অশান্ত হয়ে উঠছে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)। প্রগতিশীল কর্মচারী পরিষদে আওয়ামী লীগ এক নেতার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তিন পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।
জানা গেছে, গত ১২ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল কর্মচারী পরিষদের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন হাবিপ্রবির প্রগতিশীল শিক্ষক পরিষদের সভাপতি ও সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর রুহুল আমীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কোতোয়ালি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ ঘোষ কাঞ্চন ও দিনাজপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবু ইবনে রজ্জব। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে বক্তব্য দেন অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবু ইবনে রজ্জব বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বর্তমানে পক্ষপাতিত্ব করছে। গত দুই বছর আগে একটি সংঘর্ষের ঘটনায় আমি দুটি হত্যা মামলার আসামি হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি ও শৃঙ্খলা রাখতে আরও যদি ২০০ মামলার আসামি হতে হয়, আমি তাতেও রাজি।’
আবু ইবনে রজ্জবের এই বক্তব্যের প্রতিবাদে মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) মানববন্ধন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যদিও হাবিপ্রবি পরিবারের ব্যানারে এই সভায় প্রশাসনের বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীই উপস্থিত ছিলেন না। এসময় বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ বিভাগের পরিচালক প্রফেসর তারিকুল ইসলাম, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ভবেন্দ্র কুমার বিশ্বাস, প্রফেসর ড. ফজলুল করিম, বেলাল হোসেন, কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ, আলী আজগর বাবুসহ অনেকে।
সমাবেশে আবু ইবনে রজ্জবের দেওয়া বক্তব্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির অপচেষ্টা চালানোর অভিযোগ করা হয়। এছাড়া ভাইস চ্যান্সেলরকে হুমকি দেওয়ার ব্যাপারে নিন্দা করা হয়।
এদিকে এই মানববন্ধনে সরকারবিরোধী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য বিরোধী আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ করে হাবিপ্রবি ছাত্রলীগ। এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন একতরফা নীতি অনুসরণ করছে এবং অনিয়ম করছে বলে অভিযোগ করে।
হাবিপ্রবি ছাত্রলীগের কার্যকরী সদস্য ছাত্রলীগ নেতা নাহিদ আহমেদ নয়ন জানান, প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে এবং এতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশের স্বার্থে ছাত্র পরামর্শ বিভাগের পরিচালক প্রফেসর তারিকুল ইসলানের অপসারণ দাবি করেন তারা।
এদিকে সরকারবিরোধী মানববন্ধন ও বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের নিয়ে মানববন্ধন করার প্রতিবাদে সমাবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিষ্ট্রারের কক্ষে গিয়ে মিথ্যা অপবাদ এবং মুষ্টিমেয় লোকজনদেরকে নিয়ে পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ করে। এসময় তাদের উপস্থিতিতে কক্ষে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
প্রগতিশীল শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিষ্ট্রার প্রফেসর ড. বলরাম রায় বলেন, ‘প্রগতিশীল কর্মচারী পরিষদ গত ১২ জুলাই সভা করেছিল বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে। কিন্তু বর্তমান সরকার সেই সভার বিরোধিতা করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাবিপ্রবি পরিবারের ব্যানারে এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হলেও ৭ ভাগ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীও এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিল না।’ তিনি বর্তমান উপাচার্যের একতরফা নীতি পরিহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান।
এদিকে তিন পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ ব্যাপারে হাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. শফিউল আলম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা উদ্বেগজনক। এটি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ১২ জুলাই বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলরের বিরুদ্ধে একজন নেতার বক্তব্যের বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় জিডি করা হয়েছে। বর্তমানে ক্যাম্পাসে যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি চলছে, সে ব্যাপারে অতি শিগগিরই সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’