তিস্তা নদীর অব্যাহত ভাঙনে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার ৭ টি গ্রামের ৫শ’রও বেশি বাড়ি-ঘর, স্কুল, মসজিদ-মন্দির নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে গৃহহারা হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। ভাঙন প্রতিরোধে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এবার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী আন্দোলনে নেমেছে। চলছে ঘেরাও, মানববন্ধন আর বিক্ষোভ।
কাউনিয়া উপজেলার চর হৈবতখাঁ , চর গনাই, চর গোদাই , নিজ পাড়া , চর বিশ্বনাথ , কালিরহাট ও পাঞ্চর ভাঙা এই ৭টি গ্রামে তিস্তা নদীর ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। গত ১৫ দিনে ৫ শতাধিক বাড়ি-ঘর একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মসজিদ মন্দির নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ৩শ’ একর আবাদি জমিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গৃহহারা হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন এই সাত গ্রামের মানুষ।
সরেজমিন ভাঙন কবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকালে যে বাড়ি দেখা যায় দুপুরে তা নেই। বাড়ির ঘর, গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দেড়শ বছরের পুরনো তিস্তা রেলওয়ে সেতু ও এর পাশে নির্মিত সড়ক সেতুর অদূরে ৭টি গ্রামে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। ঢুস মারার চরে অবস্থিত একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ৫দিন আগে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অন্যদিকে, চর গোনাই গ্রামের দুটি পাকা মসজিদ ও ২টি মন্দির এক সপ্তাহ আগে নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসী। ওই গ্রামের অন্তত ২শ বাড়ি ভাঙনের মুখে রয়েছে। সেখান থেকে তিস্তা নদী মাত্র ১০ থেকে ৫০ গজ দূরে। এই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে এখন চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কাউনিয়া বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক সালেহিন আহাম্মেদ জানান, তার ১৫ বিঘা আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। এখন বাস্তুভিটা আর অবলম্বন কিছুই নেই। এই অবস্থায় যে কোনও মুহুর্তে তাও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে কোথায় যাবেন তিনি বলে হাউ মাউ করে কেঁদে ফেললেন।
সবিতা রানী, লক্ষিন চন্দ্র সহ কয়েকটি হিন্দু পরিবারের সদস্যরা জানান, তাদের বেশিরভাগ জমি জমা নদীতে চলে গেছে। মন্দিরটি নদী গর্ভে গেছে। যেভাবে নদী ভাঙছে, তাতে করে তাদের বাস্তুভিটা রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
তাদের অভিযোগ, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে অনেকবার দেখা করে আকুতি জানিয়েছি। কিন্তু,তারা ভাঙন রোধে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।
পাশের পাঞ্চর ভাঙ্গা আর কালিরহাট গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে আবাদী জমির ধান গাছ কেটে ফেলছে মানুষ। গ্রামবাসী সোণেমান মিয়া, আগুতি বেওয়া, নাদিয়া বেগমসহ অনেক গ্রামবাসী জানান, তিস্তা নদীর ভাঙন থেকে তাদের রক্ষা করতে হলে তিস্তা সড়ক ও রেল সেতু থেকে ডান তীরে বেড়িবাঁধ দিতে হবে। তা না হলে ৭টি গ্রামের কোনও অস্তিত্ব থাকবে না।
এদিকে তিস্তা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে আজ শুক্রবার হাজারো নারী পুরুষ শিশু কাউনিয়া তিস্তা ব্রিজের কাছে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি সামসুল ইসলাম , মনোয়ার হোসেন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন শিক্ষবিদ নজরুল ইসলাম হক্কানী।
বক্তারা জানান,দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। মানববন্ধন শেষে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। পরে তারা ইউএনও বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করেন।
ইউএনও নাজিয়া সুলতানা স্মারকলিপি গ্রহণ করে বলেন, কাউনিয়া উপজেলাবাসী ভীষণ বিপদের মুখে। বিষয়টি আমি মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি, জেলা প্রশাসককে অবহিত করেছি। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বস্বান্ত পরিবারগুলোর মাঝে ঢেউ টিন আর নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তিনি বিক্ষোভকারীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান মামুনর রশীদ বলেন, তিস্তার ভাঙন থেকে রক্ষা করতে হলে কাউনিয়ায় ডান তীরে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার কোনও বিকল্প নেই। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।