X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে একই পরিবারের তিন জন খুন:বাবার সন্দেহ নিহত ছেলের দিকেই

গাজীপুর প্রতিনিধি
২২ জুলাই ২০১৮, ২১:০৭আপডেট : ২২ জুলাই ২০১৮, ২১:০৮

গাজীপুরে সপরিবারে খুন হওয়া কামাল হোসেনের বাড়ি গাজীপুরে বাবা-মা ও তাদের মেয়ে খুনের ঘটনায় শুক্রবার রাতে জয়দেবপুর থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। নিহত কামাল হোসেনকে অভিযুক্ত করে তার বাবা হাসেম মিয়াই মামলাটি দায়ের করেছেন। বাবার দাবি, ছেলে তার পুত্রবধূ ও নাতিকে খুন করে নিজেও আত্মহত্যা করেছেন। আর কামাল হোসেনের শ্বশুরবাড়ির দাবি কামালের ভাই দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার এই খুনের জন্য দায়ী।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের হায়দারাবাদ এলাকায় বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) এই খুনের ঘটনা ঘটে। কামাল হোসেনের (৪০) ঝুলন্ত এবং তার স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫) ও মেয়ে সানজিদা কামাল ওরফে রিমির (১৯) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত কামালের স্ত্রী নাজমার ভাই কামাল উদ্দিন বলেন, ‘ঘটনার রাতে বড় ভাই দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে ছোট ভাই কামাল হোসেন দাওয়াত খায়। পরদিন সকালেই কামাল হোসেন সপরিবারে লাশ হয়। এমন ঘটনা এলাকার মানুষের মধ্যেও প্রচার রয়েছে।’ তিনি দাবি করেন, যে ভাবি (দেলোয়ারের স্ত্রী) কখনও কামাল হোসেনের বাড়িতে যায় না, সেই ভাবিই প্রথম কেমন করে লাশের খবর পায়? লাশের সন্ধান পেয়েছে তারা সকালে, আর আমাদেরকে খবর পাঠায় দুপুর ১টার পর।’

আগামী ২-১ দিনের মধ্যে তারাও কামালের বড় ভাই দেলোয়ারসহ তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করবেন জানিয়ে কামাল উদ্দিন আরও বলেন,‘প্রায় ২০ বছর আগে কামাল হোসেন প্রেম করে আমার বোনকে বিয়ে করেন। তাই কামালের পরিবার এ বিয়ে মানতে চায়নি। পরিবারের সঙ্গে বনিবনা হয়নি। পরে কামালের বাবা রাস্তার পাশে তাদেরকে কিছু জায়গা দেন। সেখানেই আমাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে বাড়ি করে বসবাস করছিলেন। কামাল কিছুদিন আগে তার বাবা থেকে পাওয়া তার অংশের ৩৫ শতক জায়গা বিক্রি করে দিতে বড় ভাই দেলোয়ার হোসেনকে অনুরোধ করেন। এজন্য দেলোয়ার হোসেন ১১ লাখ টাকা দালালি চান। পরে সে জমি প্রায় ৭০ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়।বিভিন্ন সময় সব মিলিয়ে মোট পাঁচ লাখ টাকা কামাল হোসেনকে দেয়। বাকি টাকা চাওয়া নিয়ে গত ১০-১২ দিন আগে ঝগড়া বিবাদ হয়।’

নিহত কামাল হোসেনের বাবা হাসেম মিয়ার দায়ের করা মামলার বিবরণ ও পরিবারের তথ্য মতে, নিহতের একমাত্র সন্তান সানজিদা কামাল রিমিকে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির চেষ্টা চালিয়ে আসছিল তার বাবা-মা। আর্থিক সমস্যার কারণে কামাল হোসেন মানিসকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিহতের বড় ভাই দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার বাড়ির বাইরে বৈদ্যুতিক লাইট জ্বলতে দেখে কামাল হোসেনের বাড়িতে যায়। তিনি বাড়ির গেটের দরজা ভেতর থেকে তালা লাগানো ও বারান্দায় কামাল হোসেনের লাশ ঝুলতে দেখেন। পরে তিনি স্বজনদের জানান। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মাধ্যমে দরজা ভেঙ্গে ঘরের মেঝেতে নাজমা আক্তার ও রিমির  গলাকাটা লাশ পাওয়া যায়।

নিহত কামাল হোসেনের ভাই দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘রিমিকে বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজে শর্ত সাপেক্ষে ভর্তি করা হয়। আমার বাবা জীবিত রয়েছেন। এ অবস্থায় দুই ভাই ও চার বোনের কাউকে কোনও জমি তিনি লিখে দেননি। তাই বিক্রিরও সুযোগ নেই। পরে দলিল দেখিয়ে বাবার কিছু জমি বিক্রির শর্তে বায়নার টাকা নেওয়া হয়। আমি নিজেও ধার-দেনা করে কিছু টাকা দিয়েছি ভাতিজিকে মেডিক্যালে ভর্তি করানোর জন্য।’

শ্বশুরবাড়ির অভিযোগের ব্যাপারে নিহত কামাল হোসেনের বড় ভাই দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঘটনার বেশ কিছুদিন আগে রিমির মামারা তার কাছে টাকা চায়। ভাতিজি রিমিকে মেডিক্যালে ভর্তির জন্য তারা নাকি কামাল হোসেনকে টাকা ধার দিয়েছিল। আমি পরে তাদেরকে বলেছি তারা আমার কাছে টাকা না চেয়ে যেন কামাল হোসেনের কাছেই চায়। তারা এখন সাজানো অভিযোগ করছে। আমার ভাইয়ের স্ত্রীর লাশও তারা মিথ্যা অজুহাতে নিয়ে গেছে। আমার ভাই ও ভাতিজির মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত করে কারও হাত থেকে থাকলে তাদের বিচার অবশ্যই আমি চাই।’

একই এলাকার কৃষক হযরত আলী (৭৫) বলেন, ‘এলাকাবাসী হিসেবে আমরা কামাল হোসেনের পরিবারে মা-মেয়ে বা স্ত্রীর সঙ্গে কোনও বিরোধ শুনিনি। নীরব, শান্তিপ্রিয় ও গোছানো একটি পরিবার ছিল কামাল হোসেনের। সে তার বাবা ভাইয়ের সঙ্গেও কোনও বিবাদে জড়িয়েছে বলে আমরা শুনিনি।’

প্রতিবেশী আবুল হোসেনের স্ত্রী শিলা আক্তার বলেন, ‘কামাল হোসেনের পরিবারের কোনও বিরোধ, ঝগড়া বা উচ্চবাচ্য কখনও শুনিনি। তার মেয়ে রিমি ভালো ছাত্রী ছিল। মা-বাবা ছাড়া বাড়ির বাইরে তাকে একা বের হতে দেখিনি। এলাকায় প্রতিবেশী সমবয়সের কোনও মেয়ের সঙ্গেও তার বন্ধুত্ব বা ঘোরাফেরাও কখনও আমাদের চোখে পড়েনি।’

মামলার সুরতহাল তৈরি করা জয়দেবপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মা ও মেয়ের লাশ গলাকাটা ছিল। লাশের পাশে দু’দিক দিয়ে ধারালো রক্তমাখা ছোরা পাওয়া গেছে। মেয়ে রিমি ও বাবা কামাল হোসেনের লাশ মর্গ থেকে শুক্রবার বাদ আসর তাদের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। আর নাজমা আক্তারের মরদেহ মহানগরের বাড়িয়ালী এলাকায় রিমির নানা মৃত নাজিম উদ্দিনের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।’

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার প্রণয় ভূষণ জানান, লাশের ভিসেরা রিপোর্টের জন্য ঢাকায় আলামত পাঠানো হয়েছে। সেই রিপোর্ট এলেই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত হবে।

জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার রাতে এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামলাটি তদন্ত করবেন। তদন্তের স্বার্থে নিহতের বাড়িটি পুলিশ তালাবদ্ধ করে রেখেছে।’

শনিবার বিকালে হায়দারাবাদ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নিহত কামাল হোসেন ও তার মেয়ে রিমিকে  পাশাপাশি কবর দেওয়া হয়েছে।

 

/এনআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
একযুগ পর দলছুট, সঙ্গে সঞ্জীব চৌধুরী
একযুগ পর দলছুট, সঙ্গে সঞ্জীব চৌধুরী
সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো বাঘ, নিয়ে গেলো গহীন বনে
সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো বাঘ, নিয়ে গেলো গহীন বনে
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
দুই জনপ্রতিনিধির নাম বলে সাভারে সাংবাদিকের ওপর কেমিক্যাল নিক্ষেপ
দুই জনপ্রতিনিধির নাম বলে সাভারে সাংবাদিকের ওপর কেমিক্যাল নিক্ষেপ
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি