X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজশাহীতে নারী ভোটাররা বাসাবাড়িতে গ্যাস চান

রাজশাহী প্রতিনিধি
১৬ জুলাই ২০১৮, ১৫:১৪আপডেট : ১৬ জুলাই ২০১৮, ১৬:০৫

মেয়র প্রার্থীদের কাছে নারী ভোটাররা তাদের দাবি জানাচ্ছেন ২০০৮ ও ২০১৩ সালের রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে গ্যাস ছিল সবচেয়ে আলোচিত নির্বাচনি ইস্যু। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনেও আলোচিত না হলেও গ্যাস ইস্যু থাকছে। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন। আর তাদের কাছে পেয়ে নারী ভোটাররা সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের পাশাপাশি বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগের কথা তুলে ধরছেন। সেই সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশক নিধন, রাস্তাঘাট সংস্কারও চান নারী ভোটাররা। তাদের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিয়ে এবারও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা।

নগরীর পঞ্চবটির গৃহিণী পারভিন আক্তার বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কিছু কিছু বাড়ি ছাড়া বেশিরভাগ বাড়িতেই গ্যাস সংযোগ নেই। রান্নার কাজে আমাদের গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হয়। অনেক দাম দিয়ে সিলিন্ডার কিনতে হয়। তাই প্রতিটি বাড়িতে গ্যাস সংযোগ চাই এবং সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রত্যাশা করি।

নগরীর তালাইমারির কেয়া খাতুন বলেন, ‘এলাকায় এতো মশা। বৃদ্ধ থেকে শুরু করে শিশুরা পর্যন্ত মশার কামড়ে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। সিটি করপোরেশনকে কখনোই মশার ওষুধ দিতে দেখা যায় না। রাজশাহী ক্লিন সিটির যে উদ্যোগ ছিল তা সম্পন্ন করার পাশাপাশি আমার প্রত্যাশা করি পুরো নগরীর মশা নির্মূল হোক। সেই সঙ্গে রাজশাহীতে মাদকের যে প্রসার, মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়েও এর প্রভাব ঠেকানো যাচ্ছে না। স্কুলে পর্যন্ত বাচ্চারা মাদক সেবন করছে। স্কুলে বাচ্চাকে পাঠাতে ভয় পাই। তাই মাদকবিরোধী অভিযান আরও জোরদার করার প্রত্যাশা রাখি।

নগরীতে নতুন করে গ্যাস সংযোগের ব্যাপারে কেয়া খাতুন বলেন, গ্যাস সংযোগ অনেক আগে দেওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনও বেশিরভাগ বাড়িতে সংযোগ নেই। তাই স্বল্প খরচে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। পরের নির্বাচনে যেন গ্যাস নিয়ে রাজশাহীবাসী অভিযোগ তুলতে না পারে, যিনি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হবেন, তিনি যেন এ কাজটি সবার আগে করেন।

নগরীর কাজলার আয়শা বলেন, ‘গরম যখন বেশি পড়ে বিদ্যুৎ তখন বারবার চলে যায়। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ ও সব বাড়িতে গ্যাস সংযোগ প্রত্যাশা করি। সেই সঙ্গে এলাকার রাস্তা মেরামত করা প্রয়োজন। রাস্তার পাশের ড্রেনগুলোতে শুধু বাড়িতে ঢুকার পথেই স্লাব দেওয়া হয়। বাকি জায়গায় ড্রেনের ওপর কোনও স্লাব নেই। এটা খুবই বিপজ্জনক।

নগরীর রানীনগর সাধুর মোড় এলাকার সাইদা বেগম জানান, ২০১৫ সালের ২০ জুন বাড়িতে গ্যাস সংযোগ নেওয়ার জন্য তিনি সিটি করপোরেশনে ৪ হাজার ৯১৪ টাকা জমা দিয়েছিলেন। তার আগে ২২ মে গ্যাস কোম্পানিকে দিয়েছিলেন ২১ হাজার ৩৭৫ টাকা। রান্নাঘরের চুলা পর্যন্ত গ্যাসের পাইপ নিয়ে যেতে ঠিকাদারকে দিয়েছিলেন ১২ হাজার ৮০৬ টাকা। কিন্তু গ্যাস তিনি পাননি। তার মতো বহু মানুষ টাকা জমা দিয়ে বছরের পর বছর গ্যাসের জন্য অপেক্ষা করছেন।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে এবার পাঁচজন মেয়র প্রার্থী লড়াই করছেন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নির্বাচনি ইশতেহার প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে গ্যাসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নারী উন্নয়নের কথাও তিনি বলেছেন। তবে অন্য প্রার্থীরা ইশতেহার প্রকাশ না করলেও গণসংযোগ করার সময় নারীদের গ্যাসসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘রাজশাহীর জন্য গ্যাস এনেছিলাম। অনেক বাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আর যারা আবেদন করেছেন, যারা পাননি, আমি মেয়র নির্বাচিত হলে সেসব ঘরেও গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে।’

অপরদিকে ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘আমি জয়ী হলে নারীদের জন্য পাইপ লাইনে গ্যাস সংযোগ বৃদ্ধি করবো। তবে যে সরকারই থাকুক ওই সময় রাজশাহীর উন্নয়নের জন্য নির্বাচিত মেয়রকে সহযোগিতা করতে হবে। মেয়র পদে থাকার সময় সরকারের অসহযোগিতার কারণে গ্যাস সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে নগরীর অধিকাংশ বাড়িতে গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন করার পরও দেওয়া সম্ভব হয়নি।
গ্যাস সংযোগের ব্যাপারে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির রাজশাহী অঞ্চলের ব্যবস্থাপক আজাদ কামাল জানান, ৫৫০টি বাড়ির মালিক গ্যাস সংযোগের জন্য টাকা জমা দিয়েছেন। কয়েক মাসের মধ্যে তাদের গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে আরও ১১ হাজার বাড়ির মালিক গ্যাসের জন্য আবেদন করে রেখেছেন। তাদের পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া রাজশাহীর নওদাপাড়া বেলপুকুর বাইপাস সড়কের পাশে গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্কের উদ্বোধন করেন। তার আগে বিএনপির মেয়র মিজানুর রহমান মিনু একাধিকবার গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০০৮ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে রাজশাহী নগরীতে গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সব প্রার্থী। ওই নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন খায়রুজ্জামান। কিন্তু মেয়র থাকাকালে তিনি সব বাড়িতে গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থা করতে পারেননি। তার মেয়াদের শেষ সময়ে এবং ২০১৩ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে শহরের বিশিষ্ট ৩২ ব্যক্তির বাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। এ নিয়ে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। ২০১৩ সালের ১৫ জুনের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেনের কাছে হেরে যান খায়রুজ্জামান। মোসাদ্দেক হোসেনের মেয়াদের প্রথম দুই বছর গ্যাস সংযোগ ও সরবরাহের কাজ চলতে থাকে। ৯ হাজার ১০৩টি বাড়িতে সংযোগ দেওয়ার পর তা বন্ধ হয়ে যায়।
৯৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের রাজশাহী সিটি করপোরেশনের এবার মোট ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন নারী ভোটার রয়েছেন।

/জেবি/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা