X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আসছে না ভারতীয় গরু, চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাটগুলোতে গরুর দাম চড়া

আনোয়ার হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
১৬ আগস্ট ২০১৮, ১৭:১২আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০১৮, ২১:২৬

চাঁপাইনবাবগঞ্জে গরুর হাটে চলছে গরু ক্রয়-বিক্রয় কোরবানির ঈদের আর বাকি মাত্র ছয় দিন। তবে এখনও জমে ওঠেনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের পশুরহাটগুলো। এবার হাটগুলোতে ভারতীয় গরুর দেখা মিলেছে কম, ফলে দেশি গরুর চড়া দাম হাঁকছেন ব্যবসায়ীরা। তাই পছন্দের পশু কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। হাটের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন হাট কমিটির নেতারা। এদিকে প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, ভারতীয় গরু না আসলেও ঈদে গরুর কোনও সংকট হবে না। পাশাপাশি স্থানীয় খামারিরাও লাভবান হবেন।

প্রতি বছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে, দেশের কোরবানির পশুর একটি বড় অংশ সরবরাহ হয় সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে। এবার চিত্র কিছুটা ভিন্ন। খাটালগুলো বন্ধ থাকায় সীমান্ত পথে আসছে না ভারতীয় গরু। যার প্রভাব পড়েছে পাইকারি পশুর হাটগুলোতে।

তত্তিপুর হাটে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে এসব গরু এছাড়া গত দু’বছর ভারতীয় গরুর কারণে খামারিরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায়, এবার স্থানীয়ভাবেও গরু পালন হয়েছে অনেক কম। এতে হাটগুলোতে দেখা গেছে গরুর সরবরাহ গত বছরের তুলনায় অনেক কম। আর বাজারে ভারতীয় গরু কম থাকায় চাহিদা বেড়েছে দেশি গরুর। বিক্রেতারা বলছেন, এজন্য দামটা একটু বেশি। এদিকে দাম বেশি হওয়ায় সন্তুষ্ট নন ক্রেতারা।

স্থানীয় খামারি কামাল উদ্দিন বলেন, ‘এবার হাটগুলোতে দেশি গরুর দাম পাচ্ছে খামারিরা। ভারত থেকে এবার গরু না আসায় ক্রেতারা কোরবানির জন্য দেশি গরুর দিকে ঝুঁকছেন। দাম ভালো পাওয়ায় আমরা খুশি। তবে শেষ মুহূর্তে ভারতীয় গরু প্রবেশ করলে গত দু’বছরের মত আবারও লোকসানের আশঙ্কা আছে খামারিদের। কথা হয় মনাকষা হাটে গরু বিক্রি করতে আসা আব্দুল করিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এবার গরু পালন করে ন্যায্য মূল্য পেয়েছি। ভারত থেকে গরু আসলে এ মূল্য পেতাম না।’

তত্তিপুর হাটে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে এসব গরু আরেক ব্যবসায়ী আব্দুল বাসেদ বলেন, ‘সারা বছর গরু পালন না করলেও, কোরবানির সময় গ্রাম থেকে গরু কিনে পরে তা জেলার বিভিন্ন হাটে বিক্রি করি। গ্রাম থেকে ২৭ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনে তত্তিপুর হাটে তা বিক্রি করেছি ৪৭ হাজার টাকায়। এতে আমি ভালো লাভ করেছি।’ এ অবস্থায় বিক্রেতাদের দাবি, শেষ মুহূর্তে যেন ভারতীয় গরু আমদানি না হয়।

এদিকে, গরুর দাম বেশি হওয়ায় তা কিনতে বেশ হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। ক্রেতাদের অভিযোগ, ভারতীয় গরুর আমদানি কম হওয়ায় দেশি গরুর দাম বেশি হাঁকছেন ব্যবসায়ীরা। যে গরু গত বার ৫০ থেকে এক লাখ টাকায় পাওয়া গেছে এবার তা ৮০ থেকে দেড় লাখ টাকায় কিনতে হচ্ছে। যেটা মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের জন্য কষ্টকর। জেলার সবচেয়ে বড় দুটি হাট তত্তিপুর ও মনাকষা হাটের অনেক ক্রেতা বাংলা ট্রিবিউনকে এমনটাই জানিয়েছেন।

তত্তিপুর পশুর হাটে গরু ক্রয় বিক্রয় চলছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যাপারীরা প্রতিবছরই চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত হাটগুলো থেকে গরু কিনে নিয়ে যান। কিন্তু এবার সরবরাহ কম থাকায় এবং চড়া দামের কারণে চাহিদা অনুযায়ী গরু কিনতে পারছেন না ব্যাপারীরাও। তবে হাটের নিরাপত্তা ও সুযোগ সুবিধা নিয়ে তাদের কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
নোয়াখালি থেকে গরু ক্রয় করতে আসা ব্যাপারী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গত ২৫ বছর ধরে আমি চাঁপাইনবাবগঞ্জের তত্তিপুর হাটে গরু কিনে আসছি। কিন্তু দাম বেশি হওয়ার কারণে এবার চাহিদা অনুযায়ী গরু কিনতে পারছি না। তিনি বলেন, ‘গরু প্রতি ৮ হাজার টাকা রাস্তা খরচ আছে। এ অবস্থায় এতো চড়া দামে গরু কিনে আমাদের পোষাবে না। কারণ চড়া দামে গরু কিনে আমাদের চড়া দামেই বিক্রি করতে হবে। শেষ পর্যন্ত যদি বিক্রি করতে না পারি, এই আশঙ্কায় আমরা চাহিদা অনুযায়ী গরু কিরতে পারছি না।’

মনকষা হাটে এই গরুর দাম হাঁকা হয় দুই লাখ টাকা হাটগুলোতে গরুর সংখ্যা কম হলেও, এবারও পশুর সংকট হবে না বলে দাবি প্রাণিসম্পদ বিভাগের। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আনন্দ কুমার অধিকারি বলেন, ‘জেলায় এবার ৮৭ হাজার ৭২৩টি গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও গাড়ল পালিত হয়েছে। যার মধ্যে গরুর সংখ্যা ৫০ হাজার ৫৬১টি। যেগুলো মূলত বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির উদ্দেশ্যেই লালন-পালন করা হয়েছে। আর এসব পশু প্রাণী বিভাগের কঠোর নজরদারির মধ্যে ছিল। বাকি গরু-ছাগল পারিবারিকভাবে স্থানীয় পর্যায়ে কোরবানির জন্য লালন-পালন করা হয়েছে। এজন্য জেলায় এবারও কোরবানিতে গরুর কোনও সংকট হবে না। বরং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখানকার গরু-ছাগল বিক্রির জন্য সরবরাহ করা হবে।’

আনন্দ কুমার অধিকারি বলেন, ‘এবার জেলার পাঁচ উপজেলায় কোরবানির হাটগুলোতে ১১টি ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এ সকল টিম নির্ধারিত দিনে পশুর হাটগুলোতে স্থানীয় প্রশাসন ও হাট ইজারাদারদের সঙ্গে রোগাক্রান্ত গরু শনাক্তকরণে কাজ করছে।’

প্রাণিসম্পদ বিভাগের এই কর্মকর্তা আরও বলেন ‘কোরবানির জন্য আমাদের ভারতীয় কোনও গরুর প্রয়োজন নেই। তাছাড়া কোরবানিতে দেশের মানুষের প্রথম পচ্ছন্দই থাকে দেশি গরুর। আর দাম বেশির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিগত দুই বছর খামারিরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এ বছর তারা দাম ভালো পাচ্ছেন। তবে এখনকার অর্থনৈতিক মানদণ্ড অনুযায়ী গরুর বর্তমান দাম খুব একটা বেশি না।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আগের চেয়ে মানুষের আয় বেড়েছে। আর এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশীয় খামারি ও ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি আগামীতে গরু প্রতিপালনের ধারাবাহিতকাও বজায় থাকবে।’

 

 

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!