X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘রাজপ্রাসাদে’ ফিরছে ‘রাজা’

আব্দুর রহমান, টেকনাফ
১৬ আগস্ট ২০১৮, ১৫:০৫আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০১৮, ১৫:৫৮

টেকনাফে মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ি মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর ফের ‘রাজপ্রাসাদে’ ফিরতে শুরু করেছে টেকনাফের ইয়াবা 'রাজা’রা। ঈদ উপলক্ষে তাদের অনেকেই বাড়ি ফিরছে বলে ধারণা স্থানীয়দের। একইসঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে ইয়াবার চোরাচালানও। স্থানীয়রা জানান, ইয়াবা বিক্রি করে রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি বানিয়েছে মাদক বিক্রেতারা। এসব বাড়িতে নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরাও। সীমান্তের বাসিন্দারা এসব বাড়ির মালিকদের ‘ইয়াবা রাজা’ নামে ডাকেন। এই মাদক ব্যবসায়ীদের অনেকে ইয়াবার 'বাবা' বলেও ডাকেন।

তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের বাড়ি স্থানীয় প্রশাসন ও সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, মে মাসে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হলে ইয়াবার গডফাদাররা ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। এখন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আবারও ঘরে ফিরছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেও ধরা পড়ছে ইয়াবার চালান। মঙ্গলবার (১৪ আগস্ট) কক্সবাজারের রামুতে র‌্যাবের সঙ্গে গোলাগুলিতে দুই ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হয়। এ সময় তেলের ট্যাংকার লরি থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়। গত ৫ আগস্ট টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপে সুপারি বাগানের মাটির ভেতর থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মো. আরমান (৩২) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তিনি দ্বীপের উত্তরপাড়ার মৃত নুরুল হকের ছেলে। এছাড়া ১২ আগস্ট টেকনাফ সীমান্তে ৩ লাখ ৪০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেন বিজিবি সদস্যরা। তবে এ সময় কাউকে আটক করতে পারেনি বিজিবি।

স্থানীয়রা জানান, মাদকের টাকায় টেকনাফের দক্ষিণ জালিয়াপাড়া, মৌলভীপাড়া, হ্নীলা, ডেইলপাড়া, নেঙ্গরবিল, গোদারবিল, কুলালপাড়া ও লেদা এলাকায় গড়ে উঠেছে রাজ প্রাসাদের মতো অর্ধশতাধিক বাড়ি। এসব বাড়ির মালিকরা ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মাদক ব্যবসায়ীদের বাড়ি, গাড়ি ও ব্যাংক ব্যালান্সের তথ্যও সংগ্রহ করতে শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

টেকনাফে মাদক ব্যবসায়ী নূরুল হুদার বাড়ি

এলাকাবাসী জানান, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নে ঢুকতেই রাস্তার মাথায় গেলে চোখে পড়ে গোলাপি ও টিয়া রঙের রাজপ্রাসাদের মতো একটি বাড়ি। একাধিক নিরাপত্তারক্ষীর পাশাপাশি ডজনখানেক সিসিটিভি ক্যামেরাও রয়েছে এ ভবনে। এর মালিক নুরুল হুদা। তিনি এলাকায় ‘ইয়াবার রাজা’ হিসেবে পরিচিত। তার বড় ভাই নূর মোহাম্মদ মাদকবিরোধী অভিযানে ২০১৩ সালে মারা যান। নূরুল হুদা এই বছর মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হলে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। এখন আবার এলাকায় ফিরেছেন। তার মতো অনেক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী আবারও ফিরে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরমধ্যে টেকনাফ পৌর এলাকার মো. জোবাইর, মো. সালমান, মো. রাসেল। তারা শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তাদেরও রয়েছে রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি। তাদের মধ্যে জোবাইর, সালমানের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা, অস্ত্র  ও ইয়াবা মামলা রয়েছে বলে টেকনাফ থানার ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়া নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া তিনজনের নামই সরকারের হাতে থাকা মাদক চোরাকারবারিদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রতিদিন মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এসব অভিযানে ধরা পড়ছে ইয়াবা চালান। ধরা পড়ছে পাচারকারী ও ব্যবসায়ী। তবে শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীরা অধরা থেকে যাচ্ছে। চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাদকসহ মোট ১৪২ জনকে আটক  করে। এ ঘটনায় ১১৪টি মামলা দায়ের হয়। এরমধ্যে পুলিশের ৫৫ মামলায় ৭৩ জন, বিজিবির ৩০ মামলায় ৩৫ জন, কোস্টগার্ডের ২ মামলায় ৪ জন, র‌্যাবের ১২ মামলায় ১৫ জন, মাদকদ্রব্য অধিদফতরের ১৬ মামলায় ১৮ জনকে আটক  করা হয়। এ অভিযানে সাড়ে ২৩ লাখ ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়। তবু থামছে না ইয়াবা পাচার। টেকনাফে মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ি

সীমান্তে ইয়াবার ৩৭টি কারখানা রয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে ইয়াবার চাহিদা এখনও  কমেনি। ইয়াবার ব্যাপক চাহিদা মেটাতে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থাপিত হয়েছে ৩৭টি কারখানা। মিয়ানমারের আট সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে এগুলো পরিচালিত হচ্ছে। মিয়ানমারভিত্তিক ১০ ডিলার ওইসব কারখানায় তৈরি করা প্রতিদিন গড়ে ৩০ লাখের বেশি ইয়াবা পৌঁছে দেয় টেকনাফের ডিলারদের কাছে। আর ইয়াবা চোরাচালানের বিপরীতে সীমান্তের ওপারে যাচ্ছে ১০০ কোটি টাকার ওপরে।

মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনাকারী এক  পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ইয়াবা বেচে অনেকে টেকনাফে রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি বানিয়েছেন। অভিযান শুরু হলে তারা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়।

টেকনাফ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আবদুল্লাহ মনির জানান, ‘মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হলে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। তবে কিছু ব্যবসায়ী আবার এলাকায় ফিরে এসেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।’

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রনজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘ইয়াবা ব্যবসায়ীদের রাজপ্রাসাদে আবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে। ইয়াবার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ইয়াবারোধে অভিযান চলমান রয়েছে।’

র‌্যাব-১ টেকনাফ ক্যাম্পের ইনর্চাজ লে. মির্জা শাহেদ মাহতাব বলেন, ‘সীমান্তে ইয়াবা ঠেকাতে র‌্যাব সদস্যরা অভিযান অব্যাহত রেখেছে। আগের দুটিসহ র‌্যাবের পাঁচটি ক্যাম্প ইয়াবাবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে।’

আরও পড়ুন- 

‘রাজপ্রাসাদ’ ছেড়ে পালিয়েছে ইয়াবা ‘বাবা’রা

নজরদারি বাড়লেও মাদক আসছে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে

 

 

 

/এনআই/এফএস/টিএন/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
ইসলামী ব্যাংকের নোয়াখালী জোনের কর্মকর্তা সম্মেলন
ইসলামী ব্যাংকের নোয়াখালী জোনের কর্মকর্তা সম্মেলন
ওলামা দলের আংশিক কমিটি দিয়েছে বিএনপি
ওলামা দলের আংশিক কমিটি দিয়েছে বিএনপি
‘হিট ইমারজেন্সি’ জারির আহ্বান সাইফুল হকের
‘হিট ইমারজেন্সি’ জারির আহ্বান সাইফুল হকের
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী