X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

দিনাজপুরে ঈদগাহ মাঠ দখল, নামাজ আদায় নিয়ে সংশয়ে মুসল্লিরা

দিনাজপুর প্রতিনিধি
২১ আগস্ট ২০১৮, ১৭:৩২আপডেট : ২১ আগস্ট ২০১৮, ১৭:৩৩

ভেলামারী গ্রামের ঈদগাহ মাঠ দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে ওয়াকফ করা জমি দখল করে নিয়েছেন দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি। এই জমিতে ঈদের নামাজ আদায় করেন এলাকাবাসী। দখল হওয়য়ায় এবারের ঈদের নামাজ আদায় নিয়ে সংশয়ে আছেন মুসল্লিরা। বিষয়টি তদন্ত করে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

ঘোড়াঘাট উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের ভেলামারী গ্রামের ঈদগাহ মাঠের জায়গাটি কাগজে-কলমে ৯০ শতক। ব্রিটিশ আমল থেকেই পীরোত্তর মাদার পীর ওয়াকফ এস্টেট হিসেবে ঈদগাহ মাঠসহ ৩ একর ৮৬ শতক জমি জিম্মার দায়িত্ব পান ওই এলাকার আমীর উদ্দিন। বাকি জমির মধ্যে রয়েছে পুকুর ৮৫ শতক, পুকুরপাড় ৬৫ শতক এবং ডাঙ্গা ও আবাদি জমি এক একর ৪৬ শতক।

ব্রিটিশ আমলে ওয়াকফ এস্টেটের এই জমিটির দেখাশোনার দায়িত্ব পান আব্দুল খাঁর ছেলে আমীর উদ্দিন খাঁ। পরবর্তীতে বংশানুক্রমে ওই জমি দেখাশোনা করছিলেন আমির উদ্দিনের ছেলে ফারাজ উদ্দিন ও কামাল উদ্দিন। কিন্তু ২০০৪ সালে আমির উদ্দিনের দুই ছেলে ফারাজ উদ্দিন ও কামাল উদ্দিন জমিগুলো নিজেদের নামে করে নেন। পরবর্তীতে তারা ওই ঈদগাঁ মাঠ কেটে আবাদি জমি করে চাষাবাদ শুরু করেন।  বর্তমানে ঈদগাহ মাঠের পরিমাণ মাত্র ৩ শতক। এই স্বল্প জায়গায় নামাজ আদায় করতে পারছেন না গ্রামবাসী। তাই তাদের দাবি, গ্রামের মুসল্লীদের ব্যবহারের জন্য ওই জমি গ্রামবাসীর জিম্মায় দেওয়া হোক।

এলাকার বাবু মিয়া জানান, গাছগুলোও বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। যেটুকু জমি আছে তার পরিমাণ আড়াই থেকে ৩ শতক হবে। এই জমিতে গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে না।

আফতাব উদ্দিন জানান, জমিগুলো পীরোত্তর মাদার পীর ওয়াকফ এস্টেটের বলেই জেনে এসেছি। কিন্তু গত প্রায় ১০-১২ বছর ধরে জমিগুলো গ্রামবাসীদেরকে ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না। এই জমির যা আয় তা দিয়ে এলাকার মসজিদ, গরিব মেয়েদের বিবাহসহ সামাজিক কার্যক্রম হওয়ার কথা। কিন্তু জমিগুলো ভোগদখল করে আসছে এলাকার ফারাজ উদ্দিন ও কামাল উদ্দিনের পরিবার।

এলাকার আমজাদ হোসেন বলেন, ‘বাপ-দাদারা এই জমিতে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। কিন্তু এখন আমরা ঈদের নামাজ আদায় করতে পারছি না। এলাকার লোকসংখ্যা বাড়লেও দিনে দিনে কমে যাচ্ছে ঈদগাহ মাঠের জায়গা। জায়গা কেটে আবাদী জমি করা হচ্ছে। জীবদ্দশায় এই মাঠে যেন সবাই মিলে নামাজ আদায় করতে পারি, এটাই সরকারের কাছে কামনা।’

এলাকার মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জমিগুলো গ্রামবাসীদের ব্যবহারের জন্য হলেও কাউকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। ঈদের সময়টাতে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারি না। এতটা মনকষ্ট নিয়ে রয়েছি এলাকাবাসী। সরকার যাতে এমন পদক্ষেপ নেয়, যেন সবাই খুশিমনে একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারি।’ 

মুসল্লিদের ঈদগাহ মাঠ পুনরুদ্ধারে ওয়াকফ প্রশাসন বরাবরে একটি আবেদন করেছে গ্রামবাসী। প্রয়োজনীয় তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসীর পক্ষে প্রস্তাবিত কমিটির নেতারা। প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি মকবুল হোসেন জানান, এখন কামাল উদ্দিন ও ফারাজ উদ্দিনের ছেলেরা এই মাঠ ছেড়ে দিতে চায় না। এই মাঠের বদলে অন্যস্থানে নামাজ পড়তে বলে গ্রামবাসীকে। তাই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই মাঠ উদ্ধার করার। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকসহ ওয়াকফ এস্টেটে আবেদন করা হয়েছে।

কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, ১৯৪০ সাল থেকেই ফারাজউদ্দিনের পরিবার জমিটি দেখাশোনা করে আসছে। ২০০৪ সালে জরিপের সময় তারা জমিটি নিজেদের নামে করে নেয় এবং গ্রামবাসীদের ব্যবহারের জন্য জমিগুলোতে যেতে বাধা দেওয়া শুরু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াকফ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ওয়াকফ নীরিক্ষক তদন্ত করে গেছেন। বর্তমানে জেলা প্রশাসকের তদন্ত চলছে।

জমি নিজের নামে করে নেওয়া ফারাজ উদ্দিনের ছেলে ফজলার রহমান বলেন, ‘জমিদার সময়ে দাদার নামে জমিগুলো করে দেওয়া হয়। তখন থেকে ভোগদখলসহ খাজনা খারিজ করে আসছি। জমিগুলো ওয়াকফ এস্টেটের জানা ছিল না। এই জমি ব্যবহার এবং ঈদের নামাজ আদায়ে কাউকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। ’

সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মন্ডল বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে জনগণের ব্যবহারের জন্য জমি হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে আইন অনুযায়ী যারা প্রাপ্য তাদেরকে দেওয়া হোক।’

বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেছেন এলাকাবাসী। যা তদন্তের দায়িত্ব পড়েছে ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ওপর।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এমএ মমিন বলেন, ‘খতিয়ান মোতাবেক এটি পীরোত্তর সম্পত্তি হিসেবে রেকর্ড রয়েছে। ইতোমধ্যে এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি আবেদন করেছে। যেটির তদন্ত করা হচ্ছে, দ্রুত তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। মুসল্লিদের নামাজ আদায় নিয়ে যেন সমস্যা না হয়, সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

 

/এনআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ