X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে মা-মেয়ে হত্যা: সম্পত্তি আত্মসাৎ নাকি ডাকাতি?

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
১৭ জুলাই ২০১৮, ১৯:০০আপডেট : ১৮ জুলাই ২০১৮, ১৪:১৫

চট্টগ্রামের মনোয়ারা বেগম ও তার মেয়ে মেহেরুন্নেছা বেগম। গত ২৫ জুলাই তাদের হত্যা করা হয়।

চট্টগ্রামে আলোচিত মা-মেয়ে হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও এ হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ।ফাঁকা বাসায় বয়স্ক দুই নারীকে হত্যার ঘটনাটি ঠিক কী কারণে ঘটেছে এবং কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা চিহ্নিত করতে না পারলেও এটি যে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড তা নিয়ে পুলিশের কোনও সন্দেহ নেই। তবে এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে সম্পত্তি আত্মসাৎ অথবা ডাকাতির সম্ভাবনাকেই বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

গত রবিবার (১৫ জুলাই) নগরীর খুলশী থানাধীন আমবাগান এলাকার ফ্লোরাপাস সড়কের মেহের মঞ্জিল নামে একটি নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের নিচতলার পানির রিজার্ভয়ার থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।

খুলশী থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন জানান, ‘ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা দেখে আমরা নিশ্চিত হয়েছি এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’ তিনি আরও জানান, এই  ঘটনার পেছনে কারা জড়িত, কী কারণে মা-মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। হত্যার পেছনে সম্পত্তি আত্মসাৎ নাকি ডাকাতির ঘটনা রয়েছে তা খতিয়ে দেখছেন তারা। 

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মরদেহের গায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখে প্রাথমিকভাবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি তাদের দুইজনকে হত্যা করা হয়েছে। তবে কী কারণে হত্যা করা হয়েছে সেটি আমরা এখনও নিশ্চিত নই। হত্যাকাণ্ডের পেছনে সম্পত্তি আত্মসাৎ নাকি অন্য কোনও কারণ আছে আমরা তা খতিয়ে দেখছি।’

এ ঘটনায় নিহত মেহেরুন্নেসা বেগমের বোনের ছেলে মুশফিকুর রহমান ব্যাপ্তি ও তার দোকানের এক  কর্মচারীকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে খুলশী থানা পুলিশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিক সন্দেহ থেকে আমরা তাদের থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’ ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনও সম্পৃক্ততা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে এ  ব্যাপারে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পেছনে যেসব কারণ থাকতে পারে আমরা সব দিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তদন্তে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমরা পেয়েছি। তবে ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমরা কোনও তথ্য পাইনি।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিহত মনোয়ারা বেগম (৯৫) ও তার মেয়ে মেহেরুন্নেসা বেগম (৬৭) মেহের মঞ্জিল নামে নির্মাণাধীন চারতলা ভবনটির নিচতলায় থাকতেন। ওই ভবনে আর কেউ থাকতেন না।

ঘটনার পর মেহেরুন্নেসার মেঝ বোনের ছেলে বেলাল উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, নির্মাণাধীন চারতলা ভবন মেহের মঞ্জিলের মালিক তার খালা মেহেরুন্নেসা। স্থানীয় কিছু লোক  তার ওই জায়গাটি দখল করতে বেশ কিছুদিন ধরে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছিল। যে কারণে তার খালা তাকে জায়গাটি বিক্রির জন্য গ্রাহক খুঁজতে বলেন।

বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘খালা আমাকে জমিটি বিক্রির জন্য গ্রাহক খুঁজতে বলেছিলেন। তিনি (মেহেরুন্নেসা) আমাকে জানান, জায়গাটি নিয়ে স্থানীয় কিছু লোক তাকে চাপ প্রয়োগ করছে। কিন্তু কারা তাকে চাপ প্রয়োগ করছে, তাদের কোনও নাম তিনি আমাকে বলেননি। ওই জমি বিক্রির জন্য আমি লোক খুঁজছিলাম। খালা কাজটা গোপনে করতে চেয়েছিলেন। তার আশঙ্কা ছিল, স্থানীয় লোকজন জানতে পারলে তাকে হয়তো বাড়ি বিক্রি করতে দেবে না।’

এদিকে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ঘটনার পর বাসায় ঢুকে কাপড়-চোপড়, জিনিসপত্র অগোছালো দেখতে পান তারা। মা-মেয়ের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও পাওয়া যায়নি। এ কারণে তাদের একটি অনুমান, কেউ হয়তো চুরি করতে এসে ধরা পড়ে যাওয়ায় মা-মেয়েকে হত্যা করেছেন।

তবে খুলশী থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন এই মতটি গ্রহণে দ্বিধান্বিত। তিনি বলেন, ‘শুধু চুরি-ডাকাতি করতে এলে খুন করে লাশ পানির ট্যাংকে ফেলে দিত না। এই ঘটনার সঙ্গে অন্য কোনও কারণ জড়িত থাকতে পারে। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পত্তির কোনও বিরোধ থাকতে পারে। তবে আমরা এই একটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করছি না। ঘটনার রহস্য উম্মোচনে সম্ভাব্য সব বিষয় মাথায় রেখে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’

মেহেরুন্নেসা বেগম (৬৭) ও তার মা মনোয়ারা বেগমের (৯৫) সঙ্গে এলাকার কারও বিরোধের কথা প্রকাশ্যে জানা যায়নি।  নিহত মা-মেয়ের একাধিক প্রতিবেশী জানিয়েছেন, মা-মেয়ের সঙ্গে আশপাশের কারও প্রকাশ্যে বিরোধ ছিল না। তারা কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। বাসার গেট সবসময় বন্ধ থাকতো।

প্রসঙ্গত, নির্মাণাধীন চারতলা ভবনটির নিচতলার কাজ শেষ হওয়ার পর থেকে ওই বাসায় মা-মেয়ে থাকতেন। নিহত মেহেরুন্নেছা বিয়ে না করায় তার কোনও সন্তান-সন্ততি ছিল না। অন্যদিকে,মা মনোয়ারা বেগমের ৪ ছেলে ৫ মেয়ে থাকলেও মেহেরুন্নেসা ও তার মেঝ বোন ছাড়া অন্যরা চট্টগ্রামে থাকেন না। মেহেরুন্নেসার মেঝ বোন চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট এলাকায় থাকেন। ঘটনার দিন মনোয়ারা বেগমের আমেরিকা প্রবাসী ছেলে একাধিকবার কল করে তাদের না পেলে তিনি তার মেঝ বোনের বাসায় কল দেন। এরপর তার বোনের ছেলে বেলাল উদ্দিনসহ অন্যরা এসে দরজা বন্ধ পেয়ে দীর্ঘদিন ডাকাডাকির পর পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশের পর বাসার পানির রিজার্ভয়ারে মা-মেয়ের লাশ দেখতে পায়।

আত্মীয় স্বজনরা জানিয়েছেন, ২০০০ সালে মেহেরুন্নেসা রূপালী ব্যাংক থেকে অবসর নেওয়ার পর পেনশনের টাকা দিয়ে ওই বাড়ির জায়গাটি কেনেন। এরপর ২০০৬ সালে সেখানে একতলা বাড়ি নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে মেহেরুন্নেসা তার মাকে নিয়ে ওই বাসায় থাকতে শুরু করেন। তিন বছর আগে ভবনটির চারতলা পর্যন্ত সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়। যা এখনও শেষ হয়নি।

/এফএস/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!