বরগুনার তালতলীতে ইউএনও, ওসি, শিক্ষক ও সাংবাদিকসহ একাধিক সরকারি কর্মকর্তাকে মারধরের পাশাপাশি জমি জবরদখল ও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় তালতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান মিন্টুকে তার পদ থেকে অপসারণের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। রবিবার বিকালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন বরগুনা জেলা প্রশাসকের দফতরে এসে পৌঁছেছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ (উপজেলা-১ শাখা) থেকে গত ৮ জুলাই তারিখে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন সূত্রে জানা গেছে, অসদাচরণ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় জনস্বার্থে মো. মনিরুজ্জামান মিন্টুকে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা ও শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় মিন্টুকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন এবং বরিশাল বিভাগীয় কমিশারের তদন্ত প্রতিবেদন ঘেঁটে জানা গেছে, তালতলী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান মিন্টুর বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুজ্জামানকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে তদন্তের দায়িত্ব দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। তদন্তের নির্দেশ পেয়ে সরেজমিন তদন্তের মাধ্যমে স্থানীয় ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের বক্তব্যের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ১ আগস্ট একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুজ্জামান। 
তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, উপজেলা চেয়ারম্যান মিন্টুর বিরুদ্ধে উত্থাপিত ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ১৫টি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মিন্টুর হাতে তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজি তোফায়েল হোসেন, তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবু কমলেশ, এসআই আ. খালেক এবং বড়বগী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী মো. জসীম উদ্দিন মধুর মারধারের শিকার হওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে। এছাড়া তালতলী সিনিয়র মাদ্রাসার দফতরি মো. শাহজাহান মিয়া, রাখাইন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আরডিএফ)-এর চেয়ারম্যান উসিৎ মং, ছোট অংকজানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুন্দর আলী ও তার ছেলে সবুজকেও মারধর করেছেন বলে তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেছে।
প্রমাণিত হয়েছে, মনিরুজ্জামান মিন্টু তালতলী শহরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩ একর জমি দখল করে হাওলাদার স’-মিল স্থাপন করেছেন। উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের কাছ থেকে অবৈধ উৎকোচ নিয়েছেন। গভীর নলকূপ বরাদ্দ দেওয়ার নামে দুই শতাধিক স্থানীয় গ্রামবাসীর কাছ থেকে ১৫-২০ হাজার টাকা করে উৎকোচ নিয়েছেন। মো. মনিরুজ্জামান মিন্টু তার ভাই তারিকুজ্জামান তারেক ও নয়ন ব্যাপারিকে নিয়ে এলাকায় ইয়াবাসহ মাদক ব্যাবসা চালিয়েছেন। মিন্টুর প্রভাব খাটিয়ে তার বাবা এ কে এম কামরুজ্জামান তালতলী বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি হয়েছেন বলেও তদন্তে প্রমানিত হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মিন্টুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার মেয়ে অসুস্থ থাকায় তাকে নিয়ে তিনি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার খবর শুনেছেন। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে তিনি রিট করবেন।
আরও পড়ুন- ‘ধর্ষণের কথা কাউকে না জানাতে হুমকি দেয় ডাক্তার মাহী’
