X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভালো নেই সুনামগঞ্জের কৃষকরা

হিমাদ্রি শেখর ভদ্র, সুনামগঞ্জ
১৫ জুলাই ২০১৮, ১২:৪২আপডেট : ১৫ জুলাই ২০১৮, ১৩:৩৪

সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার কৃষক ও তাদের বাড়িঘর গত দুই বছর অতিবৃষ্টি আর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হন সুনামগঞ্জের কৃষকরা। এ বছর আবাদ ফসলের তেমন ক্ষতি না হলেও, গত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নাজেহাল অবস্থা কৃষকদের। ঋণ পরিশোধ আর দুই বছরের ঘটতি পূরণ করে কৃষকদের হাত এখন অনেকটাই ফাঁকা। স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এমন অবস্থার কথা জানা গেছে।

জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার পাকনার হাওর তীরবর্তী ফেনারবাঁক গ্রামের প্রান্তিক কৃষক নজরুল কাদের চৌধুরী।কথা হয় তার সঙ্গে। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘গত দুবছর আমারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখিন হয়েছি। ঋণ করে চলতে হয়েছে। গতবারের দেনা এইবার পরিশোধ করছি। ঋণ দিয়ে হাতে কোনও টাকা পয়সা নেই।’

সুনামগঞ্জের হাওর এলাকা
একই গ্রামের বর্গাচাষি মো. শাহিন চৌধুরী বলেন, ‘এক বছর ফসল নষ্ট হয়ে গেলে তিন বছর লাগে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে। পরপর দুই বছর ফসল নষ্ট হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কমপক্ষে পাঁচ বছরসময় লাগবে। পর পর দুইবার ফসল মরে যাওয়ায় মানুষ গরু-বাছুর, ক্ষেতজমি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করেছেন। এ বছর চাষ করার সময় মানুষের হাতে টাকা পয়সা ছিল না। ষোল আনা ধার করা টাকা দিয়ে চাষ করতে হয়েছে।এ জন্য আমরা বেশ অভাবে আছি।’
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর নেচারাল রিসোর্স স্টাডির (সিএনআরএস ) কর্মকর্তা মো. জুলফিকার চৌধুরী রানা বলেন, ‘হাওরবাসী প্রতিবারই প্রাকৃতিক র্দুযোগ মোকাবেলা করে থাকেন। এ বছর আগাম বন্যায় ফসল নষ্ট না হলেও, বৈশাখের শেষ দিকে অতিবৃষ্টির কারণে কিছু ফসল নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া পাকনার হাওরের জলাবদ্ধতার কারণে কৃষক ধান সঠিক সময়ে রোপণ করতে পারেননি। একারণে তারা কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।’

সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার শিশুরা
তাহিরপুর উপজেলার মানিগাঁও গ্রামের জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এবার ধান লাগানোর সময় মানুষের খুব অভাব গেছে। সবাই ধার দেনা ও হাওলাত বরাত করে জমিতে ধান লাগিয়েছেন। এ বছর যে টাকা আয় হইছে তা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে।’
তাহিরপুরের ফেনারবাঁক গ্রামের গৃহিনী কবি আক্তার বলেন, ‘তার স্বামী সুদে মহাজনী ঋণ নিয়ে জমিতে ধান ফলিয়ে ছিলেন। গেলবারের ঋণের টাকা মহাজনকে পরিশোধ করতে পারেননি। এ বছর ধান বিক্রি করে গেলবারের ঋণ আর এবারের ঋণসহ দেনা পরিশোধ করেছেন। তাই ঘরে কোনও ধান নেই।’

সুনামগঞ্জ হাওরের ধারে কৃষকদের বাড়িঘর
হাওর অ্যাডভোকেসি প্লাটফর্ম (হ্যাপ) এর যুগ্ম আহ্বায়ক শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘হাওর এলাকা বাংলাদেশের একটি ভিন্ন বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এলাকা। দেশের অন্য যে কোনও এলাকার সঙ্গে এর অর্থনীতি ও জীবনাচার মিলবে না। গোটা হাওর এলাকায় একটি মাত্র ফসল হয়। বছরের ছয় থেকে সাত মাস সময় জলমগ্ন থাকে। এখানে ধান চাষের পাশাপাশি মাছ চাষের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। ঋণের বেড়াজাল থেকে কৃষকদের মুক্ত করতে হলে আগামী বোরো মওসুমে তাদেরকে সহজ শর্তে কৃষিঋণ দিতে হবে। না হলে ঋণ চক্রের বেড়াজাল থেকে বের হওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।’

 

 

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!