খুলনায় ৯ প্রজাতির মাছ অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। এসব মাছের বংশ বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগে মৎস্য বিভাগ। এজন্য এসব মাছের প্রজনন বাড়াতে নানা উদ্যোগ হাতি নিয়েছে মৎস্য বিভাগ। এরই অংশ হিসেবে মরা নদীতে পোনা অবমুক্তকরণ, অভয়াশ্রম গড়ে তোলা ও মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে ৯০০ পরিবারকে সচেতন করার কাজ চলছে।
খুলনায় সংকটে থাকা ৯ প্রজাতির মাছ হচ্ছে, শৈল, কৈ, শিং, চিতল, পাবদা, উলুসী টেংরা গজাল, সরপুঁটি, মাগুর। অতিরিক্ত দাবদাহ, শৈত্যপ্রবাহ, বৃষ্টি, লবণাক্ততা ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে এ ৯ প্রজাতির মাছের বংশ বিস্তার সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু ছাইদ জানান, বিলুপ্ত প্রায় ৯ প্রজাতির মাছের প্রজনন বাড়াতে ডুমুরিয়া উপজেলার ভদ্রা নদী, মাড়ুয়ার খাল, মির্জাপুর মরা নদী, দিঘলিয়া উপজেলার হাতিয়ার খাল, তেরখাদা উপজেলার বাশুখালি, সালতিয়া ও আগরখালি খালে সংকটাপন্ন অবস্থায় এসব মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে। তিনি এসব এলাকায় মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত ৯০০ পরিবারকে সচেতন করতে বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে। এ জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে তাদের প্রতিবেশীদেরও উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হচ্ছে।
স্থানীয় জেলেরা জানান, বটিয়াঘাটা উপজেলার কাজীবাছা, সালতা ও চুনকুড়ি, দাকোপ উপজেলার শিবসা, মোংলা বন্দর এলাকার পশুর, কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীতে কারেন্ট জাল দিয়ে চিংড়ি ও পারশের পোনা আহরণ করে থাকে। এর ফলে ভেটকি, টেংরা, পায়রা, দাতনে প্রজাতির মাছের পোনা নিধন হচ্ছে।
খুলনা মহানগরীর ফারাজি পাড়া এলাকার সেলিম আহমেদ বলেন, এখন বাহারে গেলে দেশীয় কৈ মাছ পাওয়া কঠিন। হাইব্রিড মাছে বাজার সয়লাব। দেশীয় শিং ও মাগুর মাছও চিনে কেনা অসম্ভব ব্যাপার। হাইব্রিড মাছের আধিক্য অনেক বেড়ে গেছে। তাই তিনি এখন সামুদ্রিক মাছ কেনায় বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
ডুমুরিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সরোজ কুমার মল্লিক জানান, অভায়াশ্রম গড়ে তোলার পর স্থানীয় হাট বাজারে শৈল, কৈ, শিং, চিতল, পাবদা, উলুসী টেংরা মাছের সরবরাহ বেড়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধি ও পোনা অবমুক্তকরণের সুফল পাওয়া যাচ্ছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে পারলে সংকটে থাকা এসব মাছ রক্ষা করা সম্ভব হবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ ও মেরিন ডিসিপ্লিনারি প্রভাষক সুদীপ দেবনাথ বলেন, অবাধে পোনা ধরা, নদী ভরাট, পানির প্রবাহ কমে যাওয়া, মাছের বিচরণ ক্ষেত্র সংকুচিত হওয়াসহ নানা কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছের বংশ বৃদ্ধি কমেছে। কীটনাশক ব্যবহারের ফলে নদী, খাল বিলের পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। যা মাছের বংশ বিস্তারের ওপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছে।