X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘ধর্ষণের কথা কাউকে না জানাতে হুমকি দেয় ডাক্তার মাহী’

তুহিনুল হক তুহিন, সিলেট
১৬ জুলাই ২০১৮, ১৯:৩৯আপডেট : ১৭ জুলাই ২০১৮, ১৬:০৩

ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ‘আমার স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে তার নানির চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্রের ফাইল দেখার কথা বলে রাত ১টার দিকে নিজের রুমে ডেকে নেয় ইন্টার্ন চিকিৎসক মাকামে মাহমুদ মাহী (৩০)। এ সময় সে আমার মেয়েকে তার রুমে জোর করে আটকে রেখে ধর্ষণ করে। আমার মেয়ে চিৎকার করলেও কেউ তাকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসেনি। এমনকি আমার মেয়ে যখন কান্নাকাটি করছিল তখন ওই চিকিৎসক এ বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য হুমকি-ধমকি দেয়। এরপর থেকেই মেয়েটি ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে পড়ে। তার চেহারায় আতঙ্কের ছাপ দেখে কারণ জানতে চাইলে সে আমাদের ঘটনা খুলে বলে।’

সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক ইন্টার্ন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা স্কুলছাত্রীর বাবা বাংলা ট্রিবিউনকে এসব কথা বলেন। রবিবার (১৫ জুলাই) রাত ১টার দিকে ওসমানী মেডিক্যালের নাক, কান ও গলা বিভাগের ইন্টার্ন চিকিৎসক মাকামে মাহমুদ মাহী নবম শ্রেণির ওই স্কুলছাত্রীকে (১৪) ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ মাহীকে আটক করেছে।

সোমবার (১৬ জুলাই) ওই স্কুলছাত্রীর বাবার সঙ্গে ওসমানী মেডিক্যাল এলাকায় কথা হয় বাংলা ট্রিবিউন প্রতিনিধির। তিনি বলেন, ‘প্রায় এক সপ্তাহ আগে আমি আমার বৃদ্ধা শাশুড়িকে হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের তৃতীয় তলার ৮নং ওয়ার্ডের ১৭নং বেডে ভর্তি করি। এরপর শনিবার (১৪ জুলাই) রাতে তার শরীরে অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা। শাশুড়িকে দেখভাল করার জন্য আর কেউ না থাকায় আমার মেয়েকে সেখানে পাঠাই। এরপর রবিবার (১৫ জুলাই) রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।’

তিনি আরও জানান, ‘ওই দিন ৮নং ওয়ার্ড ও ৭নং ওয়ার্ডের দায়িত্বে ছিল নাক-কান-গলা বিভাগের ইন্টার্ন চিকিৎসক মাকামে মাহমুদ মাহী। ৮নং ওয়ার্ডে রাত সাড়ে ১২টার দিকে পরিদর্শন করার সময় সে আমার মেয়েকে তার নানির চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ৭নং ওয়ার্ডে তার কক্ষে যাওয়ার কথা বলে।’

এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জানিয়ে মেয়েটির বাবা বলেন, ‘আমি ওই চিকিৎসকের বিচার চাই। আমার মেয়ের যে ক্ষতি হয়েছে তা আর পূরণ হওয়ার নয়। কী হবে আমার মেয়ের?’

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মেয়ের কাছ থেকে বিস্তারিত জানার পর তার বাবা তাকে নিয়ে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে যান এবং মাহীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। পরে পরিচালক ওই চিকিৎসককে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে আসেন। এ সময় হাসপাতালের আরও কয়েকজন চিকিৎসকও ছিলেন। অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মাহী প্রথমে অস্বীকার করেন। ভিডিও ফুটেজে অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে- একজন চিকিৎসকের এমন হুমকির পর ওই ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ওই কিশোরী তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করলে তিনি তাকে বুঝিয়ে সরিয়ে দেন। এদিকে, কিশোরীর কথা শুনে তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য ওসমানী মেডিক্যাল হাসপাতালের ওসিসি (ওয়ান স্টপ ক্রাইসেস সার্ভিস) সেন্টারে পাঠান চিকিৎসকরা। এ সময় কোতোয়ালি থানা পুলিশকেও খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) বিভূতি ভূষণ ব্যানার্জির নেতৃত্বে কোতোয়ালি থানার সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার গোলাম কাওসার দস্তগীর হাসপাতালের পরিচালকের কাছে যান। এ সময় তারা প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা এ বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে কোতোয়ালি থানা পুলিশ মাহীকে আটক করে।

পুলিশ জানায়, ইন্টার্ন চিকিৎসক মাকামে মাহমুদ মাহীর বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়। তার বাবার নাম মোখলেসুর রহমান। তিনি ওসমানী মেডিক্যালের জিয়া হোস্টেলের ২১৪নং কক্ষে বসবাস করছেন। আর ওই স্কুলছাত্রী তার পরিবারের সঙ্গে সিলেট মহানগরীতেই থাকে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ জুন সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগে নিয়োগ পান ইন্টার্ন চিকিৎসক মাকামে মাহমুদ মাহী। নিয়োগের ১৮ দিনের মাথায় তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠলো। ইন্টার্ন চিকিৎসক মাহী বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক।

নাক-কান-গলা বিভাগের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, রবিবার রাত থেকে মাহী তার দায়িত্বে থাকা ওয়ার্ডেই ছিলেন। অন্যান্য চিকিৎসকদের পরামর্শে তিনি আর বাইরে বের হননি। এরপর সোমবার (১৬ জুলাই) সকালে তাকে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা পাহারা দিয়ে পরিচালকের কক্ষে নিয়ে যায়। অন্যান্য চিকিৎসকদের কাছে মাহী দাবি করেছেন, পরিকল্পিতভাবে তাকে ফাঁসানো হয়েছে।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার এ কে এম মাহবুবুল হক বলেন, ‘ওই মেয়েটিকে হাসপাতালের ওসিসিতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা শেষে বিস্তারিত জানার পর ওই ইন্টার্ন চিকিৎসকের বিষয়ে ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি এ ঘটনাটি খতিয়ে দেখার জন্য সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ চাওয়া হয়েছে। এছাড়াও ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’

সিলেট কোতোয়ালি থানার সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার গোলাম কাউসার দস্তগীর বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘পুলিশ ওই ইন্টার্ন চিকিৎসক মাকামে মাহমুদ মাহীকে আটক করে থানায় নিয়ে এসেছে। স্কুলছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’

আরও পড়ুন- ওসমানী মেডিক্যালে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ইন্টার্ন চিকিৎসক আটক

 

/এফএস/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া