চট্টগ্রামে ভুল চিকিৎসায় রাফিদা খান রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলীসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন শিশুটির বাবা সাংবাদিক রুবেল খান। বুধবার (১৮ জুলাই) বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার থানায় তিনি এ মামলা দায়ের করেন।
চকবাজার থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মামলায় ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নিহত শিশু রাইফাকে চিকিৎসা দেওয়া তিন চিকিৎসকের নাম উল্লেখপূর্বক হাসপাতাল পরিচালনায় সংশ্লিষ্টদের আসামি করা হয়েছে।’
মামলার আসামিরা হলেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী, শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বিধান রায় চৌধুরী, কর্তব্যরত ডাক্তার ডা. দেবাশিষ সেনগুপ্ত ও ডা. শুভ্রদেব।
এর আগে গত ২৮ জুন বিকালে গলাব্যথার কারণে রাফিদা খান রাইফাকে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯ জুন রাতে তার মৃত্যু হয়। ওই সময় ভুল চিকিৎসায় রাইফার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে ম্যাক্স হাসপাতালে গিয়ে অভিযুক্ত কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্সদের শাস্তি দাবি করেন সাংবাদিক নেতারা। সাংবাদিক নেতাদের দাবির মুখে পুলিশ কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে বিএমএ নেতাদের চাপের মুখে ওইদিন রাতেই আটককৃতদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।
ঘটনা তদন্তে ২৯ জুন রাতে সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকীকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু, স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম-সম্পাদক সবুর শুভ।
এ ঘটনায় সাংবাদিকদের দাবির মুখে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের কার্যালয়ের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) কাজী জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এই কমিটি গত রবিবার ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম আসেন। এ সময় তারা ম্যাক্স হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।
গত ৬ জুলাই সিভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীন কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশু রাইফার চিকিৎসায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের অনভিজ্ঞতা ও আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয় এবং ওই সময়ে দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট নার্সদের জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো দক্ষতা বা জ্ঞান কোনোটাই ছিল না। এতে আরও বলা হয়, অভিযুক্ত শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বিধান রায় চৌধুরী মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেননি। ডা. দেবাশিষ সেনগুপ্ত ও ডা. শুভ্রদেব শিশুটির রোগ জটিলতার সময় আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দেননি বলে শিশুটির বাবা-মা যে অভিযোগ করেছেন তাও তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিবেদনে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ চার দফা সুপারিশ করা হয়।
