডেট : ১৫ জুলাই ২০১৮, ১৬:৪৪

সুন্দরবনের ভেতরে খালে মাছ ধরছেন জেলেরা সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে মাছ ধরার নামে জেলে নামধারী দুর্বৃত্ত চক্র অবাধে কাঠ পাচার ও বন্যপ্রাণী শিকার করছে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, এ চক্রের সদস্যরা সুন্দরবনের বিভিন্ন স্টেশন থেকে জেলে পরিচয়ে সাদা মাছ ধরার অনুমতি নিয়ে বনের গহীনে অভয়ারাণ্যগুলোয় প্রবেশ করে। এরপর তারা মাছ ধরার পাশাপাশি কাঠ ও বন্যপ্রাণী পাচার করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মহাজন ব্যবসায়ীরা মাসিক চুক্তিতে বন বিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসনের লোকদের ম্যানেজ করে বনের অনেক ভেতরে যায়। এসব মাছ ব্যবসায়ীরা বনদস্যুদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের অবৈধ ব্যবসায়ী চালিয়ে যাচ্ছেন।

সুন্দরবনের ভেতরে খালে মাছ ধরছেন জেলেরা স্থানীয় ব্যবসায়ী শাজাহান চৌধুরী মনা জানান, বনবিভাগের বিভিন্ন স্টেশন থেকে জেলে পরিচয়ে সাদা মাছ ধরার অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে মাছ ধরেন অন্তত এক হাজার জেলে মহাজন। এদের অর্ধেকের বেশি মহাজন বনবিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বনের নিষিদ্ধ এলাকায় মাছ শিকার করেন। একইসঙ্গে তারা বনদস্যুদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অবৈধ ব্যবসার সহযোগিতাও করেন।

এ প্রসঙ্গে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের (মোংলা সদর দফতর) জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মিনারুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুন্দরবনে জলদস্যুরা এমনি এমনিতো টিকে থাকতে পারে না, ওদের (দস্যু) বাজারসহ সবরকম প্রয়োজনীয় দ্রব্য সাপ্লাই (সরবরাহ) দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে যারা সাপ্লাই দেয় তাদের আমরা প্রায় অভিযান চালিয়ে ধরি।’

সুন্দরবনের ভেতরে খালে মাছ ধরছেন জেলেরা এদিকে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের মরাপশুর, জোংরা, ঢাংমারি, ঝাপসি ও ভদ্রা এবং সাতক্ষীরা ও শরণখোলা রেঞ্জের নীলকোমল, কোকিলমনি, কাগা দোবেকি, পুষ্পকাটি, নোটাবেকি এলাকার কয়েকটি খালে অসাধু জেলে-মহাজনরা মাছ শিকার করেন।

ব্যবসায়ী মনা, মতিয়ার ও জুলফিকার জানান, সাতক্ষীরার নলিয়ান এলাকার ব্যবসায়ী আইয়ুব মোল্লা, কুদ্দুস মোল্লা, খুলনার ঢাংমারীর শহিদ, মুন্না ও রেক্সোনা, দাকোপ উপজেলার মহাসিন ও ইয়াছিন এবং মোংলা উপজেলার চিলা এলাকার মজিবর, আলমগীর, পাকখালী গ্রামের লুক বাড়ই সুন্দরবনের জোংড়া এবং মরাপশুর ফরেস্ট ক্যাম্পের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই নিষিদ্ধ খালে মাছ শিকার করে থাকেন।

তবে দাকোপ উপজেলার মহাসিন ও ইয়াছিনের দাবি,  ‘আমরা সুন্দরবনের কাঁকড়া মারি (ধরি)। এজন্য বনবিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে যাই। তবে নিষিদ্ধ খালে মাছ শিকার করি না। আর বনদস্যুদের সঙ্গে আমাদের কোনও যোগাযোগ নাই।’

এদিকে গত বছরের নভেম্বরে দস্যুদের সঙ্গে সম্পৃক্তার অভিযোগে মহাসিন ও ইয়াছিনের দিগরাজের কাঁকড়ার আড়তে অভিযান চালায় র‌্যাব। তবে তাদের কাউকে র‌্যাব সেখানে পায়নি।

সুন্দরবনের ভেতরের খাল তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের জোংড়া ক্যাম্প ইনচার্জ আব্দুল হাই ও মরাপশুর ক্যাম্প ইনচার্জ শাহাদাৎ হোসেন। তারা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এ দুই রেঞ্জের নিষিদ্ধ খালে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ রয়েছে। তাই এখানে ঢুকে মাছ শিকার করা প্রশ্নই আসে না।

তবে শাহাদাৎ হোসেনের দাবি, তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অসাধু জেলেরা মাছ শিকার করলে তো কিছু করার নেই।

সুন্দরবনের ভেতরের খালে মাছ ধরছেন জেলেরা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেতনভুক্ত শ্রমজীবী জেলেরা জানান, নিষিদ্ধ এলাকার খালে সহজে মাছ শিকার করা সম্ভব। এজন্য ব্যবসায়ীরা সুন্দরবনের সংরক্ষিত ওইসব খালে মাছ ধরতে বনবিভাগের সঙ্গে আলাদা চুক্তি করে থাকেন।

তারা আরও জানান, মাছ ধরতে গোন মুখে ১৫ দিনে গহীন বনে অবস্থান করার সময় হাজার হাজার জেলের জ্বালানি কাঠ বন থেকেই সংগ্রহ করতে হয়। এছাড়া তারা অভয়ারণ্য থেকে প্রতিনিয়ত হরিণ শিকার করে থাকেন বলে জানা গেছে। মাছ ব্যবসায়ীরা মাছ বহনের কাজে ব্যবহৃত ট্রলারে করে এসব হরিণের মাংস এবং চামড়া পাচার করে থাকেন বলেও জানান তারা।

সুন্দরবনের ভেতরে বনরক্ষীরা এ প্রসঙ্গে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহীন কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাদা মাছের পাস নিয়ে সাধারণ জেলেরা বনের ভেতরে কয়েকটি খালে প্রবেশ করে বলে জানি। তবে অভয়ারণ্যে প্রবেশ করে মাছ শিকারের খবর আমার জানা নেই। এসব জেলেদের মহাজন বা নিয়ন্ত্রক কারা সে তথ্যও জানা নেই।

তিনি আরও বলেন, এ রেঞ্জের অধীন মরাপশুর ও জোংড়া এলাকায় ১৮টি খালকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোন জেলে মাছ শিকার করে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বন আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সুন্দরবনের ভেতরে বনরক্ষীরা এক প্রশ্নের তিনি বলেন, ‘বনের গহীনসহ অভয়ারণ্য এলাকায় যাতায়াতকারী নৌযানে বন রক্ষীরা নিয়মিত তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছেন যাতে অবৈধ পন্থায় কেউ মাছ বা বন্য প্রাণী শিকার করতে না পারে।’

সুন্দরবনের খুলনা বিভাগের বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে এলাকায় জেলেদের কর্মকাণ্ডের তথ্য জানা নেই। যদি এ ধরনের অপকর্ম কেউ করে কিংবা বন বিভাগের কেউ জড়িত থাকে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

 

 

/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশ সফরে জিম্বাবুয়ে দলে কিংবদন্তির ছেলে
বাংলাদেশ সফরে জিম্বাবুয়ে দলে কিংবদন্তির ছেলে
রাফাহ শহরে আবারও অভিযান চালাবে  ইসরায়েল?
রাফাহ শহরে আবারও অভিযান চালাবে ইসরায়েল?
রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে স্মরণ
রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে স্মরণ
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা