ভারত থেকে ফিরেছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের স্কুলছাত্র রাসেল মিয়া (১৪)। কিন্তু তার ডান চোখে আর আলো ফেরেনি। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এআইআইএমএস) হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রাসেল আর কোনোদিন ডান চোখে দেখতে পাবে না।
রাসেল মিয়া নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী নোয়াখালিটারী গ্রামের আব্দুল হানিফ মিয়ার ছেলে ও বালারহাট আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র।
গত ৩০ এপ্রিল বিকালে ফুলবাড়ী সীমান্তে বাংলাদেশের ২০ গজ অভ্যন্তরে গরুর জন্য ঘাস কাটতে গেলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ছোঁড়া বুলেটের স্প্লিন্টার এসে লাগে রাসেলের ডান চোখে। ঘটনার দিন রাসেলকে রংপুরের প্রাইম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার শেরেবাংলা নগরের জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু এতেও চোখে আলো না ফেরায় গত ২৮ জুলাই তাকে ভারতে পাঠায় দেশটির হাইকমিশন। গত ৩০ জুলাই রাসেলকে নয়া দিল্লির এআইআইএমএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শনিবার (১১ আগস্ট) দুপুরে বিমানযোগে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন রাসেল মিয়া ও তার জ্যাঠাতো ভাই রেজাউল ইসলাম। পরে তারা নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে পৌঁছান।
রবিবার (১২ আগস্ট) রাসেলের বড় ভাই রুবেল মিয়া জানান, গত ৩০ জুলাই রাসেলকে এআইআইএমএস হাসপাতালে ভর্তি করার পর সেখানে সে চিকিৎসক ডা. প্রদীপ কুমার ও ডা. সুনীল কুমারের তত্ত্বাবধানে ৯ দিন চিকিৎসাধীন ছিল।
রুবেল মিয়া বলেন, ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এআইআইএমএস হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রাসেলের ডান চোখে অপারেশন করেও আর আলো ফেরানো সম্ভব হবে না। তার চোখ স্প্লিন্টারের আঘাতে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এরপরও অপারেশন করা হলে রাসেলেরও আরও বড় ধরনের কোনও ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।’ রাসেলের চোখে চিকিৎসকরা অপারেশন করতে অপারগতা প্রকাশ করায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছাড়পত্র দিয়ে দেয় বলেও জানান রুবেল মিয়া।
রুবেল মিয়া আরও বলেন, ‘বিনা কারণে বিএসএফ আমার ভাইয়ের চোখের আলো কেড়ে নিয়েছে। আমরা এর বিচার চাই, ক্ষতিপূরণ চাই।’
এদিকে, ডান চোখে আলো না ফেরায় ভেঙে পড়েছে রাসেল। হতাশ তার বাবা-মাও।
পেশায় দরজি রাসেলের বাবা আব্দুল হানিফ মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলের শুধু চোখ নয়; তার ভবিষ্যতটাই অন্ধ করে দিয়েছে বিএসএফ। চোখে বুলেটের স্প্লিন্টার নিয়ে সে কেমন করে বেঁচে থাকবে, জানি না! আমি এর বিচার চাই।’
রাসেলের বাবা আরও বলেন, ‘যে গরুর জন্য ঘাস কাটতে গিয়ে রাসেল বিএসএফের গুলির আঘাতে অন্ধ হয়েছে, তার চিকিৎসার জন্য সেই গরু দুটিসহ পোষা ছাগল বিক্রি করতে হয়েছে আমাকে। এ ছাড়া, তার চিকিৎসার জন্য দেড় থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ করতে হয়েছে। এরপরও ছেলের চোখের আলো না ফেরায় অন্ধকার দেখছি চোখে-মুখে।’ এসব কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাসেলের মা।
এসময় রাসেল বলে, ‘এখন আমার পরিবার ভবিষ্যৎ ভরণ-পোষণসহ পড়ালেখা করাতে পারবে কিনা, আমি জানি না। আমি ভালোভাবে পড়ালেখা করে স্বাবলম্বী হয়ে বাঁচতে চাই।’
আরও পড়ুন–
বিএসএফ’র গুলিতে দৃষ্টি হারানো রাসেলকে ভারতে পাঠালো ভারতীয় হাইকমিশন
বিএসএফ’র গুলিতে নষ্ট হয়ে গেছে রাসেলের ডান চোখ
বিএসএফ’র গুলিতে দৃষ্টিশক্তি হারানো রাসেলের ঘটনা তদন্তের নির্দেশ মানবাধিকার কমিশনের
স্কুলছাত্রকে রাবার বুলেটে আহত করায় বিএসএফের দুঃখ প্রকাশ
চোখে স্প্লিন্টার নিয়েই বাড়ি ফিরতে হলো বিএসএফ’র গুলিতে আহত রাসেলকে