হবিগঞ্জের চাকলাপুঞ্জি চা বাগানে ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ধসে গেছে অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি। সেতু ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঘরবাড়ি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন চা বাগানের শ্রমিকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার চাকলাপুঞ্জি চা বাগানের চন্ডিছড়া এলাকা থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা জিতু মিয়ার নেতৃত্বে ভূমিখেকোরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। এতে বাগানের অর্ধশতাধিক শ্রমিকের ঘর ধসে পড়েছে। বিলীন হয়ে গেছে বাগানের পাশ দিয়ে বয়ে চলা পাহাড়ি ছড়ার গর্ভে। এর পাশাপাশি রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে পড়ায় শ্রমিকদের যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। অবশিষ্ট ঘরবাড়ি যে কোনও সময় ধসে পড়ার আশঙ্কায় শ্রমিকরা জীবনযাপন করছেন।বাগানের ৭০ বছরের বৃদ্ধা লক্ষ্মী রাজবংশী জানান, বাগানের ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে এখন তারা মানবেতরভাবে জীবন যাপন করছে। সেতু ভেঙে যাওয়ার কারণে তারা ব্যাসের সাঁকোতৈরী করে যাতায়াত করছেন।
একই বাগানের রাজলক্ষী জানান, বাগানের ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করে তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, ‘বাড়িঘর ধ্বংস হলে আমরা ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কোথায় যাব?’
বাগান পঞ্চায়ের সভাপতি বাবু লাল সাওতাল বলেছেন, ‘একমাত্র বালু উত্তোলনের কারণেই চা শ্রমিকদের অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘর ভেঙে পড়েছে। অবশিষ্ট ঘরগুলোও ভেঙে পড়ার আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে। আমরা সরকারের কাছে এর প্রতিকার চাই।’
স্বপন ভৌমিক নামের একজন চা শ্রমিক বলেছেন, ‘আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে দুইজন নারী বালুর নিচে চাপা পড়ে মারা গেছে। প্রশাসনের লোক শুধু দেখে গেছে কিন্তু কোনও কাজ করতে পারেনি।
চা শ্রমিক বাসন্তী ঘোষের অভিযোগ, ‘বালু উত্তোলন করে নেতারা টাকা কামাচ্ছে আর আমরা গরিব শ্রমিকরা ধ্বংস হচ্ছি। আমরা এর প্রতিকার চাই। বালু উত্তোলন বন্ধ করতে না পারলে শ্রমিকরা ধ্বংস হয়ে যাবে।’
একই বাগানের শ্রমিক গোপাল শুক্ল বৈদ্য জানিয়েছেন, ‘বাগান থেকে বালু উত্তোলন করার কারণে আমাদের চলাচলের অসুবিধা হয়, বাজারঘাটে যেতে পারছি না। অনেকটা মানবেতনর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আমরা ধ্বংস হয়ে যাব।’
এ ব্যাপারে বাগানের ম্যানেজার শুভঙ্কর চন্দ্র নাগের ভাষ্য, ক্ষতিগ্রস্ত চা শ্রমিক পরিবারগুলোকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে ধ্বংস হয়ে যাবে চা শ্রমিকদের পরিবার। ইতিমধ্যে কিছু শ্রমিককে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অন্যান্যদেরকে সরিয়ে নেওয়ার পক্রিয়া চলছে।’ তিনিও মনে করেন, শীঘ্রই বালু উত্তোলন বন্ধ না করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুল জাহিদ পাবেল জানিয়েছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে চন্ডিছাড়া লিজ দেওয়া হচ্ছে না। তবে যদি কোন ব্যক্তি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’