সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে বাংলাদেশে প্রবেশে অপ্রশস্ত সড়কের কারণে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর দিনাজুপরের হিলি এলাকায় প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। যানজটের কারণে সঠিক সময়ে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো বন্দরে প্রবেশ করতে পারছে না, ফলে ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারকরা। এছাড়া সরকারের রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমও হচ্ছে বাধাগ্রস্ত। অপরদিকে অসহনীয় যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয়রা।
বন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আগে প্রতিদিন গড়ে ১২০-১৩০টি ট্রাক বিভিন্ন পণ্য নিয়ে বন্দরে প্রবেশ করতো। তবে বর্তমানে বন্দরের ভেতরে জায়গা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে পাথরের আমদানি। এখন বন্দরে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ ট্রাক আসা-যাওয়া করছে। এসব ট্রাক পাথর, পেঁয়াজ, খৈলসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আসা-যাওয়া করছে। এর ফলে সড়কে চাপ বেড়েছে।
এদিকে সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এবং সড়কটি অপ্রশস্ত হওয়ায় বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের। স্থানীয় কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানান, একই পথ বন্দরের পণ্য প্রবেশ, স্কুল-কলেজ ও হাসপাতালে যাওয়া আসার কাজে ব্যবহার হয়। এতে করে সড়কে অনেক বেশি চাপ পড়ে। দিনভর সড়কটিতে যানজট লেগেই থাকে।
স্থানীয়রা জানান, হিলি স্থলবন্দরের চারমাথা মোড়ে সবসময় যানজট লেগে থাকে। একই পথ দিয়ে পণ্যবাহী ভারতীয় ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করে। আবার একই পথ দিয়ে হিলি-দিনাজপুর, হিলি-বগুড়া, হিলি-জয়পুরহাট সড়কের বাসও চলাচল করছে। এ কারণে দিনের বেশিরভাগ সময় সড়কটি অত্যন্ত ব্যস্ত থাকে। আর যানজট যেন সড়কটির নিত্য-নৈমিত্তিক বিষয়। যানজটের কারণে সড়কটি দিয়ে যাতায়াতে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হন স্থানীয়রা। শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে পাঠাতেও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন অভিভাবকরা। এছাড়া কোনও রোগীকে এ সড়ক দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতেও পড়তে হয় ভোগান্তিতে। দ্রুত সড়কটি প্রশস্ত করে ভোগান্তি নিরসনের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর-রশীদ হারুন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘পদ্মা সেতুসহ দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে পাথরের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে ভারতীয় পাথরের বেশ চাহিদা তৈরি হয়েছে। আমদানিকারকরা পাথরের আমদানি বাড়িয়ে দেওয়ায় বন্দর দিয়ে ভারতীয় আরও বেশি সংখ্যক ট্রাক আসছে। এছাড়া দেশের মোট চাহিদার বেশিরভাগ পেঁয়াজ হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করে। এছাড়া অন্যান্য পণ্য স্বাভাবিকহারে আমদানি হওয়ায় বন্দরে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। তবে বন্দরের প্রধান সড়কটি অপ্রশস্ত হওয়া যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম।’
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আগের তুলনায় পণ্য আমদানি বেড়েছে। তবে বন্দরের পণ্য প্রবেশপথ সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে শুরু করে বন্দরের গেট পর্যন্ত সড়কটি অপ্রশস্ত। এছাড়া হিলি স্থলবন্দর এলাকায় ট্রাক রাখার কোনও টার্মিনাল নেই। এ কারণে সড়কের ওপরেই ট্রাকগুলো যেখানে সেখানে রাখা হয়। এতে করে সৃষ্ট যানজটে ভারতীয় ট্রাকগুলো সঠিকভাবে বন্দরে প্রবেশ করতে পারছে না। স্থানীয়দেরও ভোগান্তি বেড়েছে। বন্দরের প্রধান সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হলে ও অন্যান্য সড়কগুলো মেরামত করলে সমস্যার সমাধান হবে বলে জানান তিনি।’
দিনাজপুর ৬ আসনের সাংসদ শিবলী সাদিক জানান, ‘বন্দরের পণ্যপ্রবেশের ক্ষেত্রে সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে পানামা হিলি পোর্ট পর্যন্ত সড়কটি ৬ লেনে উন্নিতকরণ করতে হবে। সেই সঙ্গে হিলি থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের জন্য যতগুলো সংযোগ সড়ক রয়েছে সবগুলো সড়ক কমপক্ষে চার লেনে উন্নীতকরণের দাবি আমাদের। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের তাগাদা দেবো।’