X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

এখনও মেলেনি কোরবানির পশু, হতাশায় রোহিঙ্গারা

আবদুল আজিজ, কক্সবাজার
২১ আগস্ট ২০১৮, ১৮:৩৯আপডেট : ২১ আগস্ট ২০১৮, ১৮:৫৫

রাজুমা খাতুন ও মোজহার মিয়া রোহিঙ্গা বৃদ্ধা রাজুমা খাতুন, বয়স ষাটের কাছাকাছি। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের মুখে পালিয়ে আসেন বাংলাদেশে। আশ্রয় জুটে উখিয়ার কুতুপালং টিভি কেন্দ্রের পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত বটতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭-ই ব্লকে। ১০ বছর আগে মিয়ানমারের মংডু উপজেলার নাকপুরা ইউনিয়নের মাঝের মসজিদ গ্রামে স্বামীকে হারান এই নারী। সংসারে ছয় ছেলে ও এক মেয়ে, এখন তাদের কেউই পাশে নেই রাজুমার।ছেলে-মেয়েরা যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ক্যাম্পেই আট বছরের এক নাতনির সঙ্গে সংসার নাজুমা খাতুনের। ২০ আগস্ট এ প্রতিবেদক সরেজমিন গেলে কথা হয় রাজুমা খাতুনের সঙ্গে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনের দীর্ঘ গল্প শোনার পর রাজুমা খাতুন বলেন, ‘কোরবানির ঈদ যে কী, গত বছর তা ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। কোরবানির একদিন পর শুরু হয় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তাণ্ডব। তখন অন্য রোহিঙ্গাদের মতো আমিও বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিই। এই ক্যাম্পে আছি একবছর পূর্ণ হয়েছে। ত্রিপল মোড়ানো কুড়ে ঘরে থেকেও কোনও কষ্ট হয়নি। নিয়মিত ত্রাণ সহায়তা পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (২২ আগস্ট) কোরবানির ঈদ। এখনও কোরবানির পশুর কোনও খবর নেই। শুনেছি, বাংলাদেশ সরকার এবং এনজিও’রা  কোরবানির জন্য আমাদের পশু দান করবে। সত্যিই তারা যদি কোরবানির পশু দান করে, তাহলে একবছর পর গরুর মাংস দিয়ে দু’মুঠো ভাত খেতে পারবো।’

রাজুমা খাতুন বলেন, ‘ক্যাম্পে আমাদের কোনও কষ্ট নেই। এরপরও ইচ্ছে করে রাখাইনে ফেলে আসা নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে। কিন্তু সেই পরিবেশ কি কখনও হবে, নাকি বাংলাদেশের এই কুড়ে ঘরে বাকি জীবন কাটিয়ে মরতে হবে? এই মরণ যদি রাখাইনে হয়, তাহলে আমার আত্মা শান্তি পাবে। কারণ, সেখানেই রয়েছে আমার পিতা-মাতা ও স্বামীর কবর’।

একই ক্যাম্পের সত্তর বছরের রোহিঙ্গা বৃদ্ধ মোজাহের মিয়া বলেন, ‘রমজানের ঈদে ভারী বৃষ্টি হলেও আশা করি,  কোনবানির ঈদে তেমনটি হবে না। এতে করে অন্তত ঈদের নামাজটি ভালো করে আদায় করা সম্ভব হবে। তবে আপসোস থেকে যাবে, এ বছর কোরবানি দিতে পারছি না। প্রতিবছর রাখাইনে আমি কোরবানির সময় পশু কোরবানি দিলেও গত বছর এবং এবছর পশু কোরবানি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না’।

মোজাহের মিয়ার মতে, ‘ক্যাম্পের প্রতি ব্লকে একজন মাঝির (রোহিঙ্গা নেতা) আওতায় ১০টি করে কোরবানির পশুর দেওয়ার কথা শুনেছি। কিন্তু এপর্যন্ত একটি পশুও দেখা যাচ্ছে না। কাল (বুধবার) কোরবানির ঈদ। ১০টি নয়, একটি পশুও যদি দেওয়া হয়, অন্তত এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) মাংস পাবো। তাতেই আমরা খুশি হবো।’

রাজুমা খাতুনের সঙ্গে কথা বলছেন বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিনিধি শুধু রাজুমা খাতুন ও মোজাহের মিয়া নয়, তাদের মতো আরও অনেকেই জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এখনও কোরবানি পশুর দেখা মেলেনি। এতে করে কোরবানির পশু নিয়ে তাদের শঙ্কা কাটছে না। তবে তারা আশায় বুক বেঁধেছে, যে শেষ মুহূর্ত হলেও কোনও না কোনোভাবে কোরবানির মাংস তাদের ঘরে পৌঁছাবে।

জানতে চাইলে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা খুবই হতাশ। কোরবানির ঈদের প্রস্তুতি হিসেবে আমরা দফায় দফায় বৈঠকে বসেছি। কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ও দেশি-বিদেশি এনজিও’র সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। বৈঠকে কোরবানির পশু ও কোরবানির পরবর্তী বর্জ্য পরিষ্কারসহ নানা সিদ্ধান্ত হয়। এতে বিভিন্ন এনজিও আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে, উখিয়া ও টেকনাফে প্রতিটি ক্যাম্পে ১০০ থেকে ৩০০ করে কোরবানির পশু দান করা হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দুয়েকটি এনজিও ছাড়া তাদের পক্ষ থেকে কোনও প্রকার সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে আমরা হাল ছাড়িনি। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু কোরবানির পশু ক্রয় করা হচ্ছে’। 

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গারাও আমাদের মতো মুসলিম উম্মাহ। সুতরাং এখানে কোরবানির পশুর বিষয় জড়িত আছে। ইতোমধ্যে স্থানীয়ভাবে, বিভিন্ন এনজিও, সংগঠন ও ব্যক্তিগতভাবে কোরবানির পশু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা দেড় হাজার কোরবানির পশু বিতরণের একটি টার্গেট নিয়েছি। এই পশুগুলো আসা মাত্র উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে স্ব-স্ব ক্যাম্পে বিতরণ করা হবে। তারা যাতে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারে সেজন্যই এই ব্যবস্থা।’

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী