X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাঙ্গু নদীর ৩৯ প্রজাতির মাছের বেশিরভাগই বিলুপ্তির পথে

মো. নজরুল ইসলাম (টিটু), বান্দরবান
১৮ জুলাই ২০১৮, ১০:৫০আপডেট : ১৮ জুলাই ২০১৮, ১৪:১৩

বান্দরবানের সাঙ্গু নদী বান্দরবানের সাঙ্গু নদীতে একসময় ৩৯ প্রজাতির মাছ পাওয়া গেল এখন অধিকাংশ মাছই বিলুপ্তির পথে। শুষ্ক মৌসুমে এই নদীর পানি শুকিয়ে গেলে অনেকেই সেখানে কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করে। এতে মাছ মরে পানিতে ভেসে উঠলে ছোট বড় সব মাছ ধরে ফেলা হয়। এসব কারণে এ নদীর মাছ দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জেলেরা।

বান্দরবান মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, একসময় বান্দরবানের সাঙ্গু নদীতে ডারকিনা, চিতল, তেলাপিয়া, চেলা, চেবলি, চাটকিনি, গুরামুইক্কা, মহাশল, পাবদা, চিরিং, বাইম, জাত পুটি, ফান্ডা, বোয়াল, বাটা, পান্ডা বাটা, বামশ, বেলিটুরা, কেচকি, কানকিলা, কাটা চান্দা, কই বান্দি, মৃগেল, বাইলা, গুইল্লা, ছোয়া চিংড়ি, গুচি বাইম, ঘারুয়া বাচ্চা, কুচিয়া, আইড়, শাল বাইম, কই, দেশি মাগুর, টাকি, ঘনিয়া, চিংড়ি, রুই, ভেদা ও কাতলা এ ৩৯টি প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু সম্প্রতি এর অধিকাংশ মাছই প্রায় বিলুপ্তির পথে।

বিলুপ্ত প্রজাতিসহ সব প্রজাতির মাছের ছবি মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা জানান, বান্দরবানের সাঙ্গু নদীর উৎপত্তিস্থল থানচি উপজেলায়। এ নদীটি থানচি থেকে রুমা হয়ে বান্দরবানে এসেছে। যেহেতু উৎপত্তি স্থল থানচি তাই ওখানেই মাছ বেশি হবার কথা। এবং রুমাতেও মাছ থাকার কথা থাকলেও এ গুরুত্বপূর্ণ দুই উপজেলায় কোনও মৎস্য অফিস না থাকায় মাছ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, থানচি হচ্ছে অনেক দুর্গম এলাকা, অফিস না থাকার কারণে ওইখানে তাদের কোনও লোকজন নেই। তাই মাছ রক্ষা করারও কোনও সুযোগ নেই।

মৎস্য অফিসের সূত্রে জানা গেছে, দুর্গম থানচি উপজেলাসহ পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় মেইল গাছের বিষাক্ত রস পানিতে ছিটিয়ে দিলে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে মাছ জ্ঞান হারিয়ে পানিতে ভেসে উঠে। ফলে নদীর উৎসেই মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া শহরের বিভিন্ন জায়গায়, যেখানে মেইল লতার রস নেই সেখানে দোকান থেকে ১২৫ টাকায় সুরক্ষা ১০ ইসি ও ১৪০ টাকায় ক্লোরোসেল-৪৮ইসি কীটনাশক বাজার থেকে কিনে এনে নদীতে ব্যবহার করে সব মাছ মেরে ধরে ফেলা হচ্ছে।

মাছ মারার জন্য ব্যবহৃত বিষ অফিস সূত্রে আরও জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে শুধুমাত্র রুই, কাতলা, মৃগেল, কালি বাউশ প্রজাতির পোনা প্রতি বছর ছাড়া হলেও অন্য প্রজাতির কোনও পোনা না ছাড়ার কারণে অন্য প্রজাতির মাছগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া ২০১৪-২০১৫ সালে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার ৩২৮কেজি মাছের পোনা, ২০১৫-২০১৬ সালে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার ২৯০ কেজি ৫০০ গ্রাম মাছের পোনা (৩১৮.৫৫ হেক্টর এলাকায়), ২০১৬-২০১৭ সালে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার ৩৬৬ কেজি মাছের পোনা (২৫.৫৭ হেক্টর এলাকায়) সাঙ্গু নদী ও প্রাতিষ্ঠানিক জলাশয়ে অবমুক্ত করা হয়। এছাড়া ২০১৬-২০১৭ সালে ক্যান্টনমেন্টের জলাশয়ে ৩ লাখ টাকার ৭৬০ কেজি পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে।

কালাঘাটার জেলেরা জানান, তারা বর্তমানে খুবই অভাবের মধ্যে আছেন। নদীতে আগেরমতো মাছ নেই। তাদের কোন জমিও নেই চাষাবাদ করারমতো। আবার নিজেদের পেশা ছেড়ে রিকশা চালাবে তারও উপায় নেই। পরিবার নিয়ে তাদের চলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।

বান্দরবান সাঙ্গু নদীর বোয়াল মাছ বান্দরবান জেলে সমিতির সভাপতি মৎস্যজীবী দিলীপ জলদাশ বলেন, বর্তমানে জেলে সমিতিতে ১০৮ জন সদস্য রয়েছে। ৩ বছর আগে আমরা ভাতা পেলেও এখন আর পাচ্ছি না। এছাড়া নদীতে আগেরমতো মাছও নেই। আমরা বর্তমানে সারা দিনে ১-২কে জি মাছ পাই, যা দিয়ে আমাদের সংসার চলে না।

তিনি আরও বলেন, নদীতে কালি বাউশ, টাকি, চেলা, বাইলা, টেংরা, আইড়, বোয়াল, চিংড়ি, বাইম, কুচিয়া, চেলা এসব মাছও পাওয়া যায় খুবই সামান্য। কীটনাশক ওষুধ দিয়ে মাছ মেরে ফেলার কারণেও মাছ কমে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে বান্দরবান সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘নদীতে প্রতিবছর রুই, কাতলা, মৃগেল, কালি বাউশ প্রজাতির পোনা অবমুক্ত করা হলেও অন্য কোনও মাছ অবমুক্ত করা হচ্ছে না। যার কারণে এ কয়েক জাতের মাছ ছাড়া অন্য মাছগুলো এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে যাওয়া ও বর্ষাকালে পানির তীব্র স্রোতে মাছ ভেসে অন্যত্র চলে যাওয়ার কারণেও অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ রক্ষা করতে হলে নদী খনন করে এর গভীরতা বাড়াতে হবে। তাহলে শুষ্ক সময়ে শুকিয়ে যাবে না ও বর্ষাকালে এর গতি বৃদ্ধি পাবে না। এছাড়া বিলুপ্ত প্রজাতির মাছও নদীতে অবমুক্ত করতে হবে।’

ভাতার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন চাঁদপুর, পটুয়াখালী, নোয়াখালী ও পার্বত্য এলাকা রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের মাছ চাষিরা চাল পেয়ে থাকে। তবে বান্দরবানে একটি মাত্র নদী যা কিনা একদম ছোট, তাছাড়া এখানে জেলের সংখ্যাও কম হওয়ায় জেলেরা চাল বা কোনও সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না।’

/এআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়