আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশাল নগরীতে চলছে জোর প্রচার-প্রচারণা। নগরবাসীর উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন প্রার্থীরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কোনও সময়ই বিরাম নেই তাদের।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ জোর কদমে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচারণা। প্রতিদিন তিন থেকে চারটি উঠান বৈঠকের পাশাপাশি মানুষে দ্বারে দ্বারে গিয়ে গণসংযোগ করছেন তিনি। এতে করে ভোটারদের কাছ থেকে বেশ সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান তিনি । শুক্রবার (২০ জুলাই) তিনি বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সি অ্যান্ড বি, সাগরদী, বান্ধ রোড, রুপাতলী এলকায় গণসংযোগ করেছেন।
শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশাল নগরের দক্ষিণ আলেকান্দায় মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত সেকান্দার আলী খানের স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের জানাজায় অংশ নেন। আনোয়ারা বেগমের দাফন শেষে তিনি একই কবরস্থানে ব্যবসায়ী কামাল আহমেদ ফারুকের দাফনে অংশ নেন। তিনি বলেন, ‘আমি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এখানে নির্বাচনি পরিবেশ খুবই ভালো। সবাই যে যার মতো প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশন যদি চায় এবং এখানকার জনগণ যদি মনে করেন সেনাবাহিনীর প্রয়োজন আছে, তবে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।’
বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবুর রহমান সরওয়ার শুক্রবার নগরীর পলাশপুর থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘জোর প্রচারণা চলছে এবং নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আশা কারি, আমি জয়ী হবো।’
বিএনপির প্রার্থী অভিযোগ করেন, ‘বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ ও এলজিইডিতে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সমাবেশ করে ভোট চাইছেন। কিন্তু কোনও সরকারি কর্ককর্তাকে নিয়ে প্রচারণা করা নির্বাচনি আচরণবিধির পরিপন্থী। শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।’
শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে নগরের দক্ষিণ আলেকান্দার নুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে মুক্তিযোদ্ধা সেকান্দার আলী খানের স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের জানাজায় অংশ নেন তিনি। জানাজা শেষে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুই মেয়র প্রার্থী একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময়ও করেন।
জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন শুক্রবারে নগরীর ১, ২, ৩, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় গণসংযোগে ব্যস্ত ছিলেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব শুক্রবারে নগরীর আমানতগঞ্জ, কাউনিয়া, ভাটিখানা, স্বরোড, পোর্টরোড এলাকায় গণসংযোগ করেছেন।
বাসদ সমর্থিত একমাত্র মহিলা মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তী নগরীর ৬,৭, ৮, ১০, ১১, ১২, ২৩, ২৪ ও ২৫ ওয়ার্ড এলাকায় গণসংযোগ করেছেন।
সিপিবি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদও কাউনিয়া শিল্পাঞ্চল ও পোর্টরোড এলাকায় গণসংযোগ করেছেন।
এ ছাড়া স্বতন্ত্র ( জাপা বিদ্রোহী) মেয়র প্রার্থী বশির আহমেদ তার ৩১ দফা নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। এতে দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত মহানগরী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। শুক্রবার (২০ জুলাই) দুপুরে নগরের দক্ষিণ আলেকান্দার শহীদ আলতাফ মেমোরিয়াল স্কুলের কাছে তার নিজ বাসভবনে বসে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।
ইশতেহারে তিনি নগরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা, ভরাট খালগুলো পুনঃখনন এবং দখল হওয়া খাল পুনরুদ্ধার কার, হকারদের জন্য পৃথক ৪টি হকার্স মার্কেট তৈরি করা, নগরের রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করা, ওয়ার্ডগুলোতে আধুনিক ডাস্টবিন বসানো এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পরিশোধনাগার স্থাপন, নারীদের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে আলাদা টয়লেট স্থাপন, কর্মজীবী নারীদের জন্য হোস্টেল, ইমাম, মুয়াজ্জিন, ধর্মযাজক ও পুরোহিতদের জন্য সিটি ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা, বর্ধিত এলাকার উন্নয়ন করা, নগরীর পাশের পিছিয়ে পড়া ইউনিয়নগুলোকে সিটির আওতায় আনা, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য স্টুডেন্ট সার্ভস চালু করা, পথশিশুদের উন্নয়নে পথশিশু ট্রাস্ট গঠন, মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি প্রদান করা, রাজনৈতিক সহবস্থান অটুট রাখাসহ ৩১ দফার কথা উল্লেখ করেন।
কেবল সাত মেয়র প্রার্থীই নন, ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। নগরীর সাধারণ ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সর্বমোট ভোটার সংখ্যা-৮২৫৪। মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩ জন। তারা হলেন– মো. রফিকুল ইসলাম, শেখ মো. আলম ও সৈয়দ আকবর হোসেন। সৈয়দ আকবর হোসেন হেভি ওয়েট প্রার্থী এবং বর্তমান কাউন্সিলর। বাকি দুজন নতুন মুখ। সৈয়দ আকবর হোসেনের নির্বাচনি প্রতীক লাটিম।
লাটিম প্রতীকের গণসংযোগকালে নির্বাচনি আচরণ বিধি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষ ঠেলাগাড়ী প্রতীকের নেতাকর্মীরা আমার নেতা কর্মীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এমনকি এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। এছাড়া আমি নিজেও চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আকবর বলেন, ‘আমি বিগত দিনে প্রায় ৯ কোটি টাকার উন্নয়ন করেছি। অবাধ, সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে ৭০ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হবো।’