ঈদযাত্রায় এখন পর্যন্ত স্বস্তিতে আছেন উত্তরবঙ্গসহ সংলগ্ন ২৬টি জেলার মানুষ। কোনও রকম বিপত্তি ছাড়াই ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক দিয়ে নির্বিঘ্নে ঘরে ফিরছেন তারা। ঈদের তিন দিন আগে শনিবার (১৮ আগস্ট) বিকাল পর্যন্ত এই চেহারা দেখা গেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহাসড়কের।
রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়ক পথে উত্তরবঙ্গের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম এই মহাসড়কটি। প্রতিবছর ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষ বহনকারী যানবাহনের ভিড়ে এই মহাসড়কে সৃষ্টি হতো দীর্ঘ যানজটের। ফলে ভোগান্তিতে পড়তেন চালক ও যাত্রীরা। ঈদের আগে একদিন এই মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হলে তার রেশ থাকতো পরের দিনগুলোতেও। মহাসড়কের বেহাল অবস্থা, সংস্কার কাজ, উন্নয়ন কাজ, মহাসড়কের ওপরে পশুর হাট বসানো, বিভিন্ন জেলায় রাস্তা সংলগ্ন বাজার-হাট, সড়ক দুর্ঘটনা, পশুবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন ভারী যানবাহনের একইসঙ্গে চলাচল, সাভার থেকে চন্দ্রা এলাকা পর্যন্ত গার্মেন্টস শ্রমিকবাহী বাস এলোমেলোভাবে রাখাসহ নানা কারণে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় যাত্রার কারণে যাত্রীরা পড়তেন দুর্বিসহ পরিস্থিতিতে, আর যানবাহনগুলোও গন্তব্যে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছাতে ও ফিরে আসতে না পারায় বাসের শিডিউল হয়ে যেত এলোমেলো। তবে গত ঈদুল ফিতরে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ায় এই মহাসড়কে যানজট তেমন একটা ছিল না। সেই অভিজ্ঞতাই এবার আরও কার্যকর করছে সরকার। ঈদ যাত্রায় এ মহাসড়কে টাঙ্গাইল অংশে এখন পর্যন্ত কোনও যানজটের সৃষ্টি হয়নি।
ঈদ যাত্রায় আজ শনিবার দুপুরে ব্যস্ততম মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিক যান চলাচল করতে দেখা গেছে।
এদিকে, এই মহাসড়কে সংস্কার ও চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বেশ কিছু কাজ শেষ হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে যান চলাচলে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে গাজীপুরের ভোগড়া পর্যন্ত ৭০কি.মি. সড়কে ২৩টি নতুন সড়ক সেতু দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে যান চলাচল করছে। গত দুই বছর এসব এলাকায় নির্মাণ কাজের জন্য গাড়ির গতি ধীর হওয়ায় প্রচণ্ড দুর্ভোগের সৃষ্টি হতো। গত ১৪ আগস্ট বিকেলে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই ব্রিজগুলো উদ্বোধন করেন।
জানা যায়, বিগত কয়েক বছর যাবৎ মহাসড়কে চার লেন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় এই সড়কে যাতায়াতরত মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হন। ৫ ঘণ্টার রাস্তা পৌঁছাতে লাগতো ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত। দূর উত্তরের জেলা রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, পঞ্ছগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুরে পৌঁছাতে ঈদের সময় ২০-২২ ঘণ্টাও লাগতো বলে অভিযোগ ছিল যাত্রীদের। তবে এবার এমন পরিস্থিতি হবে না বলেই আশাবাদী এ প্রকল্পের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে চালক এবং যাত্রীরাও।
টাঙ্গাইলের সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল এহসান বলেন, ‘বর্তমানে মহাসড়কের ২৩টি সড়ক সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে চার লেন প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ প্রায় ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। আর এ কারণে এবারের ঈদযাত্রায় ভোগান্তি ছাড়াই এ সড়ক দিয়ে স্বস্তিতে ঘরমুখো মানুষ বাড়ি ফিরতে পারবেন।’
স্বস্তির এই পরিবেশ ঈদযাত্রায় অব্যাহত রাখতে ট্রাফিক পুলিশের পর্যাপ্ত নজরদারি আর মহাসড়কের পাশে গরুর হাট না বসানোর অনুরোধ জানিয়েছেন বিভিন্ন বাসের চালক ও যাত্রীরা।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট আজিজুর রহিম তালুকদার বলেন, ‘ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে এখন পর্যন্ত কোনও যানজটের সৃষ্টি হয়নি। আশা করছি, এবার কোনও প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই মানুষ বাড়ি ফিরতে পারবেন।’
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) সঞ্জিত কুমার রায় জানান, ‘আসন্ন ঈদযাত্রায় মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে পুলিশ প্রশাসন সার্বক্ষণিক মহাসড়কে অবস্থান করবে।’ ইতোমধ্যে মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্বে রয়েছেন।