X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

অব্যাহতির জেরে ছাত্রদল নেতাদের বিএনপি কার্যালয়ে হামলা!

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০২:০৬আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:৩৩

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে ছাত্রদলের হামলা




দীর্ঘদিন ধরে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছিল চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদল। এ অব্স্থায় গত ১ আগস্ট নতুন কমিটি দেয় কেন্দ্রীয় সংগঠন। তবে নির্বাচনের আগে দলকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে নেওয়া কেন্দ্রীয় সংগঠনের এ উদ্যোগ কোনও কাজে আসেনি। নেতাকর্মীদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফেরার পরিবর্তে উল্টো কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলে এখন চরম বিশৃঙ্খলা অবস্থা বিরাজ করছে। নতুন কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দলীয় কার্যালয়ে হামলার পাশাপাশি নিজ দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলাও করছেন পদবঞ্চিতরা।
বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় দক্ষিণ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা চালায় জেলা ছাত্রদলের একাংশ। অভিযোগ উঠেছে, নতুন কমিটিতে স্থান না পেয়ে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরাই এ হামলা চালিয়েছেন। এ ঘটনায় সম্প্রতি কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া দুই নেতাকে দোষারোপ করছেন প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীরা। অব্যাহতি পাওয়া এ দুই নেতার বিরুদ্ধে গত শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলামের গাড়িবহরে হামলারও অভিযোগ রয়েছে।
গত ১ আগস্ট পাঁচ সদস্যের দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সংগঠন। শহীদুল আলম শহীদকে সভাপতি, ইকবাল হায়দারকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, মোহাম্মদ মহসিনকে সাধারণ সম্পাদক, কে এম আব্বাসকে সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গাজী মনিরকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। তবে এর বিরোধিতা করে আন্দোলন শুরু করেন পদবঞ্চিতরা। টাকা দিয়ে কমিটিতে স্থান পেয়েছেন— এমন অভিযোগ এনে তারা বিভিন্ন উপজেলায় কমিটি বাতিলের দাবিতে ঝাড়ু মিছিল, বিক্ষোভ মিছিল করেন।
কমিটি ঘোষণার এক মাস না যেতেই গত বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) কমিটির দুই সদস্যকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় সংগঠন। অব্যাহতি পাওয়া দুই নেতা হলেন কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ইকবাল হায়দার চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী মনির। এতে এই দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। পদবঞ্চিতদের সঙ্গে মিলে তারাও আন্দোলন শুরু করেন। অভিযোগ রয়েছে, ইকবাল হায়দার ও গাজী মনির অব্যাহতির জের ধরেই বুধবার দক্ষিণ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন, কমিটি ঘোষণার পর যারা পদ পাননি তারা কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। কমিটিতে থাকার পরও গোপনে ইকবাল হায়দার ও গাজী মনির তাদের ইন্ধন দিয়ে গেছেন। সম্প্রতি তাদের কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর তারা প্রকাশ্যে এই কমিটির বিরোধিতা শুরু করেছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইকবাল হায়দার চৌধুরী। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘কে বা কারা বিএনপি কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছেন, আমরা জানি না। ঘটনাটি যে বা যারাই করেছেন তারা নিন্দনীয় কাজ করেছেন। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’
পদবঞ্চিতদের বিরোধিতার সঙ্গে কার্যালয় ভাঙচুরের সম্পৃক্ততা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুরের সঙ্গে পদবঞ্চিতদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারেন। টাকা নিয়ে কমিটিতে পদায়ন করার কারণে পদবঞ্চিতরা ক্ষিপ্ত হয়ে হয়তো ঘটনাটি ঘটিয়ে থাকতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই।’
কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইকবাল হায়দার বলেন, ‘কোনও কারণ ছাড়াই আমাদের কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কী কারণে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তার কোনও ব্যাখ্যা কেন্দ্রীয় সংগঠন আমাদের দেয়নি।’ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কার্যালয়
ইকবাল হায়দার আরও বলেন, ‘কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে নেতারা টাকা নিয়েছেন, সেই প্রমাণও আছে। টাকার বিনিময়েই সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন মোহাম্মদ মহসিন। না হলে যিনি দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক, তিনি কীভাবে কমিটিতে স্থান পান? এসব কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তাই তারা কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।’
কেন অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে— এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি কমিটির সভাপতি শহীদুল আলম শহীদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তাদের যোগসূত্র থাকতে পারে। তবে এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না। আমি বলবো, কেন্দ্রীয় সংগঠন যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে।’
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দফতর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয়কে কেন্দ্র দু’জনকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের স্বার্থে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
তবে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের একটি সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা ছিল— যারা ২০০০ সালের পরে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন, শুধু তারাই ছাত্রদলের কমিটির জন্য পদপ্রার্থী হতে পারবেন। কিন্তু অব্যাহতি পাওয়া দুই ছাত্রদল নেতা ২০০০ সালের আগে এসএসসি পাস করেন। সার্টিফিকেট জালিয়াতির মাধ্যমে তারা এসএসসি পরীক্ষা ২০০০ সালের পরে দেখিয়ে কমিটিতে আসেন। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর কেন্দ্রীয় ছাত্রদল তাদের কমিটি থেকে অব্যহতি দিয়েছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী বলেন, ‘অব্যহতির দেওয়ার পেছনে এটিও একটি কারণ। তবে এর বাইরে আরও কিছু বিষয় ছিল। যে কারণে তাদের দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। টাকার বিনিময়ে কাউকে কমিটিতে পদায়ন করা হয়নি।’ যারা সব দিক থেকে যোগ্য ছিল তাদেরই কমিটিতে আনা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
পদবঞ্চিতদের বিষয়ে আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘ছাত্রদল দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ একটা ছাত্রসংগঠন। বড় পরিবারে মনোমালিন্য থাকবে। যারা ছাত্রদল করে তাদের সবাই সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। কিন্তু পদস্বল্পতার কারণে সবাইকে পদায়ন করা সম্ভব হয় না।’



আরও পড়ুন- তালা ভেঙে অনশন, যাওয়ার সময় ভাঙচুর

 

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা