বিভাগীয় নগরী রংপুরে পুলিশ ‘নো হেলমেট নো পেট্রোল’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ মোটরসাইকেল চালকরা হেলমেট না পড়লে তাদের কাছে পেট্রোল পাম্প কতৃপক্ষ কোনওভাবেই যাতে পেট্রোল বা অকটেন বিক্রি না করেন সেই আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে নগরীর প্রতিটি পেট্রোল পাম্পে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের এই কর্মসূচিতে নগরবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও বেশিরভাগ মানুষই পুলিশের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনা থেকে মোটরসাইকেল চালকদের রক্ষা করতে হেলমেট পরে রাস্তায় চলাচল বাধ্য করার জন্যই রংপুরের পুলিশ প্রশাসন ‘নো হেলমেট নো পেট্রোল’ কর্মসূচি শুরু করেছে। শনিবার সন্ধ্যায় রংপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হেলমেট ছাড়া কোনও মোটরসাইকেল চালকের কাছে পেট্রোল পাম্প তেল বিক্রি করা হবে না বলে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রবিবার সকাল থেকে নগরীর সব পেট্রোল পাম্পে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। হেলমেট না থাকলে পেট্রোল বিক্রি না করার জন্য পাম্প মালিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে হেলমেটবিহীন চালকদের মোটরসাইকেলসহ আটক করছে পুলিশ। তবে হেলমেট আনার পর মোটরসাইকেল ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরীর শাপলা চত্বর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে পুলিশের একটি দল হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল আটক করে চাবি নিয়ে নিচ্ছে। পুলিশ বলছে হেলমেট নিয়ে আসলেই মোটরসাইকেল ফেরত দেওয়া হবে। একইভাবে সেখানে থাকা পেট্রোল পাম্পেও হেলমেট ছাড়া কোনও মোটরসাইকেলের আরোহীকে পেট্রোল দেওয়া হচ্ছে না। এ ব্যাপারে পেট্রোল পাম্পের ম্যানেজার আবুল কালাম জানান, ‘পুলিশ প্রশাসন নির্দেশ দিয়েছে হেলমেট ছাড়া কোনও মোটরসাইকেল চালকের কাছে পেট্রোল বা অকটেন বিক্রি করা যাবে না। আমরা এই নির্দেশ মেনেই পেট্রোল বিক্রি করছি।’ তবে ওই পেট্রোল পাম্পের কর্মচারী মমতাজ মিয়া জানালেন, ‘আমারা পেট্রোল পাম্পগুলোতে হেলমেট ছাড়া তেল বিক্রি করছি না। কিন্তু নগরীর বিভিন্ন এলাকায় খোলা পেট্রোল ও অকটেন বিক্রি হয় যেসব দোকানে, তারা তো হেলমেট আছে কিনা দেখছে না । সে কারণে পুলিশের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হলে এসব খুচরা দোকানদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
এদিকে হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল নিয়ে নগরীতে বের হওয়ার পর পুলিশের হাতে ধরা পড়া নগরীর গুপাপাড়া মহল্লার রবিয়াত হোসেন জানান, ‘আমার বাড়ির কাছেই পেট্রোল পাম্প। এ কারণে পেট্রোল নিতে আসার সময় হেলমেট আনিনি। এ কারণে পুলিশ আমার মোটরসাইকেল আটক করেছে। পুলিশ প্রশাসনের এ উদ্যোগ ভালো। কিন্তু আগে থেকে প্রচারণা না থাকায় আমি বুঝতে পারিনি।’
একই কথা জানালেন পীরগঞ্জ থেকে আসা স্কুলশিক্ষক সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘হেলমেট ছাড়া পেট্রোল নেওয়া যাবে না জানতাম না। হেলমেট পরে মোটরসাইকেল চালানো ভালো। এতে দুর্ঘটনা থেকে অন্তত মাথাটা রক্ষা পায়।’
শাপলা চত্বরে দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তা এসআই আব্দুল্লা জানান, ‘হেলমেট না পরে মোটরসাইকেল চালালে আমরা সেটা আটক করছি। তবে হেলমেট নিয়ে আসলে আমরা মোটরসাইকেল ছেড়ে দিচ্ছে। আমরা জনগণের মাঝে এ বার্তা দিতে চাই, হেলমেট পরে মোটরসাইকেল চালান, নিজে বাঁচুন। আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’
নগরীর স্টেশন এলাকায় সালেক পাম্পে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। সেখানে দুজন পুলিশ সদস্য অবস্থান করে হেলমেট ছাড়া তেল বিক্রি করা হচ্ছে কিনা তা দেখভাল করছেন। পুলিশ সদস্যরা জানান, তাদের ওপর নির্দেশ আছে হেলমেট ছাড়া কোনও মোটরসাইকেল চালকের কাছে পেট্রোল বা অকটেন বিক্রি করা যাবে না। সেখানেও বেশ কয়েকজন হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল চালক পেট্রোল নিতে এসে ফিরে গেছেন।
রংপুর নগরীর মডার্ন মোড়, সিও বাজার, বাস টার্মিনাল, সিও বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি পেট্রোল পাম্পেই পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে নগরীর বেশ কিছু এলাকায় হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল এখনও চলতে দেখা গেছে।
রংপুর জেলা পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তাফা সোহরাব টিটো বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘শনিবার জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আমাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেখানে হেলমেট ছাড়া কারও কাছে পেট্রোল বিক্রি না করার অনুরোধ করা হয়েছে। আমরা তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছি। হেলমেট ছাড়া কারও কাছে পেট্রোল বিক্রি করছি না।’
এদিকে ‘নো হেলমেট নো পেট্রোল’ কর্মসূচির উদ্যোক্তা রংপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান জানান, ‘আমরা কয়েকদিন ধরেই প্রচারণা চালাচ্ছি হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালাবেন না। কারণ আমরা অনুসন্ধান করে দেখেছি, হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালালে দুর্ঘটনা ঘটলেই চালক মারা যায়। দুর্ঘটনা রোধ করতে আমরা সচেতন করার চেষ্টা করছি বেশ কয়েকদিন ধরে। ইতোমধ্যে আমরা পেট্রোল পাম্প মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের অনুরোধ করা হয়েছে হেলমেট ছাড়া পেট্রোল বিক্রি করা যাবে না। রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত সফল হবো না আমাদের অভিযান চলবে।’
আরও পড়ুন- নাটোরে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত: লেগুনার গতিকে দায়ী করে প্রতিবেদন