X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা কেড়ে নিয়েছে সব, খোলা আকাশের নিচে ৬১ পরিবার

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৭:৪৮আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৭:৪৮

পদ্মার ভাঙনে সবহারা মানুষেরা খোলা আকাশের নিচে বাস করছেন একটি পরিত্যক্ত মাঠে, খোলা আকাশের নিচে চলছে দুপুরের রান্নার প্রস্তুতি। তিনজন গৃহবধূ রেহানা, মুক্তা ও রেক্সোনা এক সঙ্গে বসে রান্নার জন্য সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছেন। মাত্র ১০-১২ দিন আগেও এই তিন গৃহবধূর কেউ কাউকে চিনতেন না। তবে এখন তাদের সবার গল্প এক। শরিয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় বাড়ি হলেও পদ্মার ভাঙনে বাড়ি-ঘর ও সহায়-সম্বল হারিয়েছেন তারা। নিঃস্ব হয়ে এখন এক জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন তারা। হয়ে উঠেছেন দুঃখ ভাগের সঙ্গী।

সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) কেদারপুর ইউনিয়নের একটি খোলা মাঠে গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে। ইউনিয়নের স্থানীয় মজিদ শাহের মাজার সংলগ্ন পরিত্যক্ত মাঠে পদ্মায় নদী ভাঙনে গৃহহীন পরিবারের সদস্যরা আশ্রয় নিয়েছেন। টিন দিয়ে কোনোরকমে ছাপড়া তুলে দুই সপ্তাহ ধরে বসবাস করছেন তারা।

চলতি বছরের জুন মাস থেকে নড়িয়া এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। সম্প্রতি ভাঙনের তীব্রতা ও ভয়াবহতা বৃদ্ধি পায়। প্রমত্তা পদ্মার স্রোতের তোড়ে মুহূর্তেই নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা।  জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত তিন মাসে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে চার হাজার ৬৫০টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া চারটি বাজারের দুইশ'র বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি বেসরকারি ক্লিনিক, ৭টি মসজিদ, ১টি মন্দির, এক কিলোমিটার পাকা সড়ক, ৯টি সেতু, ১৬টি বহুতল ভবনসহ প্রায় ৮০টি পাকা বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী তীরবর্তী ৩টি বাজার সম্পূর্ণরূপে এবং ১টি বাজার আংশিক বিলীন হয়ে গেছে।

পদ্মার ভাঙনে সবহারা মানুষেরা খোলা আকাশের নিচে বাস করছেন সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেদারপুর ইউনিয়নে বর্তমানে ৬১টি পরিবার খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। গত ১০ থেকে ১২ দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করলেও প্রশাসনের কোনও সহায়তা তাদের হাতে পৌঁছেনি।

নড়িয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র মরহুম হায়দার আলীর বাড়ির আশপাশের খোলা জায়গায় ২৬টি পরিবার, মজিদ শাহের মাজার সংলগ্ন পরিত্যক্ত মাঠে ১১টি পরিবার এবং ভূঁইয়া বাড়ির আশপাশের ফাঁকা স্থানে ২৪টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

পদ্মার ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে সাধুর বাজার এলাকা থেকে মজিদ শাহের মাজার সংলগ্ন মাঠে আশ্রয় নেওয়া রোকসানা বেগম জানান, ‘১০ শতাংশ জায়গাসহ বাড়িটি নদীর পেটে চলে গেছে। এরপর গত ১০ দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে এই মাঠে অবস্থান করছি। এখন পর্যন্ত কোনও রকম সহায়তা পাইনি। মানুষের দানে পেট চলছে কোনোমতে।’

পদ্মার ভাঙনে সবহারা মানুষেরা খোলা আকাশের নিচে বাস করছেন রোকসানার স্বামী আলমাস মিয়া আগে সাধুর বাজার লঞ্চঘাট এলাকা থেকে নড়িয়া বাজার রুটে ভাড়া অটোরিকশা চালাতেন। এখন ওই সড়কটিই নদীতে চলে গেছে। আয়ের কোনও পথ না থাকায় দুই সন্তান নিয়ে খোলা আকাশের নিচে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের।

খোলা মাঠে আশ্রয় নেওয়া নসিমন চালক কাওসার বেপারির স্ত্রী মুক্তা বেগম, মৃত সুমন সরদারের স্ত্রী রেক্সোনা আক্তার, ফেরিওয়ালা উজ্জ্বল মাঝির স্ত্রী রেহানা বেগম এবং রহিমা বিবি ও সাহেরা খাতুন জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই মাঠ তলিয়ে যায়। তখন বিছানাপত্র হাতে করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ভোগান্তির শেষ থাকে না। এখন পর্যন্ত কোনও সহায়তা তারা পাননি।

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াছমিন জানান, ‘আমরা এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৫শ’ পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। স্থানীয় কাউন্সিলর ও মেম্বারদের সহযোগিতায় তালিকা করে এ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। খোলা জায়গায় অস্থায়ীভাবে যারা রয়েছেন তারাও তালিকায় রয়েছেন। হয়তো কেউ পেয়েছেন, কেউ পাননি। তবে পর্যায়ক্রমে সবাই পাবেন।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, ‘ভাঙন কবলিত কোনও পরিবার খোলা আকাশের নিচে রয়েছে এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই। এখন যেহেতু জানতে পেরেছি,  আমরা তাদের তালিকা করে দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবো।’

 

/টিটি/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা