X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কীটনাশক ব্যবহারে টাঙ্গাইলের নদ-নদীতে কমে যাচ্ছে মাছ

এনায়েত করিম বিজয়, টাঙ্গাইল
২০ জুলাই ২০১৮, ২০:০০আপডেট : ২১ জুলাই ২০১৮, ১৩:৪০

বাসাইল উপজেলার চাপড়া বিলের একাংশ দেশের নদ-নদী, হাওর-বাওরসহ সব জলাশয়ে পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যেত বলে আমাদের একসময় মাছে ভাতে বাঙালি বলা হতো। কিন্তু কৃষিজমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ এবং জলাশয়ে শিল্পবর্জ্য নিক্ষেপসহ নানা কারণে নদী-নালা,খাল-বিলের পানি বিষাক্ত হচ্ছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে মাছের আবাসস্থল ও প্রজননক্ষেত্র। এ কারণে দেশের নাদ-নদীতে মাছ কমে যাচ্ছে। দেশের মধ্যাঞ্চলীয় জেলা টাঙ্গাইলও এর ব্যতীক্রম নয়।

টাঙ্গাইল জেলা ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিষাক্ত পানির কারণে টাঙ্গাইলের নদ-নদীতে দেশি মাছ অনেকটা কমে গেছে। এছাড়া বর্ষার শুরুতে বেড়জাল ও কারেন্ট জাল দিয়ে মা মাছ ধরার ফলেও মাছ বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এদিকে বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির হাইব্রিড মাছ চাষের ফলে অর্ধশতাধিক দেশি প্রজাতির মাছ অস্তিত্বের হুমকিতে পড়েছে। এ এলাকার নদ-নদীতে মাছ কমে যাওয়ার ফলে দিন দিন অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছেন জেলেরা। অনেকে অন্য ব্যবসা, গাড়ি চালানো ও বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। তবে দরিদ্র জেলেরা অর্থাভাবে অন্য পেশায় যেতে পারছেন না। ফলে তাদের অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন ।

সরেজমিনে দেখা যায়, এক সময়ের অতি পরিচিত দেশি প্রজাতির মাছ বিশেষ করে মাগুর, চাপিলা, শিং, পাবদা, টাকি, রুই, কাতল, মৃগেল, চিতল, রিটা, গুজি আইড়, কৈ, বোয়াল, খৈলসার মতো সুস্বাদু দেশি মাছগুলো এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। দেশি সরপুটি, গজার, জেব্রা, এলঙ, বামাশ, টাটকিনি, তিতপুঁটি, বাঘা আইড়, গুলশা, কাজলি, গাং মাগুর, চেলা, বাতাসি, বউরাণী, টেংরা, কানি পাবদা, পুঁটি, মলা, কালবাউশ, শোল, মহাশোল, রিটা, তারা বাইম, বেলেসহ ৪০ থেকে ৫০টি জাতের মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে।

বাসাইলউপজেলার চাপড়া বিলের একাংশ বাসাইল উপজেলার খাটরা এলাকার জেলে গৌরাজবংশী বলেন, ‘এক সময় মাছ ধরতে গেলে মাছে নৌকা বোঝায় হয়ে যেতো। কিন্তু এখন আগের তুলনায় পাঁচ ভাগের এক ভাগও মাছ ধরা যায় না। খাল-বিলে মাছ কমে যাওয়ায় অনেক জেলে বাব-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যোগ দিচ্ছেন।’

হারান রাজবংশী নামের এক জেলে বলেন, ‘আগে খোলা নদী-নালা থেকে স্বাধীনভাবে মাছ ধরে সংসার ভালোভাবেই চলে যেত। এখন খোলা নদ-নদীতে আগের মতো মাছ না থাকায় চাষ করা পুকুরে দিনমুজুর হিসেবে মাছ ধরে দিতে হয়। এতে সপ্তাহে দু-একদিন এধরণের পুকুরে মাছ ধরার সুযোগ পেলেও বেশিরভাগ দিন কাটে কাজবিহীন। বেড়জাল দিয়ে দুই থেকে তিন টান দিলে নৌকায় মাছ রাখার জায়গা থাকতো না। কিন্তু এখন ২০ টানেও নৌকার কানি ভরে না। এ কারণে অনেক জেলে মাছ ধরা বাদ দিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছে।’

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে হাইব্রিড বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ হচ্ছে। এসব মাছ চাষের আগে পুকুর ও ডোবার পানিতে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর ফলে মাছ, শামুক ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর প্রজননক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। এদিকে অধিক মুনাফার আশায় হাইব্রিড মাছের চাষ করতে গিয়ে জলাশয়গুলো থেকে দেশি মাছের বিলুপ্তি ঘটানো হয়েছে।

জেলা মৎস্য অফিস জানায়, জেলায় ৪১ হাজার ৪৯৫টি পুকুর রয়েছে। এছাড়াও বিল ২৯৮ টি, বাওড় ৩টি, পেন কালচার ৪টি, ৮ টি নদী ও ১২৮টি খাল রয়েছে। এ এলাকায় মাছের চাহিদা ৭৩ হাজার মে.টন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষিজমিতে ব্যাপক হারে কীটনাশক ও মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারে নদী-নালা, খাল-বিল ও জলাশয়ের পানি দূষিত হচ্ছে। আর এ কারণে আগের তুলনায় প্রাকৃতিক মাছ অনেক কমে গেছে। এক সময় জেলেরাও মাছ ধরে ভালভাবে সংসার চালাতে পারতো। কিন্তু এখন তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশি মাছ সংরক্ষণে হ্যাচারি স্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যেই এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অনেককেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’ যেখানে পানি কম থাকে সেখানে মৌসুমী মাছ চাষ করা হবে বলেও তিনি জানান।

 

 

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি