X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভেষজের কারিগর ডালেশ্বর গ্রাম

রায়হানুল ইসলাম আকন্দ, গাজীপুর
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:২০আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২০:৩৮

খলায় শুকানো হচ্ছে ভেষজ গাছ, পাতা গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর বাজার পেরিয়ে এক কিলোমিটার ভেতরে ঢুকলে ডালেশ্বর গ্রাম। গ্রামে প্রবেশের পরই চোখে পড়বে খলা (উন্মুক্ত জায়গা)। এর পাশে নারী-পুরুষ একসঙ্গে বসে কাটছে ভেষজ উদ্ভিদ। এরপর সেগুলো রোদে শুকাতে দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ ঘণ্টা পরপর রোদে শুকাতে সেগুলো উল্টে-পাল্টে দিচ্ছেন।

ডালেশ্বর গ্রামে বাসিন্দারা ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ করছে। ভাওয়াল বনের ভেতর থেকে তারা বনজ লতা-পাতা, গুল্ম সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করেন। পরে সেগুলো দেশের নামকরা বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিতে সরবরাহ করেন। এ গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের জীবিকা নির্ভর করে বনজ তথা ভেষজ উদ্ভিদ প্রক্রিয়াকরণের ওপর।

দুপুরের পর থেকে খলার দৃশ্যপট পাল্টে যায়। লতা-গুল্ম নিয়ে খলায় ঢুকছে রিকশা ভ্যান। এ গ্রামের বিভিন্ন খলার চিত্রগুলো ঠিক একই রকম। কোনও কোনও খলা নিরাপত্তার জন্য প্রাচীরঘেরা।

খলায় শুকানো হচ্ছে ভেষজ গাছ, পাতা ডালেশ্বর গ্রামের আব্দুল কাদির মিয়ার (৭০) বাবা ৬০ বছর আগে এ কাজ শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘৬০ বছর আগে আমার বাবা ওয়াহেদ আলী মিয়া এ এলাকায় সর্বপ্রথম ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহের কাজটি শুরু করেন। তখন ভাওয়ালের বন অনেক গভীর ছিল। তখন নানা প্রজাতির লতাপাতা, গাছপালার অভাবই ছিল না। বাবার সঙ্গে ভেষজ সংগ্রহের কাজ করতে গিয়ে নিজেই এ কাজে জড়িয়ে পড়ি। ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহ আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য। আমার ছেলেও একাজের সঙ্গে যুক্ত।’

কাদির মিয়ার প্রতিবেশী আব্দুল মান্নান বলেন, কমপক্ষে ৪০ বছর আগে ওয়াহেদ আলী মিয়ার দেখাদেখি তার বাবাও এ পেশায় যুক্ত হন। ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহ করে এখন জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। দিনে দিনে ভেষজ সংগ্রহের কাজটি ছড়িয়ে পড়ে পুরো গ্রামে। তার মতো অনেকেই যুক্ত হন ভেষজ সংগ্রহের কাজে। প্রত্যেকেই পরিবারের সব সদস্যদের এ কাজে নিয়োজিত করেন।

খলায় কাজ করছেন শ্রমিকরা ভেষজ ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান বলেন, ‘পৈত্রিক সূত্রে এ কাজে যুক্ত হয়েছি। গাজীপুরের ভাওয়াল বনাঞ্চল ছাড়াও ময়মনসিংহ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল জেলার বনাঞ্চল থেকে ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহ করা হয়। যারা বন থেকে এগুলো সংগ্রহ করেন তাদেরকে অগ্রিম টাকা দেওয়া হয়। পরে সেগুলো সংগ্রহ করে খলায় জমা করেন। ওজন ও পরিমাপ করে কম হলে টাকা ফেরত পাই। আর বেশি হলে আরও টাকা দেই।’

ডালেশ্বর গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের শতাধিক মানুষ ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহের কাজ করেন। প্রায় প্রতিদিন বন থেকে তারা এসব সংগ্রহ করেন।

দরগাহচালা গ্রামের আজম আলী বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে ভ্যানগাড়ি নিয়ে বিভিন্ন বনে, রাস্তার পাশে, বিল, পুকুর, নদীর পাড় থেকে লতপাতাগুলো সংগ্রহ করি। সারাদিনে  সর্বোচ্চ দুটি ভ্যানগাড়ি ভর্তি করা য়ায়। পরে এগুলো ব্যবসায়ীদের খলায় নিয়ে মণ হিসেবে বিক্রি করি।’

খলায় নিয়ে আসা হয়েছে ভেষজ গাছ, লতাপাতা একই গ্রামের আব্দুস শহীদ বলেন, ‘যে উদ্ভিদ বেশি পাওয়া যায় তার দাম তুলনামূলক কম। যেটি দূর দূরান্ত থেকে সংগ্রহ করা হয় তার দাম একটু বেশি। যেমন নিমপাতা, বেলপাতা, শিশু পাতা ৫০০ টাকা মণ দরে ব্যবসায়ীদের সরবরাহ করি। আমলকি, বহেরা দুই বা আড়াই হাজার টাকা মণ, হরিতকি, নিশিন্দা, কালো মেঘ, অর্জুন ছাল, এরকম ভেষজ জিনিসগুলোর দাম একটু বেশি। ৪-৫ হাজার টাকা মণ দরে এগুলো সরবরাহ করে থাকি।’

ডালেশ্বর গ্রামের ভেষজ খলার মালিক রাশিদা বলেন, তার খলায় লতাপাতা প্রক্রিয়াকরণে ২০ জন লোক কাজ করে। কেউ কাটাকুটি, কেউ শুকানো, কেউ আবার বস্তাভর্তি করাসহ নানা প্রক্রিয়ার কাজে নিয়োজিত। তাদের মজুরি দেওয়া হয় মণ হিসেবে। সংগৃহীত একেক ভেষজের জন্য একেক হিসেবে মজুরি দেওয়া হয়।

আরেক খলার মালিক মনির হোসেন বলেন, খলায় ভেষজ শুকাতে গেলে নানা সমস্যা হয়। মানুষ, গরু, ছাগল খলায় ঢুকে ভেষজ উপাদান নষ্ট করে ফেলে। খলার মেঝে পাকা থাকলে প্রক্রিয়াকরণ সহজ ও সময় কম লাগে।

 

/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী